ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

সফল হতে চান? আগে এই ৭টি আত্ম-বিধ্বংসী অভ্যাস ত্যাগ করুন

প্রকাশিত: ০০:০৭, ৯ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০০:০৯, ৯ মার্চ ২০২৫

সফল হতে চান? আগে এই ৭টি আত্ম-বিধ্বংসী অভ্যাস ত্যাগ করুন

ছবিঃ সংগ্রহীত

অনেকেই লক্ষ্য নির্ধারণ, প্রোডাক্টিভিটি হ্যাক এবং মোটিভেশনাল উক্তি নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, বেশিরভাগ মানুষ তাদের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন না। কিছু গবেষণা অনুযায়ী, মাত্র ১০% লোক তাদের নতুন বছরের সংকল্প ধরে রাখতে সক্ষম হন।

আমাদের চাওয়া ও প্রাপ্তির মধ্যকার এই ফারাকের পেছনে রয়েছে কিছু আত্ম-বিধ্বংসী অভ্যাস—যেগুলো আমাদের মন্থর করে দেয়, অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

আমরা সবাই খারাপ দিনের মধ্য দিয়ে যাই, কিন্তু যদি আপনি নিয়মিত নিম্নলিখিত অভ্যাসগুলোর মধ্যে পড়েন, তবে বুঝতে হবে, আপনি নিজের সফলতার পথে নিজেই বাধা সৃষ্টি করছেন।

চলুন, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক—যাতে আপনি এগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে এড়িয়ে চলতে পারেন।

০১. সকালের রুটিনকে অবহেলা করা

আমি আগে ভাবতাম, সকালের রুটিন নিয়ে এত মাতামাতির কিছু নেই। মনে হতো, "ভোরবেলা ধ্যান করব? সেটা তো কখনোই হবে না!"

কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, অগোছালোভাবে বিছানা থেকে উঠে সরাসরি ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ বুলানো শুধু মুডই নষ্ট করে না, বরং পুরো দিনের প্রোডাক্টিভিটিকে ধ্বংস করে দেয়।

অনেক সফল মানুষ সকালে শরীরচর্চা করেন, ধ্যান করেন বা দিনের পরিকল্পনা করেন—এটা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। গবেষক ক্রিস্টোফ র্যান্ডলারের মতে, "সকালে যারা কার্যকরী, তারাই জীবনে এগিয়ে থাকে, তারা ভালো পড়াশোনা করে, ভালো কলেজে যায় এবং পরে ভালো ক্যারিয়ারের সুযোগ পায়।"

সত্যিকারের সমস্যা হলো, যদি আপনি সকালে নিজের জন্য একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি না করেন, তবে সারা দিন আপনি শুধু ‘ধাওয়া’ করেই কাটাবেন।

০২. তাত্ক্ষণিক আনন্দের পেছনে ছোটা

আমরা এখন এক "তাৎক্ষণিক তৃপ্তির" যুগে বাস করছি—এক ক্লিকেই সবকিছু পাওয়া যায়। কিন্তু এই সহজলভ্যতা কখনো কখনো আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করে।

আপনি কি কখনো সোশ্যাল মিডিয়ার ডোপামিন রাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ ফেলে রেখেছেন? বা অপ্রয়োজনীয় খরচ করে ভবিষ্যতের সঞ্চয় কমিয়ে ফেলেছেন?

স্ট্যানফোর্ডের বিখ্যাত মার্শম্যালো টেস্ট বলছে, যারা তাৎক্ষণিক আনন্দ দেরিতে গ্রহণ করতে পারে, তারা ভবিষ্যতে বেশি সফল হয়। তাই যদি আমরা ছোটখাটো মজার পেছনে দৌড়াই, তাহলে বড় অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতাই তৈরি করতে পারব না।

০৩. পরিকল্পনা না করে শুধু স্বপ্ন দেখা

অনেকেই বলে, "আমি ব্যবসা শুরু করতে চাই" বা "আমি ফিট হতে চাই," কিন্তু কখনোই তারা কার্যকরী পরিকল্পনা তৈরি করে না।

এটি আত্ম-বিধ্বংসী অভ্যাসের অন্যতম কারণ, কারণ কোনো কিছুকে যদি নির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা না করা হয়, তবে এর অগ্রগতি পরিমাপ করাও সম্ভব নয়।

পিটার এফ. ড্রাকার বলেছেন, "সময় সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য সম্পদ, এবং এটি যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপিত না হয়, তবে কিছুই নিয়ন্ত্রিত হবে না।"

০৪. কঠিন কাজটিকে সর্বশেষে ফেলা

অনেকেই কঠিন কাজগুলো এড়িয়ে যায় এবং পরে করার জন্য ফেলে রাখে। কিন্তু যত দেরি হয়, ততই তা আরো জটিল ও ভীতিকর হয়ে ওঠে।

লরা ভ্যান্ডারক্যামের মতে, "ইচ্ছাশক্তি একটি পেশির মতো, যা অতিরিক্ত ব্যবহারে ক্লান্ত হয়ে যায়।"

সুতরাং, কঠিন কাজগুলো দিনের শুরুতে করে ফেলুন, যখন আপনার শক্তি ও মনোযোগ সবচেয়ে তাজা থাকে। এতে দ্রুত কাজ শেষ করা যায় এবং দিনের বাকি সময়টাও ভালো কাটে।

০৫. ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা না নেওয়া

আমরা প্রায়ই ব্যর্থতাকে লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখি এবং এড়িয়ে যেতে চাই। কিন্তু এটি আসলে সবচেয়ে বড় আত্ম-বিধ্বংসী অভ্যাস।

সফল মানুষদের সাফল্যের পেছনে থাকে প্রচুর ভুলের সমষ্টি, যেগুলো থেকে তারা শিক্ষা নিয়েছে। তাই ভুল থেকে পালানোর পরিবর্তে সেটাকে শেখার সুযোগ হিসেবে নিন।

০৬. নেতিবাচক মানুষ ঘিরে রাখা ও কৃতজ্ঞতা চর্চা না করা

"পজিটিভ থিংকিং" কথাটা শুনতে ক্লিশে লাগতে পারে, কিন্তু নেতিবাচক মানুষদের সঙ্গে থাকলে আপনার নিজের মানসিকতা ও লক্ষ্য নষ্ট হতে পারে। অন্যদিকে, কৃতজ্ঞতা চর্চা করলে মনোভাব ইতিবাচক হয়।

০৭. অনুপ্রেরণার জন্য অপেক্ষা করা, স্থায়ী অভ্যাস তৈরি না করা

অনেকেই ভাবেন, "আমি মুডে থাকলে কাজ করব" বা "যখন ঠিক সময় আসবে, তখন শুরু করব।"

কিন্তু সত্যটা হলো, সঠিক সময় বলে কিছু নেই। আপনি যদি পাঁচ বছর পরেও শুরু না করেন, তবে বুঝতে হবে, এটি কেবলই বিলম্বিত আত্ম-বিধ্বংসী অভ্যাস। সফল হওয়ার মূল চাবিকাঠি হলো ধারাবাহিকতা। প্রতিদিন একটু একটু করে এগোনোই আসল বিষয়।

শেষ কথা

আত্ম-বিধ্বংসী অভ্যাস আমাদের সচেতনভাবে থামিয়ে দেয় না, বরং এটি ধীরে ধীরে আমাদের লক্ষ্য থেকে সরিয়ে দেয়।

কিন্তু ভালো খবর হলো—এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা সম্ভব। আপনি যদি একটু আগে ঘুম থেকে ওঠেন, দিনের পরিকল্পনা করেন, কঠিন কাজগুলো শুরুতেই করে ফেলেন এবং কৃতজ্ঞতা চর্চা করেন, তবে আপনি সফলতার পথে এগিয়ে যেতে পারবেন।

এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা সহজ নয়, তবে আপনি যদি এখনই সচেতন হন, তবে নিজের নিয়ন্ত্রণ নিজেই নিতে পারবেন।

সূত্রঃ https://smallbiztechnology.com/archive/2025/03/mal-7-self-sabotaging-habits-of-people-who-never-achieve-their-goals.html/

ইমরান

×