ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

যে ছয়টি কাজ মস্তিষ্ককে অলস করে তোলে

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ২ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২২:৪২, ২ মার্চ ২০২৫

যে ছয়টি কাজ মস্তিষ্ককে অলস করে তোলে

ছবি: সংগৃহীত।

আমাদের মস্তিষ্ক একটি পেশির মতো—যত বেশি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হবে, ততই এটি শক্তিশালী হবে। তবে যেমন খারাপ জীবনযাত্রার অভ্যাস আমাদের শরীরের ক্ষতি করতে পারে, তেমনি কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস আমাদের স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তিকে দুর্বল করে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকেই না বুঝেই প্রতিদিন এমন কিছু কাজ করেন, যা মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যারা প্রায়ই কিছু ভুলে যান, মনোযোগ ধরে রাখতে অসুবিধা হয় বা মানসিকভাবে ক্লান্ত অনুভব করেন, তাদের অভ্যাস দায়ী হতে পারে।

নিম্নে ছয়টি সাধারণ অভ্যাস উল্লেখ করা হলো, যা আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষতি করে এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব:

১. অতিরিক্ত মাল্টিটাস্কিং

অনেকে নিজেদের দক্ষ মাল্টিটাস্কার মনে করেন, কিন্তু মস্তিষ্কের জন্য এটি ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, একসঙ্গে একাধিক কাজ করলে মস্তিষ্ক অতিরিক্ত চাপে পড়ে এবং তথ্য সংরক্ষণে অসুবিধা হয়। ফলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। একবারে একটি কাজের ওপর সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।

২. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়, যা স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। অলস জীবনযাত্রা মস্তিষ্কের গতি কমিয়ে দিতে পারে এবং ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করা উচিত।

৩. বুদ্ধির খেলা না খেলা

ধাঁধা ও বুদ্ধির খেলা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। যদি আমরা নিয়মিত মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ না করি, তবে এটি ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। যেমন শারীরিক ব্যায়াম না করলে পেশি দুর্বল হয়, তেমনি মানসিক ব্যায়ামের অভাবে স্মৃতিশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুডোকু, ক্রসওয়ার্ড পাজল, বা নতুন কিছু শেখা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে।

৪. অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা, ভিডিও দেখা, বা যেকোনো তথ্যের জন্য মোবাইলের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ক্রমাগত তথ্য প্রবাহ মস্তিষ্ককে ক্লান্ত করে, মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায় এবং গভীরভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই, স্ক্রিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

৫. একাকিত্ব

সামাজিক যোগাযোগ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। মানুষের সঙ্গে কথা বলা, আইডিয়া শেয়ার করা ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো চিন্তাশক্তিকে উন্নত করে। একাকিত্ব মস্তিষ্কের আকার কমিয়ে দিতে পারে এবং হতাশা বাড়াতে পারে। নিয়মিত বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা ও সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।

৬. অতিরিক্ত মানসিক চাপ

চাপ স্মৃতিশক্তির জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণকারী অংশ হিপোক্যাম্পাসকে দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে মানুষ প্রায়ই ভুলে যান। স্ট্রেস কমানোর জন্য ধ্যান, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, বা প্রিয় কোনো শখে মনোনিবেশ করা উচিত।

মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে করণীয়

মস্তিষ্ককে সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে মানসিক ব্যায়ামের পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়ামও প্রয়োজন। নতুন দক্ষতা শেখা, বই পড়া, ধাঁধা সমাধান করা ও লেখালেখি স্মৃতিশক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়ায়। ধ্যান ও মনোযোগের ব্যায়াম মনোযোগ উন্নত করে। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ও নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণ নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়িয়ে দেয়, যা মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক।

যোগব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ কমানো, মনোযোগ বৃদ্ধি ও মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ উন্নত করতে কিছু যোগব্যায়াম কার্যকর হতে পারে:

পদ্মাসন (Padmasana): মন শান্ত করে ও মনোযোগ বাড়ায়।

বৃক্ষাসন (Vrikshasana): মানসিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে।

সর্বাঙ্গাসন (Sarvangasana): মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে মেধাশক্তি উন্নত করে।

পশ্চিমোত্তানাসন (Paschimottanasana): মানসিক চাপ কমিয়ে শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করে মস্তিষ্ককে আরও সক্রিয় ও কার্যকরী করা সম্ভব, যা দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি উন্নত করবে।

সায়মা ইসলাম

×