
ছবিঃ সংগৃহীত
আমাদের জীবনে এমন কিছু দিন আসে, যখন আনন্দ যেন হাতছাড়া হয়ে যায়। এমনকি এক কাপ কফিও সঠিক স্বাদ দেয় না।
কিন্তু জানেন কি? আনন্দ শুধু একটি অনুভূতি নয়, এটি আমাদের গড়ে তোলার একটি মানসিক অবস্থা। গবেষকরা বছরের পর বছর ধরে এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন এবং সুখী থাকার কিছু কার্যকর উপায় আবিষ্কার করেছেন।
এই প্রতিবেদনে, আমরা এমন কিছু সহজ কিন্তু প্রভাবশালী কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে আরও আনন্দ আনতে সাহায্য করবে।
এখন যদি মনে হয় যে দৈনন্দিন চাপ ও দুশ্চিন্তার কারণে আপনি সুখ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। আমরা সবাই একই সমস্যার মুখোমুখি হই।
তবে এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি বুঝতে পারবেন, সুখ এক মুহূর্তের ব্যাপার নয়, এটি আমাদের ভেতরেই লুকিয়ে আছে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে আরও আনন্দ আনতে পারি।
১) মনোযোগী থাকা (মাইন্ডফুলনেস) চর্চা করুন
মাইন্ডফুলনেস শব্দটি নিশ্চয়ই শুনেছেন? এটি মূলত বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দেওয়ার অভ্যাস। অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে ‘এই মুহূর্তে’ বাঁচার নামই মাইন্ডফুলনেস। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি আনন্দও বাড়ায়।
যেমন ধরুন, সূর্যের উষ্ণতা অনুভব করা, এক কাপ কফির স্বাদ উপভোগ করা বা প্রিয়জনের হাসি শোনা—এসব ছোট ছোট মুহূর্তই আনন্দের ভিত্তি গড়ে তোলে। তাই যখনই উদ্বিগ্ন বা বিভ্রান্ত বোধ করবেন, তখনই গভীর শ্বাস নিন এবং বর্তমান মুহূর্তে ফিরে আসুন। এতে আপনার দিন আরও আনন্দময় হয়ে উঠবে।
২) কৃতজ্ঞতা চর্চা করুন
আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞতা চর্চাকে জীবনের একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে পেয়েছি।
একসময় মনে হতো, জীবন শুধু কঠিন বাস্তবতায় পূর্ণ। তখন একজন বন্ধু আমাকে ‘গ্র্যাটিটিউড জার্নাল’ বা কৃতজ্ঞতার ডায়েরি লেখার পরামর্শ দিয়েছিল। প্রথমে এটি হাস্যকর মনে হলেও পরে এর প্রভাব বুঝতে পারি।
প্রতিদিন তিনটি জিনিস লিখতাম, যার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। হতে পারে তা বৃষ্টির সুন্দর গন্ধ, শীতের সকালে এক কাপ গরম চা, বা বন্ধুর একটি আন্তরিক মেসেজ। কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম, নেতিবাচক চিন্তার পরিবর্তে ইতিবাচক দিকগুলো দেখতে শুরু করেছি। আপনিও যদি সুখী হতে চান, তাহলে প্রতিদিন ছোট ছোট ভালো বিষয়গুলোর জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন।
৩) অসম্পূর্ণতাকে গ্রহণ করুন
জীবন কোনো সোশ্যাল মিডিয়ার নিখুঁত ছবি নয়। এটি এলোমেলো, বিশৃঙ্খল, এবং অপ্রত্যাশিত।
অনেকে মনে করেন, সব কিছু পারফেক্ট হলে তবেই সুখ আসবে। কিন্তু বাস্তবে পরিপূর্ণতার পিছনে দৌড়ানো মানেই শুধু স্ট্রেস বাড়ানো। আমি যখন নিজেকে নিখুঁত হতে বাধ্য করা বন্ধ করলাম, তখন সত্যিকারের আনন্দ অনুভব করলাম।
এমনকি যদি আপনার জীবন কখনো এলোমেলো মনে হয়, তাও চিন্তা করবেন না। প্রতিটি ভুল, অসম্পূর্ণতা এবং খুঁত আপনাকে অনন্য করে তোলে। তাই নিজেকে নিখুঁত হতে বাধ্য করবেন না—আপনি যেমন আছেন, সেটাই যথেষ্ট।
৪) অর্থবহ সম্পর্ক গড়ে তুলুন
একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে গভীর আলাপচারিতার পর কি কখনো মনটা হালকা লেগেছে?
গবেষণা বলছে, যারা অর্থবহ সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখে, তারা সাধারণত বেশি সুখী এবং সুস্থ থাকে। তবে শুধু প্রচুর বন্ধু থাকা যথেষ্ট নয়, বরং সম্পর্কের মান গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তোলাই বেশি মূল্যবান।
আজই প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানোর পরিকল্পনা করুন বা অন্তত একটি আন্তরিক মেসেজ পাঠান। এটাই আপনাকে আরও সুখী করে তুলতে পারে।
৫) শরীরকে সক্রিয় রাখুন
শুনেছেন কি ‘রানারস হাই’ সম্পর্কে? এটি কোনো মিথ নয়। ব্যায়াম করলে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের ভালো অনুভূতি দেয়।
শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যও ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি মাত্র ১২ মিনিট হাঁটলেই ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি পেতে পারে! তাই মন খারাপ লাগলে হালকা ব্যায়াম করুন বা বাইরে হাঁটতে বের হন—এতে মন ভালো হয়ে যাবে।
৬) নিজেকে ভালোবাসুন ও সহানুভূতিশীল হোন
আমরা অনেক সময় নিজেদের কঠোর সমালোচনা করি। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন, অন্য কাউকে কি এভাবে বিচার করতেন?
সম্ভবত না। তাহলে নিজেকেও দয়া ও সহানুভূতির সাথে দেখুন। নিজেকে ভুল করতে দিন, খারাপ দিন কাটাতে দিন, এবং নিজেকে দোষারোপ না করে নিজের প্রতি সদয় হোন। যখনই নিজের প্রতি কঠোর হয়ে যাবেন, ভাবুন, একজন প্রিয় বন্ধুকে আপনি কীভাবে সান্ত্বনা দিতেন? নিজেকেও সেই ভালোবাসা দিন—আপনি সেটার যোগ্য।
৭) ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলুন
আমাদের চিন্তাভাবনাই আমাদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে। যদি সব সময় নেতিবাচক চিন্তা করি, তাহলে আমাদের জীবনেও নেতিবাচকতা ভর করবে।
তবে যদি কঠিন সময়েও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখি, তাহলে আমরা সুখী হতে পারব। এর মানে এই নয় যে সমস্যাগুলোকে অস্বীকার করতে হবে, বরং সমস্যা মেনে নিয়েও জীবনের ভালো দিকগুলোতে ফোকাস করতে হবে। যত বেশি ইতিবাচক চিন্তা করবেন, তত বেশি সুখ অনুভব করবেন।
শেষ কথা
আমরা আজ আনন্দের বিজ্ঞান এবং সুখী থাকার কিছু কার্যকর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে মনে রাখবেন, এটি কোনো ম্যাজিক নয়—বরং প্রতিদিনের অভ্যাসের ফল। যখনই জীবনে ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত পাবেন, সেগুলোকে গুরুত্ব দিন। নিজের প্রতি সদয় হোন, ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন, এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখুন। সুখ বাইরে কোথাও নেই, এটি আমাদের ভেতরেই আছে—শুধু সেটাকে খুঁজে নেওয়ার অপেক্ষা। তাহলে আর দেরি কেন? আজ থেকেই আনন্দের বিজ্ঞানকে নিজের জীবনে কাজে লাগান!
সূত্রঃ https://hackspirit.com/mal-the-science-of-joy-expert-backed-tips-to-add-more-happiness-to-your-days/
ইমরান