
ছবিঃ সংগৃহীত।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, এবং আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসগুলোও এর সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। কিছু অভ্যাসের কারণে আমাদের মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা স্মৃতিশক্তি হ্রাসের কারণ হতে পারে। নিচে এমন কিছু অভ্যাস উল্লেখ করা হলো, যেগুলো স্মৃতিশক্তির উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে:
১. অপর্যাপ্ত ঘুম
ঘুমের সময় মস্তিষ্কে নতুন তথ্য সংরক্ষিত এবং পুরানো তথ্য পুনরুদ্ধার করা হয়। যদি আমরা পর্যাপ্ত ঘুম না পায়, তাহলে স্মৃতির ধারণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
২. অতিরিক্ত মানসিক চাপ
মানসিক চাপ (স্ট্রেস) মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে। এটি বিশেষ করে হিপোক্যাম্পাস (স্মৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মস্তিষ্কের অংশ) এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ থাকা স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
খাদ্যাভ্যাসও স্মৃতিশক্তির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমতে পারে। এজন্য পুষ্টিকর খাবার, যেমন তাজা ফল, শাকসবজি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৪. অতিরিক্ত অ্যালকোহল খাওয়া
অতিরিক্ত অ্যালকোহল খাওয়া মস্তিষ্কের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা স্মৃতির ক্ষতি হতে পারে। অ্যালকোহল মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার (যেগুলি স্নায়ুকোষের মধ্যে সংকেত পাঠায়) এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, যা স্মৃতির ধারণ এবং পুনরুদ্ধারে সমস্যা তৈরি করে।
৫. ব্রেইন এক্সারসাইজের অভাব
যেমন আমাদের শরীরের পেশী শক্তিশালী রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম প্রয়োজন, তেমন মস্তিষ্কের জন্যও চ্যালেঞ্জিং কাজ বা পাজল সমাধান, নতুন কিছু শেখা, বই পড়া বা গানের সুরে মনোযোগ দেওয়ার মতো ব্যায়াম প্রয়োজন। ব্রেইন এক্সারসাইজের অভাবে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে।
৬. সামাজিক বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্নতা
মানসিক চাপের পাশাপাশি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা একাকীত্বও স্মৃতিশক্তি কমানোর কারণ হতে পারে। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ এবং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
৭. অতিরিক্ত টেলিভিশন বা ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার
অত্যধিক সময় টেলিভিশন বা স্মার্টফোনের স্ক্রীনে ব্যয় করা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘ সময় স্ক্রীন ব্যবহার মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে স্থবির করে দিতে পারে এবং স্মৃতি ধারণের ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
৮. দূরত্বের অভাব (Sedentary Lifestyle)
অবস্থান পরিবর্তন না করা, বা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকা (sedentary lifestyle) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাচলা বা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৯. ধূমপান
ধূমপান মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলোকে সংকীর্ণ করে, ফলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। এটি স্মৃতির ক্ষতি করতে পারে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ধূমপান করলে এটি মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণ হয়।
১০. প্রতিক্রিয়া বা মনোযোগের অভাব
ধীরে ধীরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা তথ্যের প্রতি মনোযোগের অভাব, সময়ের সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের কারণ হতে পারে। প্রতিদিনের কাজে সতর্কতা এবং মনোযোগ কমে গেলে, তা স্মৃতি ধারণে ব্যাঘাত ঘটায়।
১১. দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বা মস্তিষ্কের কোনো সমস্যা
দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতা বা মস্তিষ্কের রোগ যেমন ডিমেনশিয়া, আলঝেইমার, বা পারকিনসনস ডিজিজ স্মৃতিশক্তির হ্রাসের বড় কারণ হতে পারে। এ ধরনের অসুস্থতা মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এগুলো হল কিছু অভ্যাস যেগুলো স্মৃতিশক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, যদি আপনি এই অভ্যাসগুলি পরিহার করেন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করেন, তাহলে আপনার স্মৃতিশক্তি ভালো থাকতে পারে। স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সঠিক খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুহাম্মদ ওমর ফারুক