ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১

ভয়কে জয় করুন এবার সহজেই!

প্রকাশিত: ২১:১২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২১:১৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভয়কে জয় করুন এবার সহজেই!

ছ‌বি: সংগৃহীত

আমরা জন্ম থেকেই কিছু স্বাভাবিক ভয় পাই—হঠাৎ বড় কোনো শব্দ হলে চমকে যাওয়া বা দ্রুত আসা বস্তু থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করা। কিন্তু অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা এই ভয় জয় করতে পারি। যেমন, ছোটবেলায় আতশবাজির শব্দে ভয় পেলেও বড় হতে হতে আমরা এটাকে উপভোগ করতে শিখি।

এই রহস্যের গভীরে যেতে চেয়েছিলেন সায়েন্সবারি ওয়েলকাম সেন্টারের গবেষক ড. সারা মেদেরোস ও তাঁর দল। তাঁরা একদল ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালান, যেখানে ইঁদুরদের ওপর থেকে আসা এক ছায়া তাদের শিকারির আগমনের সংকেত দেয়। প্রথম দিকে ইঁদুররা আতঙ্কিত হয়ে লুকিয়ে পড়ত। কিন্তু ধীরে ধীরে, যখন বুঝতে পারল যে এই ছায়া কোনো ক্ষতি করছে না, তখন তারা পালানোর পরিবর্তে শান্ত থাকতে শিখল।

গবেষণার লক্ষ্য ছিল—কীভাবে মস্তিষ্ক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ভয়ের প্রতিক্রিয়া বদলাতে শেখে। আগের গবেষণায় জানা গিয়েছিল যে ভেন্ট্রোল্যাটারাল জেনিকুলেট নিউক্লিয়াস (vLGN) নামের মস্তিষ্কের একটি অংশ ভয় দমন করতে পারে। এবার বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করলেন, আমাদের দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণকারী মস্তিষ্কের কর্টেক্স বা প্রান্তীয় অংশের মাধ্যমে vLGN ভয় জয় করার কৌশল শিখে নেয়।

গবেষণায় দেখা গেছে:

১। চোখের দেখার জন্য দায়িত্বশীল কর্টেক্স ভয় জয় করতে শেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২। ভয় সংক্রান্ত স্মৃতি মস্তিষ্কের vLGN-এ সংরক্ষিত হয়, কর্টেক্সে নয়।

ড. মেদেরোস বলেন, “যদি কর্টেক্স নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়, তাহলে ইঁদুররা ভয় জয় করতে পারে না। কিন্তু একবার যদি তারা শিখে ফেলে, তখন কর্টেক্স আর প্রয়োজন হয় না।”

এটি প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। সাধারণত, আমরা মনে করি যে স্মৃতি ও শেখার মূল কেন্দ্র হলো কর্টেক্স। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, কর্টেক্স শুধু শেখার কাজটি করে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও সংরক্ষণ করে vLGN। এই সংযোগটি আমাদের মস্তিষ্কের গভীরতম স্বাভাবিক আচরণ বদলে দেওয়ার শক্তি রাখে।

মানসিক স্বাস্থ্যে সম্ভাব্য নতুন দিগন্ত

এই গবেষণা কেবল পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ নয়। এর ফলাফল আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণায় নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে। অনেক মানুষের ভয়ের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হয়—যেমন ভীতিজনিত ব্যাধি (ফোবিয়া), উদ্বেগ, বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD)।

প্রফেসর হোফার বলেন, "আমাদের মস্তিষ্কে একই ধরনের vLGN পথ রয়েছে, যা সম্ভবত মানুষের ভয় সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে। যদি আমরা vLGN বা সংশ্লিষ্ট ক্যানাবিনয়েড সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাহলে হয়তো মানসিক আঘাতজনিত ভয় দূর করার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা সম্ভব হবে।"

গবেষক দল এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করতে চান, যাতে ভবিষ্যতে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য vLGN-কেন্দ্রিক নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করা যায়।

এই গবেষণাটি সায়েন্সবারি ওয়েলকাম সেন্টার, গ্যাটসবি চ্যারিটি ফাউন্ডেশন ও ওয়েলকাম ট্রাস্টের অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছে।

আমরা কি আমাদের ভয় জয় করতে পারি?

এই গবেষণা আমাদের মস্তিষ্কের এক অসাধারণ সক্ষমতার কথা মনে করিয়ে দেয়—আমরা ভয়কে শিখে বদলাতে পারি। একসময় যে জিনিস আতঙ্কের কারণ ছিল, সেটাই একদিন স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কের এই অভিযোজন ক্ষমতাই আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, আর গবেষকরা সেই প্রক্রিয়াকে আরও গভীরভাবে বুঝতে চেয়েছেন। 

হয়তো একদিন আমরা শুধু আতশবাজির শব্দ নয়, আমাদের জীবনের অনেক গভীরতম ভয়ও জয় করতে শিখবো, এই নতুন গবেষণার আলোকে।

তথ্যসূত্রঃ https://www.sciencedaily.com/releases/2025/02/250206142400.htm

মারিয়া

×