
ছবিঃ সংগৃহীত
বিজনেস টাইকুন ও বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের চেয়ারম্যান ও সিইও ওয়ারেন বাফেটের মতে, একজন সিইওর শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
২০২৫ সালের বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার চিঠিতে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, সিইও নিয়োগের সময় তিনি কখনোই প্রার্থীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখেন না।
বাফেট লিখেছেন,"সিইও নির্বাচনে আমি কখনোই দেখি না প্রার্থী কোথায় পড়াশোনা করেছে। কখনোই না!"
তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ফরেস্ট রিভারের প্রতিষ্ঠাতা পিট লিগলের কথা, যিনি ২০০৫ সালে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের অংশীদার হন। লিগল, যিনি ওয়েস্টার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন, কোম্পানিটিকে শীর্ষস্থানে নিয়ে যান। "পরবর্তী ১৯ বছরে, পিট প্রতিযোগীদের ছাড়িয়ে গেছেন। কেউই তার ধারেকাছে আসতে পারেনি।
এছাড়া, তিনি মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের কথাও উল্লেখ করেন, যিনি হার্ভার্ডের পাঠচক্র ছেড়ে সফটওয়্যার জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। বাফেট লিখেছেন, "আমার বন্ধু বিল গেটসকে দেখুন, যিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, বিশ্ব বদলে দেওয়ার সুযোগ কাজে লাগানো বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট পাওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটি উদাহরণ ছিল বেন রোজনার, যিনি ষষ্ঠ শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করেননি, তবুও ৪৪ মিলিয়ন ডলারের খুচরা ব্যবসার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। তার সৎ-নাতনি জেসিকা টুনকেল একবার বাফেটকে বলেছিলেন, "বেন ষষ্ঠ শ্রেণির পর আর স্কুলে যাননি।"
বাফেট নিজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা (নেব্রাস্কা-লিঙ্কন, পেনসিলভানিয়ার ওয়ার্টন স্কুল, এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়) করলেও, তিনি বিশ্বাস করেন ব্যবসায়িক প্রতিভা জন্মগত। তিনি বলেন, "আমি দেখেছি, ব্যবসার প্রতিভার বড় অংশই প্রকৃতিগত, যেখানে পরিবেশগত শিক্ষা খুব একটা প্রভাব রাখে না।
বাফেটের নিজের কিছু পরামর্শ
ভুল করাটা অপরাধ নয়, কিন্তু সংশোধনে দেরি করা মারাত্মক অপরাধ
বাফেট স্বীকার করেন যে, তিনি বহু ভুল করেছেন—ব্যবসার সম্ভাবনা ভুলভাবে বিচার করেছেন এবং ভুল ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তার শেয়ারহোল্ডার চিঠিগুলোতে "ভুল" বা "ত্রুটি" শব্দগুলো ১৬ বার এসেছে।
তিনি বলেন, "সবচেয়ে বড় পাপ হলো ভুল সংশোধনে দেরি করা।" তার মতে, ভুল এড়ানো সম্ভব নয়, তবে সেগুলো দ্রুত সংশোধন করা জরুরি, নইলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
একটি সঠিক সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে সবকিছু
বাফেট মনে করেন, ভুল আসবেই, তবে একটি দুর্দান্ত সিদ্ধান্তই ব্যবসার গতিপথ বদলে দিতে পারে। "আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, একটি জয়ী সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে বিস্ময়কর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
তিনি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের কথা বলেন—যেমন, জিইআইসিও (GEICO) কেনা, প্রাক্তন ম্যাককিনসি কনসালটেন্ট অজিত জৈনকে ম্যানেজমেন্টে আনা, এবং ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে চার্লি মুঙ্গারের সাথে অংশীদারিত্ব করা।
সঞ্চয় ও পুনঃবিনিয়োগ—টেকসই সমৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি
বাফেট ব্যাখ্যা করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সঞ্চয় ও পুনঃবিনিয়োগ সংস্কৃতির কারণে উন্নতি করেছে।
তিনি বলেন, "দেশের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই, আমাদের প্রয়োজন ছিল নাগরিকদের সঞ্চয়ী হওয়া, এবং সেই সঞ্চিত মূলধনকে বুদ্ধিমানের মতো বিনিয়োগ করা।একইভাবে, বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের শেয়ারহোল্ডাররাও লভ্যাংশ খরচ না করে পুনঃবিনিয়োগের মাধ্যমে সফল হয়েছেন।
তিনি নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশেও বার্তা দেন যে, "মনে রাখবেন, আমাদের একটি স্থিতিশীল মুদ্রার প্রয়োজন, যা নিশ্চিত করতে আপনাদের প্রজ্ঞা ও সতর্কতা অপরিহার্য।"
ওয়ারেন বাফেটের বার্ষিক চিঠিগুলো শুধু আর্থিক প্রতিবেদনের জন্য নয়, বরং সেগুলো ব্যবসা ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বহন করে। এবারের চিঠিতে তিনি পুনর্ব্যক্ত করলেন কিছু মূলনীতি—
- সাফল্য সম্মানজনক ডিগ্রির ওপর নির্ভর করে না
- ভুল হলে দ্রুত সংশোধন করতে হবে এবং একটি সঠিক সিদ্ধান্ত পুরো ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে।
- আর সঞ্চয় ও বিনিয়োগই দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধির মূলভিত্তি।
ইমরান