ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

আপনার অভিভাবক সত্যিই অসাধারণ, যদি আপনি তিনটি শিক্ষা পেয়ে থাকেন!

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৯ মার্চ ২০২৫

আপনার অভিভাবক সত্যিই অসাধারণ, যদি আপনি তিনটি শিক্ষা পেয়ে থাকেন!

ছবিঃ সংগৃহীত

প্রত্যেক বাবা-মায়েরই প্রধান লক্ষ্য থাকে তাঁদের সন্তানদের সুখী ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু প্রকৃত সুখ আসলে কীভাবে অর্জন করা যায়? সাম্প্রতিক গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী সুখ কেবলমাত্র বাহ্যিক সাফল্য বা বস্তুগত অর্জনের ওপর নির্ভর করে না। বরং এটি নির্ভর করে কিছু নির্দিষ্ট জীবনদর্শন ও মূল্যবোধের ওপর। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আপনার বাবা-মা আপনাকে এই তিনটি পুরনো দিনের শিক্ষা দিয়ে বড় করে থাকেন, তবে তাঁরা নিঃসন্দেহে একজন সফল অভিভাবক।

১. স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি ভাবনায় উন্নীত হওয়া

অনেক বাবা-মা মনে করেন, সন্তানদের সুখী রাখতে ভালো খেলনা, দামি পোশাক কিংবা প্রযুক্তিপণ্য দেওয়াই যথেষ্ট। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বস্তুগত সুখ খুবই সাময়িক। নতুন গেমিং সিস্টেম, গাড়ি বা স্মার্টফোন কেনার আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হয় না, কারণ আমাদের মস্তিষ্কের ডোপামিন ক্ষরণের ফলে তা দ্রুত ফিকে হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ রবার্ট জেটলিন বলেন, "সুখ আসলে কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য নয়, বরং এটি একটি চলমান পথ। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য অর্জন থেকে পাওয়া আনন্দ ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি চরিত্র গঠনের মাধ্যমে অর্জিত তৃপ্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়।"

তাই প্রকৃত সুখের জন্য অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের সাময়িক আনন্দের চেয়ে ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গঠনে উৎসাহিত করা।

২. নৈতিক গুণাবলী ও চরিত্রের শক্তি বিকাশ করা

বিগত দুই দশক ধরে ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা ২৪টি চরিত্রগত শক্তি চিহ্নিত করেছেন, যা বিশ্বের প্রায় সব সংস্কৃতিতেই সমাদৃত। এর মধ্যে রয়েছে কৌতূহল, সৃজনশীলতা, উদারতা, ন্যায়পরায়ণতা, ধৈর্য, হাস্যরস ইত্যাদি। এসব গুণ অর্জন করলে মানুষ দীর্ঘস্থায়ী সুখ অনুভব করে।

একজন ব্যক্তি যদি শেখার প্রতি গভীর ভালোবাসা অনুভব করেন এবং নতুন কিছু জানার সুযোগ পান, তাহলে সেটি তাঁকে শুধু আনন্দই দেয় না, বরং তাঁর চারিত্রিক শক্তিকেও বাড়িয়ে তোলে। তাই অভিভাবকদের উচিত তাঁদের সন্তানের স্বাভাবিক আগ্রহ ও শক্তি চিহ্নিত করা এবং সেগুলোকে বিকশিত করতে সাহায্য করা।

৩. আবিষ্কার ও অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করা

সন্তানের আগ্রহ বোঝার জন্য অভিভাবকদের ধৈর্য ধরে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। ধরা যাক, কোনো শিশু মাইনক্রাফট গেম খেলতে ভালোবাসে। এটি কেবল একটি গেমই নয়, বরং এতে সৃজনশীলতা, দলগত নেতৃত্ব এবং সমস্যার সমাধানের দক্ষতা তৈরি হয়।

বাবা-মা যদি সন্তানের এই আগ্রহকে শুধুমাত্র একটি গেম খেলার শখ হিসেবে না দেখে, বরং সৃজনশীলতা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে দেখেন, তাহলে তারা সন্তানকে আরও কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী সুখের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।

সুখী সন্তান গড়ে তুলতে অভিভাবকদের করণীয়

শুধু সন্তানের সুখ নিয়েই ভাবলেই চলবে না, বাবা-মায়েরও নিজেদের চরিত্রের শক্তি ও মানসিক প্রশান্তির দিকে নজর দেওয়া জরুরি। সন্তানেরা মূলত বড়দের অনুসরণ করেই জীবনধারা গড়ে তোলে। তাই অভিভাবকরা যদি দেখান যে প্রকৃত আনন্দ আসে কৌতূহল, ন্যায়পরায়ণতা এবং সৃজনশীলতা থেকে—তাহলে সন্তানেরাও সেই পথেই চলবে।

রবার্ট জেটলিন বলেন, "যদি অভিভাবকেরা নিজেদের সুখের পথ খুঁজে নিতে পারেন, তাহলে সেটিই সন্তানদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ সুখ কোনো গন্তব্য নয়, এটি একসঙ্গে চলার একটি পথ।"

একজন সন্তানের ভবিষ্যৎ শুধু তাঁর পড়াশোনা বা পেশাগত সাফল্যের ওপর নির্ভর করে না, বরং তাঁর চারিত্রিক গুণাবলী, আত্ম-উন্নয়ন এবং আবিষ্কারের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। তাই অভিভাবকদের উচিত তাঁদের সন্তানদের স্বল্পমেয়াদি আনন্দের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সুখের দিকে পরিচালিত করা। সেই পথেই গড়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসী ও সফল এক নতুন প্রজন্ম।

রিফাত

×