
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্ববিখ্যাত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট শুধু ব্যবসার জগতে সফল নন, তিনি তার সন্তানদের এবং তরুণদের আর্থিক শিক্ষার গুরুত্বও শিখিয়েছেন। তিনি মনে করেন, অর্থনৈতিক জ্ঞান ছোটবেলা থেকেই শেখানো উচিত, যা ভবিষ্যতে আর্থিক সাফল্যের পথ প্রশস্ত করে।
২০১১ সালে, বাফেট শিশুদের আর্থিক শিক্ষা ও ব্যবসার ধারণা শেখাতে "সিক্রেট মিলিয়নেয়ারস ক্লাব" নামে একটি অ্যানিমেটেড সিরিজ চালু করেন। ২৬ পর্বের এই সিরিজে কিছু উদ্যোমী শিশুরা বাস্তব জীবনের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান খুঁজতে বাফেটের কাছে পরামর্শ নিত।
২০১৩ সালে ইয়াহু ফাইন্যান্স-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাফেট বলেন, "শিশুদের অর্থের ব্যাপারে বোঝানো কখনোই খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায় না।"
সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, "আমার বাবা আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন। আমি ছোটবেলাতেই সঠিক অর্থনৈতিক অভ্যাস গড়ে তুলতে শিখেছিলাম।"
চলুন, দেখে নেওয়া যাক ওয়ারেন বাফেটের সেই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক শিক্ষা, যা আপনি আপনার সন্তানদের শেখাতে পারেন—
১. ছোটবেলা থেকেই অর্থের পাঠ শুরু করা
বাফেট মনে করেন, অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের কিশোর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করেন অর্থব্যবস্থাপনার শিক্ষা দিতে। কিন্তু ছোটবেলাতেই টাকা সঞ্চয়, ব্যয়ের পরিকল্পনা, এবং উপার্জনের ধারণা শেখানো হলে তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা মাত্র ৭ বছর বয়সেই অর্থনৈতিক অভ্যাস গড়ে তোলে। তাই এই বয়স থেকেই তাদের সঞ্চয় ও ব্যয়ের গুরুত্ব শেখানো দরকার।
২. অল্প হলেও সঞ্চয় করা অভ্যাস করুন
বাফেট বলেন, "নিয়মিত অল্প পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করলেও তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে।"
তিনি শিশুদের বোঝাতে উদাহরণ দেন—যদি প্রতিদিন একটি কোমল পানীয় না কিনে সেই টাকা সঞ্চয় করা যায়, তাহলে তা সুদে-আসলে বাড়বে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় অঙ্কে পরিণত হবে।
সন্তানদের জন্য একটি সঞ্চয় বাক্স বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া যেতে পারে, যেখানে তারা টাকা জমিয়ে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবে।
৩. প্রয়োজন ও বিলাসিতার মধ্যে পার্থক্য শেখানো
বাচ্চাদের অর্থব্যবস্থাপনা শেখাতে, তাদেরকে চাহিদা ও বিলাসিতার মধ্যে পার্থক্য করতে শেখানো জরুরি।
বাফেট পরামর্শ দেন, শিশুরা যদি তাদের কেনাকাটার একটি তালিকা তৈরি করে, তাহলে বাবা-মা তাদের সঙ্গে বসে প্রতিটি আইটেম প্রয়োজনীয় নাকি অতিরিক্ত বিলাসিতা, তা বুঝিয়ে বলতে পারেন।
৪. দক্ষতা অর্জনই প্রকৃত বিনিয়োগ
বাফেট মনে করেন, "সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ হলো নিজের দক্ষতার উন্নয়ন।"
তিনি প্রতিদিন প্রচুর পড়াশোনা করেন এবং সবাইকে নতুন কিছু শেখার প্রতি আগ্রহী হতে বলেন। কারণ জ্ঞান এবং দক্ষতা বাড়লে ভবিষ্যতে আরও বেশি আয় করা সম্ভব।
শিশুদের বিভিন্ন দক্ষতা শেখার জন্য বই পড়া, নতুন কিছু শেখা, বা অনলাইন কোর্স করার অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা উচিত।
৫. ব্যবসায়িক মানসিকতা গড়ে তোলা
বাফেট মাত্র ৬ বছর বয়সে চুইংগাম ও কোকা-কোলা বিক্রি করে প্রথম ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তিনি মনে করেন, ছোটবেলাতেই উদ্যোক্তা হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে তা ভবিষ্যতে কাজে আসবে।
বাচ্চারা লেমোনেড স্টল দেওয়া, অনলাইন পণ্য বিক্রি, বা ছোটখাটো ব্যবসার পরিকল্পনা করতে পারে। বাবা-মায়েরা তাদের এই উদ্যোগে উৎসাহ ও প্রয়োজনীয় গাইডলাইন দিলে তারা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।
অর্থনৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব
ওয়ারেন বাফেটের মতে, "সঠিক সময়ে অর্থনৈতিক শিক্ষা দিলে শিশুরা ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।"
"সিক্রেট মিলিয়নেয়ারস ক্লাব" শুধু একটি অ্যানিমেটেড সিরিজ নয়, বরং এটি শিশুদের জন্য বাস্তব জীবনের অর্থনৈতিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
ছোটবেলা থেকেই যদি শিশুদের অর্থব্যবস্থাপনা, সঞ্চয়ের অভ্যাস এবং ব্যবসায়িক মানসিকতা শেখানো হয়, তাহলে তারা ভবিষ্যতে আরও আত্মনির্ভরশীল ও সফল হতে পারবে।
রিফাত