
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান যুগে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিবেশ এবং তথ্যের আধিক্যের মধ্যে শিশুদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য জীবন দক্ষতা শেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাইন্ড ইন দ্যা মেকিং একটি বিশেষ উদ্যোগ, যা নির্বাহী কার্যক্রম দক্ষতার ওপর জোর দেয়। এই মানসিক প্রক্রিয়াগুলো চিন্তা, কাজ এবং আবেগকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে, যাতে জীবন ও শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, নির্বাহী কার্যক্রমের দক্ষতা — যেমন মানসিক নমনীয়তা, কার্যকর স্মৃতি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ — ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য আইকিউয়ের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ছোটবেলা থেকে এই দক্ষতা গড়ে তুললে শিশুরা স্বাস্থ্য, সম্পদ এবং সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়। তবে দেরি হয়ে গেলেও চিন্তার কিছু নেই — জীবনের যে কোনো পর্যায়ে এই দক্ষতাগুলো অর্জন করা সম্ভব।
তাহলে মাইন্ড ইন দ্যা মেকিং যে ৭টি জীবন দক্ষতার কথা বলেছে, সেগুলো কী কী? চলুন এক নজরে দেখে নিই:
১. মনোযোগ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ: এখনকার যুগে যখন চারপাশে এত বিভ্রান্তি, তখন শিশুদের জন্য মনোযোগ ধরে রাখা এবং তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দক্ষতার মাধ্যমে তারা মনোযোগী হতে শেখে, নিয়ম মনে রাখে, নমনীয় চিন্তা করে এবং নিজের আচরণ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে।
২. দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ: অন্যরা কী ভাবছে বা অনুভব করছে — তা বোঝার ক্ষমতা শিশুর সহানুভূতি ও সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক গঠনের ভিত্তি। এই দক্ষতা অর্জনকারী শিশুরা সহজে অন্যদের উদ্দেশ্য বুঝতে পারে এবং দ্বন্দ্বে জড়ানোর প্রবণতা কমে যায়।
৩. যোগাযোগ: যোগাযোগ কেবল পড়া, লেখা ও বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় — এটি মূলত নিজের ভাবনা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার এবং অন্যরা কীভাবে তা বুঝবে, সেটি বোঝার ক্ষমতা। কর্মক্ষেত্রে এই দক্ষতার অভাব প্রায়ই দেখা যায়, যা ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে সফলতার জন্য অপরিহার্য।
৪. সংযোগ তৈরির ক্ষমতা: একটি বিষয় থেকে আরেকটি বিষয়ের মিল-অমিল খুঁজে বের করা, তথ্য শ্রেণিবদ্ধ করা এবং অর্থপূর্ণ উপসংহারে পৌঁছানো শেখার মূল ভিত্তি। নতুন ও ভিন্নধর্মী সংযোগ তৈরি করার ক্ষমতা সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে এবং শিশুদের তথ্য শুধু মুখস্থ না করে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে শেখায়।
৫. সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা: তথ্যের বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বর্তমান যুগে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সমালোচনামূলক চিন্তার মাধ্যমে শিশুরা বাস্তব জগতের সমস্যা সমাধান করতে এবং সঠিক বিশ্বাস ও সিদ্ধান্ত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
৬. চ্যালেঞ্জ গ্রহণ: সফলতার জন্য সাহস ও অধ্যবসায় অপরিহার্য। যারা চ্যালেঞ্জ থেকে পালানোর পরিবর্তে তা গ্রহণ করে, তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে এবং যেকোনো বাধা অতিক্রম করার শক্তি অর্জন করে।
৭. আত্মনির্দেশিত ও সক্রিয় হতে শেখা: জিজ্ঞাসু মন ও স্বপ্রণোদিত শেখার ইচ্ছা শিশুকে সবসময় পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত করে। নিজের শেখার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশল তৈরি করার মাধ্যমে শিশুরা আজীবন শেখার মানসিকতা গড়ে তোলে।
এই ৭টি জীবন দক্ষতা সামাজিক, আবেগিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতাকে একত্রিত করে, যা শিশুদের সমস্যার সমাধান, সম্পর্কের উন্নয়ন এবং নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে। মাইন্ড ইন দ্যা মেকিং এর মতে, এই দক্ষতাগুলো গড়ে তুলতে অভিভাবক, শিক্ষক এবং পরিচর্যাকারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে — এবং এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আজই সঠিক সময়।
আবীর