ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১

কান্না কেন প্রয়োজন? আমরা কেন কাঁদি?

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ১ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১১:৫০, ১ মার্চ ২০২৫

কান্না কেন প্রয়োজন? আমরা কেন কাঁদি?

ছবি: সংগৃহীত

কান্না নিয়ে আমাদের নানারকম ভুল ধারণা রয়েছে। সাধারণত, কান্নাকে মনে করা হয় মেয়েলী বা শিশুতোষ ব্যাপার। আবার কারো ধারণা, কাঁদলে কষ্ট বাড়ে। এই দুটি ধারণাই ভুল। কান্না একটি মানবীয় ব্যাপার, যা মন থেকে কষ্ট বা দুঃখবোধ দূর করে।

আলফ্রেড টেনিসনের, ’হোম দে ব্রট হার ওয়ারিওর ডেড’ কবিতায় একটি কান্নার ঘটনা বলা হয়েছে।

যুদ্ধে নিহতের লাশ বাড়িতে আনা হয়েছে, কিন্তু তার বিধবা স্ত্রী কাঁদছে না। শোকে পাথর হয়ে আছে। না কাঁদলে মেয়েটি মারাও যেতে পারে। সবাই চেষ্টা করেও মেয়েটিকে কাঁদাতে ব্যর্থ হয়। তখন সেখানকার সবচেয়ে বয়স্ক মহিলাটি তার বাচ্চা শিশুটিকে তার কোলে তুলে দিল। বাচ্চাকে দেখে বিধবা মেয়েটি বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়ল। আর এর মাধ্যমেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরল সে।

কান্নায় শোক কমে বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, মন ও দৈহিক সুস্থতার জন্য কান্না অত্যন্ত দরকারি একটি বিষয়। তাদের মতে, দুঃখের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরের সিস্টেমকে রক্ষা করার এক প্রাকৃতিক উপায় হলো কান্না।

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার পল রামসে মেডিকেল সেন্টারের সাইকায়াট্রি বিভাগের বায়োকেমিস্ট ড. উইলিয়াম ফ্রাই বলেন, দুঃখ, বেদনা, মানসিক আঘাত দেহে বিষাক্ত টক্সিন বা অণু সৃষ্টি করে। কান্না এই বিষাক্ত অণুগুলোকে শরীর থেকে বের করে দেয়। ড. ফ্রাই এক গবেষণার মাধ্যমে বিষয়টি প্রমাণ করেন। কয়েকজন ভলান্টিয়ারকে দুঃখ ভরা একটি ছায়াছবি দেখতে দেয়া হয় এবং বলা হয় ছবি দেখে কান্না পেলে তা টেস্টটিউবে ধরে রাখতে। কয়েকদিন পর এদেরকেই সদ্য কাটা পেঁয়াজের সামনে বসিয়ে টেস্টটিউবে চোখের পানি সংরক্ষণ করা হয়। ল্যাবটেস্টে দেখা গেল, দুঃখজনিত চোখের পানি আর পেঁয়াজের ঝাঁজ লেগে আসা চোখের পানির গঠন পুরোপুরি আলাদা।

কান্নার মাধ্যমে দুঃখজনিত বিষাণু শরীর থেকে বেরিয়ে যায় বলেই দুঃখ পেয়ে কাঁদলে আমরা অনেকটা হালকা বোধ করি। কান্না শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। সমস্যা যে ধরনেরই হোক না কেন এর সাথে জড়িত অনুভূতির ফলে সৃষ্ট টেনশনকে বের করে দেয় কান্না।

মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর ফ্রেডরিক ফ্রেচ বলেন, মানসিক চাপ শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে। কান্না সেই ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে মুক্তি দেয় মানসিক চাপ থেকে। না কাঁদলে সেই মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে থেকেই যায়। কাজেই, দুঃখ পেলে কাঁদুন, প্রাণ খুলে কাঁদুন, হাউমাউ করে কাঁদুন, কান্না আসতে না চাইলে কোয়ন্টাম মেডিটেশনের সাহায্য নিন।

সূত্র: https://youtu.be/P-5-bEqthew?si=oO_XDx27NmNSyDmq

মায়মুনা

×