
ছবিঃ সংগৃহীত
আপনি কি কখনো ভেবেছেন কেন কিছু মানুষ সবসময় বেশি সুখী দেখায়? তারা হয়তো বেশি ধনী, সফল বা নিখুঁত জীবনযাপন করছে না—তবুও তাদের মাঝে এক ধরনের শান্তি ও আনন্দ দেখা যায়।
এটি ভাগ্য নয়, জাদু নয়—এটি তাদের অভ্যাস।
আপনার সন্ধ্যা কাটানোর ধরন আপনার সার্বিক সুখের উপর বিশাল প্রভাব ফেলে। বেশিরভাগ মানুষ দিন শেষ করে ফোন স্ক্রল করে বা আগামী দিনের চিন্তা করে, কিন্তু সুখী মানুষদের কিছু ছোট ছোট রাতের অভ্যাস আছে যা তাদের জীবনকে আরও ভালো করে তোলে।
যদি আপনি সকালে আরও সতেজ, পরিপূর্ণ এবং সুখীভাবে জাগতে চান—তাহলে এই ৮টি অভ্যাস আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
১) ঘুমানোর আগে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা
ফোন, টিভি, ল্যাপটপ—এসব স্ক্রিন আমাদের জীবনজুড়ে রয়েছে। তবে এগুলো আমাদের মন অতিরিক্ত সক্রিয় রাখে যার ফলে সত্যিকারের বিশ্রাম নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
সুখী মানুষরা জানে যে ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা জরুরি। তারা ফোন স্ক্রল করা বা টিভি দেখার বদলে বই পড়া, ডায়েরি লেখা বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলা পছন্দ করে। এতে তাদের ঘুম ভালো হয় এবং দিনটি শান্তভাবে শেষ হয়।
২) দিনের ভালো মুহূর্তগুলোর কথা ভাবা
দিন শেষ হলে আমাদের মন খারাপ ঘটনাগুলো নিয়ে বেশি ভাবতে থাকে—কাজের ভুল, অপ্রত্যাশিত কথাবার্তা, বা না বলা কোনো কথা।
কিন্তু সুখী মানুষরা নেতিবাচক চিন্তা নিয়ে ঘুমাতে যায় না। তারা প্রতিদিন রাতে কয়েক মিনিট ধরে দিনের ভালো মুহূর্তগুলো মনে করে। হয়তো কোনো কাজ শেষ করার আনন্দ, সুস্বাদু এক কাপ কফি, বা একজন অপরিচিতের মিষ্টি হাসি—যেটাই হোক, তারা ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে নেয়।
৩) প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া
শুধু কতক্ষণ ঘুমাচ্ছেন তা নয়, কখন ঘুমাচ্ছেন তাও গুরুত্বপূর্ণ। সুখী মানুষরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যায় এবং নির্দিষ্ট সময়েই ওঠে, এমনকি ছুটির দিনেও। নিয়মিত রুটিন মেনে চললে শরীর স্বাভাবিক ছন্দ খুঁজে পায়, যা শক্তি, মনোভাব এবং চাপ সামলানোর ক্ষমতাকে উন্নত করে।
৪) ঘুমানোর আগে কিছু শান্তিময় কাজ করা
সুখী মানুষরা ঘুমানোর আগের শেষ এক ঘণ্টা এমন কিছু করে যা সত্যিই তাদের আরাম দেয়—বই পড়া, মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম বা ধীরগতির গান শোনা। এই অভ্যাস শুধু ভালো ঘুমই নিশ্চিত করে না, বরং ব্যস্ত জীবনে এক মুহূর্তের শান্তিও এনে দেয়।
৫) পরের দিনের জন্য কিছু ভালো পরিকল্পনা করা
সুখী দিনগুলো কেবল কাকতালীয়ভাবে আসে না—এগুলো আগের রাতে তৈরি হয়। তাই সুখী মানুষরা ঘুমানোর আগে পরের দিনের জন্য ছোট কিছু পরিকল্পনা করে যা তাদের আনন্দ দেয়—প্রিয় খাবার খাওয়া, পার্কে হাঁটা, বা একটি প্রিয় কাজ করার সময় বের করা। এতে সকালটা একঘেয়ে মনে না হয়ে উচ্ছ্বাস নিয়ে শুরু হয়।
৬) বিরক্তি (বোরিং মুহূর্ত) এড়িয়ে চলা
বেশিরভাগ মানুষ একটু ফাঁকা সময় পেলেই ফোন বের করে নেয় বা টিভি চালিয়ে দেয়। কিন্তু সুখী মানুষরা মাঝে মাঝে বিরক্ত হওয়াকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে। তারা নিজেদের চিন্তার জন্য সময় দেয়, নতুন ধারণা আনার সুযোগ নেয়, এবং মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক বিশ্রাম নিতে দেয়। এতে মনোযোগ, সৃজনশীলতা এবং আসল বিশ্রামের সুযোগ পাওয়া যায়।
৭) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
সুখী হওয়ার জন্য বেশি কিছু পাওয়ার দরকার নেই—বরং যা আছে তা মূল্যায়ন করাই আসল। তাই সুখী মানুষরা প্রতিদিন রাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কেউ ডায়েরিতে লেখে, কেউ মনের মধ্যে চুপচাপ চিন্তা করে, কেউ কাছের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানায়। এই অভ্যাস ধীরে ধীরে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে, এবং জীবন আরও আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে।
৮) নেতিবাচকতা নিয়ে ঘুমাতে না যাওয়া
রাগ, দুঃখ বা চাপ নিয়ে ঘুমালে পরের দিনও খারাপভাবে শুরু হয়। সুখী মানুষরা ঘুমানোর আগে নেতিবাচক চিন্তাগুলো ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে। তারা ক্ষমা করতে শেখে—অন্যদেরকেও, নিজেকেও। তারা মনে করিয়ে দেয় যে আগামীকাল নতুন একটি সুযোগ। এটি কোনো সমস্যাকে উপেক্ষা করা নয়, বরং অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তাকে মন থেকে সরিয়ে শান্তিতে ঘুমানো।
সূত্রঃ https://geediting.com/mal-evening-habits-of-people-who-live-a-happier-life-than-95-of-people/
ইমরান