
ছবি : সংগৃহীত
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ যেন এক নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনের সকাল শুরু হয় নানা ঝামেলায়—সন্তানদের স্কুলে পাঠানো, যানজটের ভোগান্তি, অফিসের কাজের চাপ, মিটিং, ফোন কল এবং শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত এক দিন। দিন শেষে মনে হয়, সময় যেন কোথা দিয়ে উড়ে গেল!
অনেকেই অনুভব করেন যে, জীবন তাদের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, সময় বয়ে যাচ্ছে কিন্তু তারা কিছুই উপভোগ করতে পারছেন না। তবে সুখবর হলো, কিছু গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা রপ্ত করতে পারলে মানসিক চাপ কমিয়ে ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত স্বস্তি নিয়ে জীবনযাপন করা সম্ভব।
সাইকোলজি বলছে, এই ৭টি দক্ষতা আয়ত্ত করতে পারলে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব:
১. ডিজিটাল মাধ্যম থেকে কিছু সময় দূরে থাকুন
আমরা এক ডিজিটাল যুগে বাস করছি, যেখানে সবসময় সংযুক্ত থাকাটা যেন বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে। নতুন তথ্য, গসিপ বা আপডেট মিস হয়ে যাবে—এই ভয় আমাদের সর্বদা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত রাখে।
কিন্তু আমাদের মস্তিষ্কেরও বিশ্রামের প্রয়োজন। কাজের ফাঁকে কিছু সময় ফোন দূরে রাখুন, এতে কর্মদক্ষতা বাড়বে। রাতে ঘুমানোর সময় মোবাইল, ল্যাপটপ বা ট্যাব থেকে দূরে থাকুন। আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন, কাজ তো পরের দিনও থাকবে!
২. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
আমরা প্রায়ই যা নেই, সেটির জন্য মন খারাপ করি, কিন্তু যা আছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকাটা শেখা দরকার। প্রতিদিন ২৫টি জিনিসের তালিকা তৈরি করুন, যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ—যেমন একটি নিরাপদ আশ্রয়, সুস্থ শরীর, পরিবারের ভালোবাসা।
গবেষণায় দেখা গেছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে হতাশা ও মানসিক চাপ কমে, সুখবোধ বৃদ্ধি পায় এবং সামাজিক সম্পর্ক উন্নত হয়। ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কৃতজ্ঞতার ডায়েরি রাখা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৩. ইতিবাচক মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান
আপনার আশপাশের মানুষ আপনার মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। নেতিবাচক মানুষদের কারণে আপনার হতাশা বেড়ে যেতে পারে, তাই ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান।
নিজের পছন্দের কাজ করুন এবং সেখানেই নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হন। এতে আপনি ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন।
৪. অতিরিক্ত চিন্তা করা বন্ধ করুন
আমরা প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় চিন্তায় ডুবে যাই এবং অকারণে দুশ্চিন্তা করি। যেমন কেউ যদি আপনাকে প্রশংসা করে, তখন সেটিকে সাধারণভাবে গ্রহণ করুন, অযথা ভাববেন না যে এর পেছনে কোনো কারণ লুকিয়ে আছে কিনা।
২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগী হলে এবং অতিরিক্ত চিন্তা এড়িয়ে চললে মানসিক চাপ কমে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বাড়ে এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
৫. কাজের পাশাপাশি খেলাধুলা বা বিনোদনের জন্য সময় রাখুন
"All work and no play makes Jack a dull boy"—এটা শুধু প্রবচন নয়, বাস্তবতাও বটে। বর্তমান সমাজে ওয়ার্কহোলিক হওয়াকে অনেক সময় স্বীকৃতি দেওয়া হয়, কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদে বার্নআউটের কারণ হতে পারে।
তাই কাজের পাশাপাশি মজা করার জন্যও সময় রাখুন। এমন কিছু করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়, যেমন সিনেমা দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া বা ভ্রমণ করা।
৬. কম কথা বলুন, বেশি শ্বাস নিন
যখন উদ্বিগ্ন বা রাগান্বিত হন, তখন কিছুক্ষণ গভীর শ্বাস নিন। এটি আপনার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে এবং মানসিক চাপ কমাবে।
প্রতিদিন সকালে মাত্র পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন। এটি আপনাকে সারা দিন প্রশান্ত রাখতে সাহায্য করবে।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কম কথা বলার অভ্যাস আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ায়, ভুল বোঝাবুঝির ঝুঁকি কমায় এবং ব্যক্তিত্বকে আরও দৃঢ় করে তোলে।
৭. নিজের প্রতিক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিন
আপনার মানসিক চাপ কী কারণে বাড়ছে, তা খুঁজে বের করুন এবং যদি সম্ভব হয়, সে বিষয় বা ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলুন। কেউ আপনার মনমতো কাজ না করলে রাগ প্রকাশের পরিবর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
পরিবর্তন নিজেকে দিয়েই শুরু করতে হয়। আপনি যদি নিজের আচরণ বদলান, তাহলে আশেপাশের মানুষও ধীরে ধীরে বদলাবে।
মানসিক চাপ কমানোর জন্য এখনই উদ্যোগ নিন
মানসিক চাপকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ না ভেবে এটি দূর করার উপায় খুঁজুন। আজ থেকেই একটি অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন এবং এর পরিবর্তে ইতিবাচক কিছু করুন।
যেমন একটি গান শুনুন, প্রকৃতির মাঝে হাঁটুন, অথবা একটি গরম পানির স্নান নিন। ছোট ছোট ইতিবাচক পরিবর্তনই জীবনে বড় পরিবর্তন আনে।
সূত্র: https://www.yourtango.com/self/skills-remain-relaxed-into-old-age
মো. মহিউদ্দিন