
ছবিঃ সংগৃহীত
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। কেউ কেউ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে থমকে যান, আবার কেউ আরও জ্ঞানী, সুখী ও উদ্যমী হয়ে ওঠেন।
এই পরিবর্তন কেবল ভাগ্যের উপর নির্ভর করে না, বরং এটি নির্ধারিত হয় কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর অভ্যাসের মাধ্যমে। যে সমস্ত মানুষ বয়সের সঙ্গে আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন, তারা সচেতনভাবেই কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস অনুসরণ করেন।
আসুন, জেনে নিই সেই সাতটি অভ্যাস, যা আমাদের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আরও জ্ঞানী, সুখী ও উদ্যমী করে তুলতে পারে—
১) জীবনের প্রতি কৌতূহলী থাকা
অনেকেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন কিছু শেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু যারা বয়সের সঙ্গে আরও প্রজ্ঞাবান ও উদ্যমী হয়ে ওঠেন, তারা সবসময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করেন। তারা জগৎ সম্পর্কে জানতে চান, নতুন আইডিয়া অন্বেষণ করেন এবং নিজেদের বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করেন।
সাইকোলজিস্ট আলবার্ট বান্দুরা বলেছেন, "মানুষের ক্ষমতা সম্পর্কে তাদের বিশ্বাসই তাদের প্রকৃত ক্ষমতাকে নির্ধারণ করে।"
২) নিয়ন্ত্রণের মধ্যে যা আছে, সেটাতেই ফোকাস করা
জীবন অনিশ্চিত, আর সবকিছু আমাদের হাতের মুঠোয় থাকে না। তবে যারা সত্যিকারের সুখী হতে চান, তারা সেই বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দেন, যা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ভিক্টর ফ্রাঙ্কল বলেছেন, "যখন আমরা কোনো পরিস্থিতি বদলাতে পারি না, তখন আমাদের নিজেদের বদলানোর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা উচিত।"
৩) প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
ধন্যবাদজ্ঞাপন শুধু সৌজন্যবোধ নয়, এটি আমাদের মনকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মানসিক চাপ কমে, মন ভালো থাকে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায়।
গ্র্যাচিটিউড বিশেষজ্ঞ রবার্ট এমন্স বলেন, "কৃতজ্ঞতা এমন বিষাক্ত আবেগকে বাধা দেয়, যেমন ঈর্ষা, হতাশা ও অনুশোচনা—যা আমাদের সুখ নষ্ট করতে পারে।"
৪) যা জানা নেই, তা স্বীকার করা
অনেকেই ভাবেন, জ্ঞানী হওয়া মানে সবকিছু জানা। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তিরা বুঝতে পারেন, তারা এখনো অনেক কিছু জানেন না।
দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, "একমাত্র সত্যিকারের জ্ঞান হলো এটা জানা যে তুমি কিছুই জানো না।"
৫) অভিজ্ঞতাকে সম্পদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া
অধিকাংশ মানুষ জীবনে সম্পদ সংগ্রহের পেছনে ছুটেন। তবে যারা প্রকৃতপক্ষে সুখী ও সফল, তারা অভিজ্ঞতার মূল্য দেন বেশি।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থমাস গিলোভিচের গবেষণায় দেখা গেছে, অভিজ্ঞতা আমাদের পরিচয়ের অংশ হয়ে যায়, যা বস্তুগত সম্পদের চেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী আনন্দ দেয়।
৬) অতীতকে মেনে নেওয়া
অনেকেই অতীতের ভুল ও ব্যর্থতার জন্য নিজেদের অপরাধবোধে ভোগেন। কিন্তু যারা জীবনে এগিয়ে যান, তারা অতীত থেকে শিক্ষা নেন এবং সেটাকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।
বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী কার্ল ইয়ুং বলেন, "আমি যা ঘটেছে তা নই, বরং আমি যা হতে চাই তা-ই আমি।"
৭) ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষদের সঙ্গ বেছে নেওয়া
আমরা যাদের সঙ্গে সময় কাটাই, তাদের চিন্তাভাবনা, আবেগ ও অভ্যাস আমাদের উপর প্রভাব ফেলে। যারা প্রকৃতপক্ষে সুখী ও সফল, তারা সচেতনভাবে ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষদের সঙ্গ বেছে নেন।
মোটিভেশনাল স্পিকার জিম রোহন বলেছেন, "তুমি যে পাঁচজন মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাও, তুমি তাদের গড় মান।"
বয়স বাড়া স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু জ্ঞানী, সুখী ও উদ্যমী হয়ে ওঠা আমাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। জীবন সম্পর্কে কৌতূহলী থাকা, অতীতকে গ্রহণ করা, কৃতজ্ঞ থাকা এবং সঠিক মানুষের সান্নিধ্যে থাকাই পারে আমাদের আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে।
এই অভ্যাসগুলো যেকোনো বয়সেই শুরু করা যায়। আজ থেকেই এই ইতিবাচক অভ্যাসগুলো নিজের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং বয়সের সঙ্গে আরও পরিপক্ব হয়ে উঠুন।
রিফাত