ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

জাপানি যে খাদ্যাভাসে আয়ু বাড়বে আপনার

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ৩ মার্চ ২০২৫

জাপানি যে খাদ্যাভাসে আয়ু বাড়বে আপনার

জাপানি খাদ্যাভাস বিশ্বব্যাপী সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ুর জন্য একটি আদর্শ হিসেবে পরিচিত। বিশেষত, জাপানের ওকিনাওয়া অঞ্চলের মানুষদের আয়ু পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দীর্ঘ, এবং তাদের খাদ্যাভাসের কারণে এই দীর্ঘ আয়ু বজায় থাকে। জাপানিরা যে ধরনের খাবার খেয়ে দীর্ঘদিন সুস্থ জীবন যাপন করে, তা পৃথিবীজুড়ে এক বিশেষ খ্যাতি পেয়েছে। জাপানি খাদ্যাভাসের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যা আয়ু বাড়াতে এবং সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাদের খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক খাবার, সয়াবিন, ফার্মেন্টড খাবার, চা ও মাছ রাখেন। তাদের খাদ্য তালিকায় আরো থাকে লাল মাংস, আলু, চিনি ও দুগ্ধজাত খাবার থাকে না বললেই চলে। এজন্য তাদের খাবারকে পৃথিবীর সেরা সুষম খাদ্যের তালিকা বলা হয়। সমুদ্রের শৈবাল, সয়া ও অন্যান্য শস্য দানা ফার্মেন্টড করে নিজেদের তৈরি খাবার খান তারা।

জাপানি খাদ্যাভাসে মাছ, শৈবাল, এবং অন্যান্য সামুদ্রিক খাদ্য প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাছ, বিশেষত স্যালমন, ম্যাকারেল, টুনা, ও স্যাবাস প্রভৃতি উচ্চ পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিন সরবরাহ করে, যা হৃদরোগ, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা, এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। শৈবাল ও অন্যান্য সামুদ্রিক উদ্ভিদগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজসমৃদ্ধ, যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

জাপানি খাদ্যাভাসে সোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সোয়া থেকে তৈরি হয় টেম্পে, টফু, এবং মিসো (ফারমেন্টেড সোয়া)। সয়া প্রোটিনের একটি দারুণ উৎস, যা হৃদরোগ, ক্যানসার, এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক। ফারমেন্টেড খাবার জাপানি খাদ্যাভাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জাপানিরা মিসো, শসা আচার, নাত্টো (ফারমেন্টেড সয়া) এবং কিমচি (কোরীয় শাকসবজি) খেয়ে থাকেন। জাপানি খাবারের আরেকটি অন্যতম উপাদান হল চা, বিশেষত গ্রিন টি (Green Tea)। গ্রিন টি তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোষের ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং হার্ট ডিজিজ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস এবং অ্যালঝেইমার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। 

জাপানি খাদ্যাভাসে লাল মাংস (গরুর মাংস, ভেড়া ইত্যাদি) খুবই কম পরিমাণে খাওয়া হয়। এতে সন্তুষ্ট ফ্যাট এবং কলেস্টেরল কমে যায়, যা হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। এর পরিবর্তে, তারা মাছ, সয়া এবং অন্যান্য উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বেশি খায়, যা শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে সহায়ক। জাপানিরা সাধারণত আলু এবং চিনি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করে না। চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি খাওয়ার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হতে পারে, যা মোটা হতে পারে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হার্ট ডিজিজ এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর পরিবর্তে তারা মিষ্টি শাকসবজি (যেমন মিষ্টি আলু) এবং কম চিনি খাবার খেয়ে থাকে। জাপানি খাদ্যাভাসে সমুদ্রের শৈবাল (যেমন নোরি এবং ওকাসু) এবং শস্যদানা (যেমন রাইস এবং মিষ্টি শস্য) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শৈবাল এবং শস্যদানা বেশিরভাগ সময় ফারমেন্টেড হয় এবং এতে থাকা ভিটামিন, মিনারেল, এবং ফাইবার শরীরের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জাপানি খাদ্যাভাসে সমুদ্রের শৈবাল, সয়া, ফারমেন্টেড খাবার, চা, এবং মাছ অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা তাদের দীর্ঘায়ু এবং সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে। জাপানি খাবারের মধ্যে কম ক্যালোরি, কম চিনি, এবং প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে তারা শরীরকে সুস্থ রাখে। এসব খাদ্যাভাস এবং জীবনধারা অনুসরণ করে আপনি আপনার আয়ু বৃদ্ধি করতে পারেন এবং সুস্থ থাকতে পারবেন।

 

 

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

×