
ছবি: সংগৃহীত
যখন একজন শিশু প্রয়োজনীয় উষ্ণতা, যত্ন এবং আবেগগত সমর্থন পায় না, তখন সে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখে। তবে তা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে ইতিবাচক ফল বয়ে আনে না।
এমন শৈশবের পরিণতি বিভিন্নভাবে দেখা যায়, তবে কিছু বৈশিষ্ট্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদ্যমান।
আত্মসম্মানবোধের অভাব
ভালোবাসা ও স্নেহের অভাবে বেড়ে ওঠা শিশুরা প্রায়ই মনে করে যে তারা যথেষ্ট ভালো নয়। শৈশবে যদি কেউ মূল্যবান এবং যত্নের যোগ্য বলে অনুভব না করে, তাহলে সে আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগতে পারে। এর ফলে পারফেকশনিজম, মানুষকে খুশি করার প্রবণতা বা ব্যর্থতার ভয়ে চ্যালেঞ্জ থেকে দূরে থাকার মানসিকতা তৈরি হয়। মূলত, এটি এমন একটি বিশ্বাসের জন্ম দেয় যে ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হয়, সহজাতভাবে পাওয়া যায় না।
অন্যের ওপর বিশ্বাস স্থাপনে অসুবিধা
অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তারা বিশ্বাসঘাতকতার ভয়ে ভুগছেন। তারা মনে করেন যে সাবধান থাকা বুদ্ধিমানের কাজ—অন্যের ওপর নির্ভর না করা, নিজেকে সবসময় সুরক্ষিত রাখা। কিন্তু আসল সত্য হলো, তাদের মনে এই বিশ্বাস তৈরি হয় যে কেউ তাদের পাশে থাকবে না বা সত্যিকারের যত্ন নেবে না।
আবেগ প্রকাশে অসুবিধা
যারা ভালোবাসাহীন পরিবেশে বড় হয়, তারা প্রায়ই আবেগ চেপে রাখার অভ্যাস গড়ে তোলে।গবেষণা দেখায়, শৈশবের আবেগগত অবহেলা মস্তিষ্কের সেই অংশকে প্রভাবিত করে যা আবেগ প্রক্রিয়াকরণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। ফলে অনেকেরই নিজের অনুভূতি বোঝা ও অন্যদের কাছে প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
পরিত্যক্ত হওয়ার ভয়
শৈশবে যদি কেউ ভালোবাসা ও স্নেহের অনিশ্চয়তার মধ্যে বড় হয়, তাহলে তারা পরিত্যক্ত হওয়ার গভীর ভয় পোষণ করতে পারে। এমনকি স্থিতিশীল সম্পর্কেও তারা মনে করে, যেকোনো সময় তাদের সঙ্গী চলে যেতে পারে। ফলে তারা অতিরিক্ত সুরক্ষা খোঁজে, বারবার আশ্বস্ত হতে চায়, বা উল্টোভাবে, খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগেই সম্পর্ক শেষ করে দেয়—শুধুমাত্র সম্ভাব্য ব্যথা এড়ানোর জন্য।
ভালোবাসা গ্রহণ করতে অসুবিধা
প্রত্যেকেই ভালোবাসা চায়, তবে যারা শৈশবে তা পায়নি, তাদের জন্য ভালোবাসা গ্রহণ করাটা অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। তারা ভালোবাসা গ্রহণের পরিবর্তে সেটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে, হতাশার জন্য প্রস্তুত থাকে বা নিজেকে অনুপযুক্ত মনে করে। কিন্তু ভালোবাসা কোনো অর্জন নয়—এটি সকলের অধিকার। এটি গ্রহণ করাও শেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আবেগগতভাবে সংযুক্ত হতে না পারা
অনেক সময় তারা মানুষের সঙ্গে থাকলেও একা অনুভব করে। যে মুহূর্তগুলো উষ্ণ ও সংযুক্ত মনে হওয়ার কথা, সেখানে তারা যেন বাইরের একজন দর্শক। তারা অনুভব করে, কিন্তু তা সহজে প্রকাশিত হয় না। কারণ, বছরের পর বছর আবেগ দমন করে রাখার ফলে, সেগুলো সহজে বাইরে আসে না।
অতিরিক্ত স্বাধীন হয়ে ওঠা
স্বাধীনতা সাধারণত ইতিবাচক একটি গুণ, তবে ভালোবাসাহীন শৈশব থেকে আসা স্বাধীনতা প্রায়ই প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া। যখন ছোটবেলায় কারো ওপর নির্ভর করার সুযোগ ছিল না, তখন নিজের ওপর নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা, কিন্তু গ্রহণ করতে না পারা
ভালোবাসা তাদের সবচেয়ে বেশি কাঙ্ক্ষিত জিনিস, কিন্তু এটি ধরে রাখাটাই সবচেয়ে কঠিন হয়ে ওঠে। তারা গভীর সংযোগ, উষ্ণতা ও নিঃশর্ত ভালোবাসা চায়। কিন্তু যখন তা আসে, তখন সন্দেহ, দ্বিধা এবং নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা কাজ করে।
শৈশবে ভালোবাসার অভাব শুধুমাত্র স্মৃতি নয়, এটি আমাদের আত্মপরিচয়, সম্পর্কের ধরন, এবং জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিকে গড়ে তোলে।
শিলা ইসলাম