
ছবি: সংগৃহীত।
কিছু মানুষ বয়স বাড়লেও বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক সংযোগ ও আত্মবিশ্বাস বজায় রাখতে সক্ষম হন। এটি শুধু ভাগ্যের বিষয় নয়, বরং কিছু নির্দিষ্ট অভ্যাস তাদের মানসিকভাবে প্রখর ও আত্মবিশ্বাসী রাখে।
ভালো খবর হলো, এই অভ্যাসগুলো জটিল কিছু নয়। বরং ছোট ছোট সচেতন সিদ্ধান্তই আমাদের চিন্তাভাবনা, সামাজিক দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আসুন জেনে নেই এমন সাতটি কার্যকর অভ্যাস, যা আপনাকে দীর্ঘদিন মস্তিষ্কগতভাবে তীক্ষ্ণ ও সামাজিকভাবে আত্মবিশ্বাসী রাখতে সহায়তা করবে।
১) প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন
অনেকেই মনে করেন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক তীক্ষ্ণতা কমে যায়। তবে গবেষণা বলছে, মস্তিষ্ক সবসময় চ্যালেঞ্জ উপভোগ করে। আজীবন শেখার অভ্যাস যেমন—বই পড়া, নতুন দক্ষতা অর্জন বা বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি কৌতূহলী থাকা—মস্তিষ্ককে সক্রিয় ও নমনীয় রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। পাশাপাশি, যারা মানসিকভাবে সক্রিয় থাকেন, তারা সামাজিকভাবেও আত্মবিশ্বাসী হন, কারণ তাদের সবসময় নতুন কিছু বলার থাকে।
শেখার জন্য আপনাকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় জড়াতে হবে না। প্রতিদিন কিছু পৃষ্ঠা বই পড়ুন, নতুন রেসিপি চেষ্টা করুন বা ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করুন—এতেই মানসিক বিকাশ নিশ্চিত হবে।
২) নিয়মিত কমফোর্ট জোনের বাইরে যান
নিত্যদিনের একঘেয়ে জীবনধারা আমাদের মানসিক স্থবিরতা ও আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে। তাই মাঝে মাঝে নিজেকে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করানো জরুরি।
নতুন কোনো ক্লাসে যোগ দেওয়া, অপরিচিত বিষয়ের ওপর আলোচনা করা, ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের চিন্তাভাবনা বোঝার চেষ্টা করা—এ ধরনের কাজগুলো শুধু নতুন কিছু শেখাতেই সাহায্য করবে না, বরং সামাজিকভাবে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
৩) শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন
শরীর ও মস্তিষ্কের মধ্যে গভীর সংযোগ রয়েছে। নিয়মিত শরীরচর্চা শুধু শরীরকে ফিট রাখে না, বরং স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বাড়ায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের আকার বাড়াতে পারে, যা শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, যারা সক্রিয় থাকেন, তারা সাধারণত আত্মবিশ্বাসী দেখায়—ভালো শারীরিক ভঙ্গি, উচ্চ শক্তি এবং ইতিবাচক মনোভাব তাদের সামাজিকভাবে আরও দৃঢ় করে তোলে।
ভালো থাকার জন্য আপনাকে জিমে যেতে হবে না। প্রতিদিন হাঁটা, স্ট্রেচিং বা নাচের মতো আনন্দদায়ক শারীরিক কার্যকলাপ আপনাকে চাঙা রাখবে।
৪) অর্থবহ সম্পর্ক গড়ে তুলুন
সঠিক সম্পর্ক মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, অর্থবহ সামাজিক সংযোগ স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে, মানসিক চাপ কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
তবে শুধু মানুষের সঙ্গে থাকা যথেষ্ট নয়—প্রয়োজন গুণগত সম্পর্ক। ইতিবাচক ও বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনার সুযোগ তৈরি করা, বিশ্বস্ত বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং নতুন মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা মানসিক সচেতনতা ও আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে সাহায্য করে।
পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং গভীর আলোচনা করুন—এতে আপনার সামাজিক জীবন সমৃদ্ধ হবে।
৫) পরিবর্তনকে গ্রহণ করুন
নতুন প্রযুক্তি বা সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে একসময় নিজেকে পিছিয়ে পড়া মনে হতে পারে। পরিবর্তনকে অস্বীকার না করে বরং তা শেখার মানসিকতা রাখলে আপনি সবসময় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন।
নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে অস্বস্তি হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু ধৈর্য ধরে এগিয়ে গেলে এটি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। প্রযুক্তি, সামাজিক ধারা বা দৈনন্দিন জীবনের পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করলে আপনি মানসিকভাবে তরুণ থাকবেন এবং সংযুক্ত বোধ করবেন।
৬) মনোযোগ দিয়ে শুনুন
সামাজিকভাবে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার অন্যতম উপায় হলো ভালো শ্রোতা হওয়া। শুধু নিজের কথা বলার অপেক্ষায় না থেকে, অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস তৈরি করুন।
গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনা মানে নতুন তথ্য গ্রহণ করা, সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং আলাপচারিতাকে আরও অর্থবহ করে তোলা। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সক্রিয়ভাবে শোনার ক্ষমতা রাখেন, তারা সামাজিকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য হন।
অন্যান্য মানুষের কথা গুরুত্বসহকারে শোনার মাধ্যমে আপনি আরও বেশি সংযুক্ত ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।
৭) হাস্যরস ধরে রাখুন
হাসি ও আনন্দ সামাজিক দক্ষতা বাড়ায় এবং মানসিক সতেজতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাসি মানসিক চাপ কমায়, সম্পর্ক দৃঢ় করে এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করে।
একটি ভালো রসবোধ শুধু সামাজিক মিথস্ক্রিয়াকে আনন্দদায়ক করে না, বরং এটি জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গঠনে সহায়তা করে। যারা জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তে আনন্দ খুঁজে নিতে পারেন, তারা শুধু বয়স বাড়ান না—তারা সবসময় তরুণ মনে করেন নিজেকে!
মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ ও সামাজিকভাবে আত্মবিশ্বাসী রাখতে কঠিন কিছু করতে হয় না। প্রতিদিন কিছু নতুন শেখা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা, নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া, অর্থবহ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং হাস্যরস বজায় রাখাই মূল চাবিকাঠি।
ছোট ছোট এই অভ্যাসগুলো অনুসরণ করলে বয়স বাড়লেও আপনি মানসিকভাবে চাঙ্গা ও আত্মবিশ্বাসী থাকবেন
সায়মা ইসলাম