
সুখী বিবাহিত জীবন গড়ে তুলতে পরিশ্রম দরকার,এটি সবারই জানা। তবে আপনি হয়তো ভুল জায়গায় পরিশ্রম করছেন, বা সঠিক বিষয়েও ভুল পদ্ধতিতে কাজ করছেন।
"আমাদের সংস্কৃতিতে একসঙ্গে থাকার গুরুত্বের চেয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা ও সুখী থাকার উপর কম জোর দেওয়া হয়। পজিটিভ সাইকোলজি গবেষণায় দেখা গেছে, কীভাবে দাম্পত্য জীবন আরও সুখী করা যায়," বলেন সুজান পিলেগি, যিনি তার স্বামী জেমস পাভেলস্কির সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার পজিটিভ সাইকোলজি সেন্টারে কাজ করেন।
পজিটিভ সাইকোলজি মানুষের শক্তি ও সম্পর্কের বিকাশের দিকগুলোকে মূল্যায়ন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি কেউ ইতিবাচক দিকগুলোর বিকাশে মনোযোগ দেয়, তবে সম্পর্ক সুখী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সুখী দাম্পত্য জীবনের আসল গোপন সূত্র কী? আসুন জেনে নিই-
১. স্বাস্থ্যকর আবেগ গড়ে তুলুন
সব সময় একে অপরকে নিয়ে মুগ্ধ থাকা বা প্রতিনিয়ত চিন্তা করা,এ ধারণাটি বাস্তবে সুখী সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। সম্পর্কের শুরুতে এটি স্বাভাবিক মনে হলেও, যদি এটি দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকে এবং আপনি বন্ধুদের এড়িয়ে চলেন বা নিজের শখ-আহ্লাদ ভুলে যান, তবে এটি ‘অবসেসিভ প্যাশন’-এর লক্ষণ।
পিলেগি বলেন, সুস্থ আবেগ তৈরি করতে হলে নিজের শখ ও সম্পর্কের বাইরের দিকগুলোর জন্যও জায়গা রাখতে হবে। সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানোর সময় এমন কিছু করতে হবে যা দু’জনেরই ভালো লাগে, প্রতিযোগিতা নয় বরং বন্ধন তৈরি করাই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
২. ইতিবাচকতার গুরুত্ব দিন
সম্পর্কের শুরুতে উচ্ছ্বাস, ভালোবাসা ও উত্তেজনা সহজেই প্রবাহিত হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকে ধরে নেন যে, এই আবেগগুলো স্বাভাবিকভাবেই টিকে থাকবে, যা সত্য নয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, সুখী দম্পতিরা সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত সচেতনভাবে ইতিবাচকতা বজায় রাখেন। সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রতিদিন কীভাবে ইতিবাচক আবেগ বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
পিলেগির মতে, এটি ঠিক যেমন জিমে সদস্যপদ নিয়ে একবার গেলে ফিট হওয়া সম্ভব নয়, নিয়মিত ব্যায়াম করতেই হবে। তিনি ‘পজিটিভ রিলেশনশিপ পোর্টফোলিও’ নামের একটি কার্যক্রমের পরামর্শ দেন, যেখানে সম্পর্কের সুখকর মুহূর্তগুলো সংরক্ষণ করা হয়, যা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে সহায়তা করে।
৩. অভিজ্ঞতাকে উপভোগ করুন
ইতিবাচক মুহূর্তগুলো ক্ষণস্থায়ী হতে পারে, তাই সেগুলো ধীরে ধীরে উপভোগ করা দরকার। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি অন্তত ১৫ মিনিট একটি সুখকর অভিজ্ঞতা নিয়ে চিন্তা করা হয়, তবে তা পরিপূর্ণতা বাড়াতে সাহায্য করে।
এটি করার জন্য সঙ্গীর সঙ্গে বিশেষ মুহূর্ত বা গোপন স্মৃতি শেয়ার করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, শৈশবের কোনো স্মৃতি, লুকানো স্বপ্ন, বা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করুন। এই ধরনের আলোচনা সঙ্গীর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
৪. একে অপরের শক্তি খুঁজে বের করুন এবং সেগুলোর মূল্যায়ন করুন
আপনার সঙ্গীর মূল শক্তিগুলো কী? পজিটিভ সাইকোলজি গবেষণায় ২৪টি চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে সৃজনশীলতা, কৌতূহল, নেতৃত্ব, শেখার প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
পিলেগি পরামর্শ দেন, একে অপরের শক্তি চিহ্নিত করে ‘স্ট্রেংথ ডেট’ করুন।অর্থাৎ, এমন একটি পরিকল্পনা করুন যেখানে দু’জনের শক্তিগুলোকে একসঙ্গে কাজে লাগানো যায়। এটি সম্পর্ককে গভীরতা দিতে পারে এবং একে অপরকে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ করে দেয়।
৫. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
যদি আপনার সঙ্গী অনুভব করেন যে, তাকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না, তাহলে তিনি সম্পর্ক নিয়ে অসন্তুষ্ট হতে পারেন। শুধু ‘ধন্যবাদ’ বলাই যথেষ্ট নয়, বরং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হলে নির্দিষ্টভাবে বলতে হবে।
যেমন, "তুমি সত্যিই বোঝো আমি কী চাই, তুমি দারুণ একজন শ্রোতা," বা "তুমি এতটা যত্নশীল, যা আমাদের সন্তানদের প্রতিও প্রকাশ পায়।" গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে মনোযোগী, তাদের বিচ্ছেদের সম্ভাবনা ছয় মাসের মধ্যে ৫০% কমে যায়।
এই পাঁচটি গোপন সূত্র মেনে চললে আপনার সম্পর্ক হয়ে উঠবে আরও সুস্থ, সুখী এবং দীর্ঘস্থায়ী।
সূত্র:https://tinyurl.com/muyw4tk2
আফরোজা