ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

সকালের যে ৮টি অভ্যাস ৮০ বছরেও আপনাকে প্রাণবন্ত রাখবে!

প্রকাশিত: ২২:০৯, ২ মার্চ ২০২৫

সকালের যে ৮টি অভ্যাস ৮০ বছরেও আপনাকে প্রাণবন্ত রাখবে!

ছবিঃ সংগৃহীত

আমাদের চারপাশে কিছু মানুষ আছেন, যারা ৮০ বছর পেরিয়েও প্রাণবন্ত, হাসিখুশি ও আশাবাদী থাকেন। আবার অনেকেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হতাশায় ভুগতে শুরু করেন। কিন্তু কেন?

গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কেবল ভাগ্যের ব্যাপার নয়—বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই সুখী থাকার আসল রহস্য। বিশেষ করে, সকালে আমরা দিনটাকে যেভাবে শুরু করি, তার ওপর পুরো দিনের মেজাজ নির্ভর করে।

ভালো খবর হলো, সুখী থাকার জন্য খুব কঠিন কিছু করতে হয় না। বরং সহজ কিছু অভ্যাসই আমাদের বয়স বাড়ার পরেও হাসিমুখে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক, সকালে এমন কী করলে জীবনকে আরও আনন্দময় ও ইতিবাচক রাখা যায়!

১) দিন শুরু করুন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে
আমরা প্রায়ই জীবনের খারাপ দিকগুলোর কথা বেশি ভাবি, কিন্তু সুখী মানুষরা ঠিক উল্টোটা করেন—তারা জীবনের ভালো দিকগুলোর ওপর মনোযোগ দেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, কৃতজ্ঞতা চর্চা করলে মানুষ মানসিকভাবে আরও সুখী হন, সুস্থ থাকেন এবং সম্পর্কগুলো আরও দৃঢ় হয়।

এজন্য যারা ৮০ বছরেও আশাবাদী থাকেন, তারা দিনের শুরুতেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কেউ সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনটি ভালো জিনিস লিখে রাখেন, কেউবা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে মনে মনে ভাবেন, "আজ আমি কিসের জন্য কৃতজ্ঞ?"

এটি কোনো কঠিন কিছু নয়, কিন্তু নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে জীবন অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে।

২) সকালে একটু হাঁটুন বা শরীর নড়াচড়া করুন
আমরা অনেকেই ভাবি, সকালের ব্যায়াম মানেই কঠিন শরীরচর্চা। কিন্তু সত্যি কথা হলো, শুধুমাত্র একটু নড়াচড়াই মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আমার দাদু ৮৪ বছর বয়সেও প্রতিদিন সকালে হাঁটতে যান। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আপনি কেন প্রতিদিন হাঁটতে যান?"

তিনি হাসলেন আর বললেন, "এটা আমাকে সতেজ রাখে, আর মনে করিয়ে দেয় যে আমার শরীর এখনো আমার সঙ্গে আছে।"

গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে একটু হাঁটাচলা বা হালকা ব্যায়াম করলে মন ভালো থাকে, স্ট্রেস কমে এবং সারাদিনের জন্য শক্তি পাওয়া যায়।

৩) সকালে সূর্যের আলোয় কিছুক্ষণ দাঁড়ান
সকালের আলো শুধু ঘুম ভাঙানোর জন্য নয়—এটি আসলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে (circadian rhythm) ঠিক রাখে। ফলে ঘুম ভালো হয়, মানসিক চাপ কমে এবং সারাদিন শক্তি পাওয়া যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালে ১০-১৫ মিনিটের জন্য সূর্যের আলো পান, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি সুখী, কম বিষণ্ন এবং ভালো ঘুমান।

যারা ৮০ বছরেও হাসিখুশি থাকেন, তারা সকালে একটু সময় বের করেন জানালা খুলে দাঁড়ানোর জন্য, বারান্দায় চা-কফি পান করার জন্য বা হালকা হাঁটার জন্য।

এটি খুব সাধারণ একটি কাজ, কিন্তু এর প্রভাব অসাধারণ!

৪) নির্দিষ্ট একটা সকালের রুটিন মেনে চলুন
সকালে কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন, সেটাই পুরো দিনের গতিপথ ঠিক করে দেয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের নির্দিষ্ট রুটিন থাকে, তারা কম উদ্বিগ্ন থাকেন এবং দিনটি আরও ইতিবাচকভাবে কাটে।

যারা বয়স বাড়ার পরেও উজ্জীবিত থাকেন, তারা প্রতিদিন সকালে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করেন—যেমন বিছানা গুছিয়ে নেওয়া, চা বানানো, পছন্দের বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা পড়া বা ধ্যান করা।

এগুলো হয়তো খুব ছোট বিষয় মনে হতে পারে, কিন্তু নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হলে এগুলো আমাদের জীবনে এক ধরনের স্থিরতা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসে।

৫) সকালে এমন কিছু করুন যা আপনার জন্য অর্থবহ
শুধু সকালের কাজ করলেই হবে না, জীবনের অর্থপূর্ণ দিকগুলোর সঙ্গে সংযোগ থাকাও জরুরি।

যারা ৮০ বছরেও সুখী থাকেন, তারা সকালে এমন কিছু করেন যা তাদের জন্য অর্থবহ—কেউ প্রার্থনা করেন, কেউ ধ্যান করেন, কেউ বাগান করেন, আবার কেউ প্রিয় কোনো বই পড়েন।

এগুলো আমাদের মনের গভীরে শান্তি ও উদ্দেশ্যবোধ তৈরি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬) পরিবারের বা কাছের মানুষকে সময় দেন
সকালে ব্যস্ততা থাকে, কিন্তু সুখী মানুষরা পরিবার ও কাছের মানুষের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য সচেতনভাবে চেষ্টা করেন।

এটি হতে পারে—
✅ পরিবারের সঙ্গে সকালের নাশতা খাওয়া
✅ প্রিয়জনকে ফোন করে কুশল জিজ্ঞেস করা
✅ একটি ছোট্ট "সুপ্রভাত" মেসেজ পাঠানো

গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক সম্পর্ক ভালো থাকলে মানুষ বেশি সুখী হন এবং বয়স বাড়ার সঙ্গেও ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে পারেন।

৭) যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, তাতেই মন দিন
জীবনের সবকিছু আমাদের হাতে নেই। কিন্তু যারা সুখী থাকেন, তারা অপ্রত্যাশিত সমস্যায় হতাশ না হয়ে যা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, সেটার ওপর ফোকাস করেন।

মনোবিজ্ঞানীরা এটাকে বলেন "Internal Locus of Control"—এর অর্থ হলো, আপনি বিশ্বাস করেন যে আপনার সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ড আপনার ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে।

যারা ৮০ বছরেও আনন্দে থাকেন, তারা নিজেদের প্রতিদিনের লক্ষ্য ঠিক করেন, ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখেন এবং যেকোনো পরিস্থিতির ভালো দিক খোঁজেন।

সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, কিন্তু আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সেটা ঠিক করা একেবারেই আপনার হাতে।

৮) দিনের জন্য কিছু আনন্দদায়ক পরিকল্পনা রাখুন
সুখী মানুষরা প্রতিদিন কিছু না কিছু উদ্দীপনাদায়ক কাজের জন্য অপেক্ষা করেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো আনন্দদায়ক বিষয় প্রত্যাশা করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ ইতিবাচক।

এটি হতে পারে—
☕ প্রিয় খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা
📞 প্রিয়জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলা
🎨 পছন্দের কোনো শখ নিয়ে কাজ করা

ছোট ছোট আনন্দগুলো জীবনকে অর্থবহ করে তোলে, আর এগুলোর জন্য অপেক্ষা করলেই মন আরও ভালো থাকে।

সুখী থাকা মানে অভ্যাস গড়ে তোলা
সুখী থাকা কোনো জাদুমন্ত্র নয়—এটি ছোট ছোট অভ্যাসের ফল।

বয়স বাড়ার পরেও যারা আশাবাদী থাকেন, তারা বড় কিছু করেন না। বরং—
✅ তারা সকালে সচেতনভাবে দিন শুরু করেন
✅ শারীরিক ও মানসিকভাবে সচল থাকেন
✅ মানুষের সঙ্গে সংযোগ রাখেন
✅ জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলো উপভোগ করেন

সুখ আমাদের কাছে নিজে থেকে আসে না, আমাদেরই তা গড়ে তুলতে হয়—প্রতিদিন, একটি সকাল থেকে আরেকটি সকাল পর্যন্ত!

তথ্যসূত্রঃ https://newsreports.com/dan-morning-habits-of-people-who-stay-happy-and-optimistic-in-their-80s-according-to-psychology/

মারিয়া

×