
ছবি: সংগৃহীত
অনেকে আছেন যাঁরা বিশেষ পরিশ্রম ছাড়াই সুস্থ থাকেন। তাঁরা সারাক্ষণ জিমে কাটান না, ক্যালোরি নিয়ে অতি চিন্তিত নন, তবুও তাঁরা সুস্থ, সতেজ এবং প্রাণবন্ত থাকেন।
কীভাবে সম্ভব এটা?
সত্যিটা হলো, সুস্থ থাকতে হলে কঠোর ব্যায়াম বা কঠোর ডায়েটের প্রয়োজন নেই। বরং যাঁরা সহজেই ফিট থাকেন, তাঁদের জীবনে কিছু সূক্ষ্ম অভ্যাস থাকে, যা তাঁদের স্বাভাবিকভাবেই সঠিক পথে রাখে।
এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো দীর্ঘমেয়াদে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে। ভালো দিক হলো— যে কেউ এসব অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এখানে রয়েছে তেমনই ৮টি কার্যকর অভ্যাস।
১) তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই বেশি নড়াচড়া করেন
শুধু জিমে যাওয়া মানেই সুস্থ থাকা নয়— প্রতিদিনের জীবনযাপনের মধ্যেও শরীর সচল রাখা জরুরি।
যাঁরা সহজে ফিট থাকেন, তাঁরা নিজেদের অজান্তেই নানাভাবে নড়াচড়া করেন। তাঁরা লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করেন, হাঁটার সুযোগ পেলেই গাড়ির পরিবর্তে হাঁটেন এবং প্রতিদিনের কাজের মধ্যে ছোট ছোটভাবে সক্রিয় থাকার সুযোগ খুঁজে নেন।
২) তাঁরা শুধু পরিপূর্ণতা পর্যন্ত খান, অতিরিক্ত নয়
যখন আপনি বেশি খাবার খাওয়ার পর শুয়ে পড়তে ইচ্ছা করে। কিন্তু খেয়াল করেন, যাঁরা সহজে ফিট থাকেন, তাঁরা কখনোই অতিরিক্ত খাবার খায় না।
একবার আপনি এই অভ্যাসটি চেষ্টা করে দেখেন। খেতে বসে প্লেট শেষ করার বদলে শরীরের অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দিন। এর ফলে নিজেকে অনেক হালকা ও সতেজ লাগতে শুরু করবে, এবং পরবর্তী সময়ে অযথা খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমে যাবে।
সত্যি বলতে, ফিট থাকার অন্যতম সহজ উপায় হলো— নিজের শরীরের সংকেত শোনা।
৩) তাঁরা প্রথমেই পানি পান করেন
কফি, জুস বা খাবারের আগে, যাঁরা সহজে ফিট থাকেন, তাঁরা সাধারণত প্রথমেই পানি পান করেন। শরীরের পানিশূন্যতা ক্ষুধার অনুভূতি বাড়িয়ে দিতে পারে, ফলে অনেক সময় না বুঝেই আমরা খাবার খেয়ে ফেলি, যখন আসলে আমাদের প্রয়োজন শুধু পানি।
যাঁরা সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে পানি পান করেন, তাঁরা অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে ফেলেন, হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখেন এবং সারাদিনের শক্তি বজায় রাখেন।
৪) তাঁরা ব্যায়ামকে বোঝা হিসেবে দেখেন না
অনেকের কাছে ব্যায়াম মানে একটা দায়িত্ব বা বাধ্যবাধকতা। কিন্তু যাঁরা সহজে ফিট থাকেন, তাঁদের জন্য ব্যায়াম মানে উপভোগের কিছু।
তাঁরা এমন কিছু করেন যা তাঁদের ভালো লাগে— নাচ, সাঁতার, হাঁটাহাঁটি, খেলাধুলা, কিংবা কুকুর নিয়ে বাইরে সময় কাটানো। যখন কোনো কিছু উপভোগ করা হয়, তখন সেটি দীর্ঘ সময় চালিয়ে যাওয়া সহজ হয়।
৫) তাঁরা সাধারণত একই ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার খান
অনেকেই ভাবেন ফিট থাকতে হলে প্রতিদিন ক্যালোরি হিসাব করা বা জটিল ডায়েট মেনে চলা দরকার। কিন্তু বাস্তবে, যাঁরা সহজে ফিট থাকেন, তাঁরা সাধারণত একই ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার বারবার খান। এতে খাবার বাছাই করার ঝামেলা কমে, বাজার করা সহজ হয়, এবং স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে।
৬) তাঁরা “অস্বাস্থ্যকর” খাবার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেন না
অনেকে মনে করেন ফিট থাকতে হলে সব ধরনের ফাস্ট ফুড বা মিষ্টি খাবার একেবারে বাদ দিতে হবে। কিন্তু যাঁরা সহজে ফিট থাকেন, তাঁরা আসলে কিছুই পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেন না।
যখন আমরা কোনো খাবারকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করি, তখন সেটার প্রতি আকর্ষণ আরও বেড়ে যায়। ফলে সুযোগ পেলেই বেশি খেয়ে ফেলি। কিন্তু যদি সব খাবার পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়, তাহলে এমন প্রবণতা তৈরি হয় না। মূল বিষয় হলো— নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, নিষেধাজ্ঞা নয়।
৭) তাঁরা পারফেকশন নিয়ে চিন্তা করেন না, বরং ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন
অনেকে মনে করেন ফিট থাকতে হলে সবকিছু নিখুঁতভাবে অনুসরণ করতে হবে— কোনো ব্যায়াম বাদ দেওয়া যাবে না, কখনোই জাংক ফুড খাওয়া যাবে না। কিন্তু যাঁরা সহজে ফিট থাকেন, তাঁরা পারফেকশন নিয়ে চিন্তিত নন।
তাঁরা মাঝে মাঝে ব্যায়াম মিস করেন, মিষ্টি খান, কিংবা বিরতি নেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— তাঁরা কখনো পুরোপুরি হাল ছেড়ে দেন না। একদিন একটু বেশি খাওয়া হলে পরদিন আবার আগের স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে যান, কোনো দোষারোপ বা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের চিন্তা ছাড়াই।
৮) তাঁরা এটিকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অংশ বানিয়ে ফেলেন
ডায়েট ট্রেন্ড আসে-যায়, ব্যায়ামের ধরন বদলায়, কিন্তু যাঁরা সহজে ফিট থাকেন, তাঁরা সাময়িক পরিবর্তনের উপর নির্ভর করেন না— বরং এমন অভ্যাস তৈরি করেন, যা সারা জীবন টিকে থাকে।
তাঁরা নিজেদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেন না, বরং এমন খাবার ও শরীরচর্চার পদ্ধতি খুঁজে নেন, যা তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সাথে মিশে যায়। কারণ ফিট থাকার আসল চাবিকাঠি হলো— স্বল্পমেয়াদি পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার মতো জীবনধারা তৈরি করা।
সুস্থ থাকা কঠিন হতে হবে কেন?
এই পুরো লেখাটা পড়ে যদি কিছু শিখে থাকেন, তাহলে সেটি হলো— সুস্থ থাকা মানে চরম শৃঙ্খলা বা কষ্টকর পরিশ্রম নয়।
যাঁরা সহজে ফিট থাকেন, তাঁরা নিজেদের ওপর কোনো কঠোর নিয়ম চাপিয়ে দেন না। বরং ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে তোলেন, যা তাঁদের জীবনের সাথে মানানসই হয়।
সোর্স: Newsreports
শরিফ