
অন্যান্য যেকোনো প্রজন্মের চেয়ে ১৮-২৪ বছর বয়সীরা বেশি স্বীকার করছে যে তারা ‘সেভারেন্স’ (Severance) পরিস্থিতিতে থাকতে আগ্রহী,যেখানে কাজের সময়ের কোনো স্মৃতিই থাকবে না। কিন্তু কেন Gen Z কাজকে এতটা ঘৃণা করে?
মাত্র ১০ শতাংশ Gen Z ফুল-টাইম অফিসে কাজ করতে চায়। তারা অফিস সময়ের বাইরে ইমেইল চেক করে না, চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে আগ্রহী নয়, এমনকি প্রায়ই ১০ মিনিট দেরি করে আসে। তারা বেশি সিক লিভ নেয়, লাঞ্চ ব্রেকে কাজ করতে চায় না এবং বরাদ্দকৃত ছুটি পুরোপুরি উপভোগ করে।
এই প্রবণতা অবাক করার মতো হলেও, এর পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ আছে। Gen Z-এর বড় অংশ এখনো আর্থিক সংকটে জর্জরিত। লন্ডনে বসবাসকারী ২৭ বছর বয়সী একজন পেশাদার বলেন, “প্রতি মাসে ওভারড্রাফট থেকে বের হতে লড়াই করছি, বেঁচে থাকার জন্য Vinted-এ জিনিসপত্র বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখা তো দূরের কথা, ক্যারিয়ারে উচ্চপদে পৌঁছানোর আশাও করি না। কারণ, সেই জায়গাগুলো ইতিমধ্যে বয়স্কদের দখলে, আর তারা যতক্ষণ না অবসর নিচ্ছে বা মারা যাচ্ছে, ততক্ষণ সেই পদ খালি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাহলে আমি কেন বেশি কাজ করতে চাইব?”
YouGov-এর এক জরিপ অনুযায়ী, ১৮-২৪ বছর বয়সীরা ‘Severance’-এর মতো বাস্তবতা বেশি পছন্দ করে, যেখানে ব্যক্তিগত জীবনে তারা অফিসের স্মৃতি রাখতে চায় না। সহজ ভাষায় বললে, Gen Z কাজকে এতটাই অপছন্দ করে যে তারা তাদের ৯-৫ চাকরির কথা একদম ভুলে যেতে চায়!
এই মানসিকতা চাকরিদাতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। Gen Z সময় ব্যবস্থাপনায় কঠোর, অফিসের রীতিনীতি মানতে চায় না এবং নিজেদের সুবিধামতো কাজ করতে চায়। মিলেনিয়াল ম্যানেজারদের কাছেও এটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
একজন মিলেনিয়াল ম্যানেজার হান্না (ছদ্মনাম) বলেন, “Gen Z-দের নিয়ন্ত্রণ করা দুঃস্বপ্ন। তারা যদি ১০ মিনিট বেশি কাজ করে, তাহলে ১০ মিনিটের ছুটি চায়। এটা আমরা মিলেনিয়ালরা কখনো কল্পনাও করতাম না।”
হান্না আরও বলেন, “Gen Z মনে করে, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রমোশন পাওয়ার যোগ্য, যদিও তারা ন্যূনতম শ্রমও দেয়নি। আমাদের সময়ে আমরা জানতাম যে প্রমোশন চাইলে আমাদের নিজে থেকেই বেশি কাজ করতে হবে। কিন্তু তারা মনে করে, অতিরিক্ত পরিশ্রম ছাড়াই সুযোগ পাওয়ার অধিকার তাদের আছে।”
একজন Gen Z কর্মী রোয়ান (২৭), যিনি একজন প্ল্যানিং অ্যানালিস্ট, বলেন, “আমি অতিরিক্ত খাটতে খাটতে ক্লান্ত। আমি এখন শুধু টিকে থাকার জন্য কাজ করছি। আমি বাড়ি কেনার জন্য সঞ্চয় করছি না, কারণ সেটা সম্ভবই নয়।
আমি শুধু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে চাই, ভালো পোশাক কিনতে চাই, আর ভাগ্য ভালো থাকলে বছরের শেষে একটা ট্রিপ দিতে চাই। কিন্তু এসবও এত দূরের স্বপ্ন মনে হয়, যে বাড়তি পরিশ্রমের মানেই পাই না।”
একইভাবে, একজন Gen Z ভিডিওগ্রাফার জর্জ (ছদ্মনাম) বলেন, “প্রমোশন না পাওয়ার পর আমি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ‘টাইম থিফ’ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি অফিসের সময় ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, এমনকি প্লাম্বারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট সাজিয়ে রাখতেন। তিনি অফিস চলাকালীন মদ পান করতেন। এমনকি ‘শুট ডে’র নামে Lime বাইকে চড়ে পুরো লন্ডন ঘুরে বেড়াতেন!
Gen Z আসলেই কি অলস, নাকি তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে? তাদের সময়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া, ব্যক্তিগত জীবনের মূল্য বোঝা এবং চাকরিকে একমাত্র জীবনের লক্ষ্য না বানানোর মানসিকতাএসব কি আসলেই ভুল? নাকি পুরোনো প্রজন্মের চোখে এটি দায়িত্বহীনতার প্রতিচ্ছবি মাত্র?
সূত্র:https://tinyurl.com/2cuj9prr
আফরোজা