
ছবিঃ সংগৃহীত
হাঁটা সহজ হলেও এটি একটি দুর্দান্ত ব্যায়াম, বিশেষ করে যদি নিয়মিত করা হয়। জার্নাল অব নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটা ওজন কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালোরি নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে হাঁটা সংযুক্ত করলে ১২ সপ্তাহের মধ্যে ডায়েটিংয়ের চেয়ে ৪ পাউন্ড বেশি ওজন কমানো সম্ভব। পাশাপাশি, এটি পেশির গঠন ঠিক রেখে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
ওজন কমানোর জন্য কতটা হাঁটা দরকার?
একটি ২৪-সপ্তাহের গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ মিনিট একটানা হাঁটার চেয়ে ২৫ মিনিটের দুটি ভাগে হাঁটা বেশি কার্যকর। অংশগ্রহণকারীরা যারা ছোট ছোট অংশে হাঁটতেন, তারা একটানা হাঁটাদের তুলনায় ৩.৭ পাউন্ড বেশি ওজন কমিয়েছেন।
মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, উল্লেখযোগ্যভাবে ওজন কমাতে সপ্তাহে অন্তত ৩০০ মিনিট মাঝারি-তীব্রতায় শারীরিক ব্যায়াম করা প্রয়োজন। প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটলে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব।
শুরুর দিকে, বিশেষজ্ঞরা ৫-১৫ মিনিট করে সপ্তাহে ২-৩ দিন হাঁটার পরামর্শ দেন। পরে ধাপে ধাপে সময় বাড়াতে হবে। তরুণরা প্রতি সপ্তাহে ও বৃদ্ধরা প্রতি ২-৪ সপ্তাহ পর ধীরে ধীরে সময় ও গতি বাড়াতে পারেন।
হাঁটার সময় কিভাবে বৈচিত্র্য আনবেন?
হাঁটাকে আকর্ষণীয় ও চ্যালেঞ্জিং করতে—
✅ নতুন রুট নির্বাচন করুন।
✅ হাঁটার সময় পরিবর্তন করুন।
✅ বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে হাঁটুন।
✅ অডিওবুক বা পডকাস্ট শুনুন।
✅ নতুন জুতা বা গিয়ার কিনে নিজেকে পুরস্কৃত করুন।
ওজন কমার সাথে সাথে হাঁটার গতি বাড়ানো উচিত, কারণ কম ওজন হলে শরীর আগের তুলনায় কম ক্যালোরি পোড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৫০ পাউন্ড ওজনের ব্যক্তি ৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিতে এক ঘণ্টা হাঁটলে প্রায় ৫০ ক্যালোরি কম পোড়াবে, যা ১৮০ পাউন্ড ওজনের ব্যক্তির তুলনায় কম।
ক্যালোরি ঘাটতি তৈরি করে ফিটনেস ফিরে পাওয়া
হাঁটার সাথে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করলে এটি আরও কার্যকর হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৫০০-৮০০ ক্যালোরি কম খেয়েছে এবং সপ্তাহে ৩ ঘণ্টা, ৩.৭ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিতে হেঁটেছে, তারা শুধু ডায়েটিং করা ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি ওজন কমিয়েছে।
প্রতিদিন ৫০০ ক্যালোরির ঘাটতি তৈরি করলে সপ্তাহে ০.৫-২ পাউন্ড ওজন কমানো সম্ভব। কারণ ৩,৫০০ ক্যালোরি সমান ১ পাউন্ড ওজন।
ক্যালোরি পোড়ার হার:
➡ ১৫০ পাউন্ড ওজনের ব্যক্তি (৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতি) = প্রতি ঘণ্টায় ২২৪ ক্যালোরি পোড়ে।
➡ ১৮০ পাউন্ড ওজনের ব্যক্তি = ২৭০ ক্যালোরি পোড়ায়।
প্রতিদিন হাঁটার চমৎকার উপকারিতা
ওজন কমানোর পাশাপাশি হাঁটার রয়েছে আরও অসংখ্য উপকারিতা—
✔ মনের অবস্থার উন্নতি ঘটে।
✔ রক্তচাপ কমায়।
✔ হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়।
✔ নিয়মিত ১৫০ মিনিট হাঁটা বার্ষিক ১.১-১.৮ পাউন্ড ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা প্রতিরোধ করতে পারে।
✔ আলঝেইমার, ডিমেনশিয়া ও কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
এটি খুব সহজ ব্যায়াম, যার জন্য কোনো বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। হাঁটার কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য হাতে ছোট ওজন নেওয়া, উঁচু পথে হাঁটা বা ওজনযুক্ত ভেস্ট পরা যেতে পারে।
প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটা ওজন কমাতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষণা বলছে, ডায়েটের পাশাপাশি হাঁটা সংযুক্ত করলে ওজন দ্রুত কমে, পেশি ঠিক থাকে, মন ভালো থাকে এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। এটি সব বয়সের মানুষের জন্য সহজ ও কার্যকর একটি ব্যায়াম।
ইমরান