ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

মানসিক শান্তি ফিরে পেতে চান? এই ৭টি অভ্যাস আজই বাদ দিন

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মানসিক শান্তি ফিরে পেতে চান? এই ৭টি অভ্যাস আজই বাদ দিন

ছবি: সংগৃহীত।

অনেকে মনে করেন, সবসময় "হ্যাঁ" বলা, অন্যদের সাহায্য করা এবং সবসময় উপস্থিত থাকা ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য। তবে অন্যদের খুশি করতে গিয়ে যদি নিজের সুখ ও মানসিক শান্তি বিসর্জন দিতে হয়, তাহলে সেটা কতটা স্বাস্থ্যকর?

মানুষকে খুশি করা সদয় আচরণের প্রতীক নয়, বরং এটি আত্মত্যাগ, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনার মঙ্গলকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সত্যিকার অর্থে নিজের জীবনকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইলে এই সাতটি অভ্যাস পরিত্যাগ করা জরুরি।

১) "না" বলতে না পারা

অনেকেই অন্যদের অসন্তুষ্ট না করতে গিয়ে এমন কাজের জন্য রাজি হন, যা তারা সত্যিই করতে চান না। অফিসের বাড়তি দায়িত্ব নেওয়া বা ক্লান্ত থাকার পরও বন্ধুদের পরিকল্পনায় যোগ দেওয়া—এসব ধীরে ধীরে মানসিক ও শারীরিক অবসাদ তৈরি করতে পারে।

প্রতিবার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে "হ্যাঁ" বলার অর্থ হলো, আপনি নিজেকেই "না" বলছেন। তাই সীমানা নির্ধারণ করা শিখুন, কারণ এটি স্বার্থপরতা নয়, বরং আত্মসম্মানের প্রতীক।

২) অহেতুক দুঃখপ্রকাশ করা

অনেকেই অভ্যাসবশত সবকিছুর জন্য ক্ষমা চান—যেমন, কেউ যদি পথ চলতে ধাক্কা দেয়, তবুও তারা বলে ওঠেন, "ওহ, দুঃখিত!"

এভাবে অন্যের ভুলের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিলে আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই অপ্রয়োজনীয়ভাবে ক্ষমা চাওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসুন এবং আত্মমর্যাদাকে গুরুত্ব দিন।

৩) অন্যের অনুমোদনের ওপর আত্মমূল্যায়ন নির্ভরশীল করা

যদি আপনি নিজের মূল্যবোধকে অন্যদের মতামতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলেন, তাহলে সেটা আপনাকে চরম উদ্বেগের মধ্যে ফেলতে পারে।

বাস্তবতা হলো, আত্মবিশ্বাস যদি ভেতর থেকে না আসে, তাহলে বাইরের স্বীকৃতি কখনোই যথেষ্ট মনে হবে না। তাই নিজেকে বিশ্বাস করুন এবং নিজের শক্তি সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

৪) সংঘাত এড়িয়ে যাওয়া

অনেকে মনে করেন, নিজের মত প্রকাশ করলে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে, তাই তারা নীরব থাকেন বা অন্যদের সীমা লঙ্ঘনও মেনে নেন।

কিন্তু বাস্তবে, সংঘাত এড়িয়ে যাওয়া সমস্যার সমাধান নয়। বরং এটি ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি করে। সঠিক সময়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করাই আত্মসম্মানের লক্ষণ।

৫) সবসময় অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া

নিজের চাহিদাকে উপেক্ষা করে অন্যদের প্রয়োজনে সবসময় এগিয়ে যাওয়া শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ত্যাগ স্বীকার করলে মানসিক চাপ বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হয়।

নিজের যত্ন নেওয়া কখনোই স্বার্থপরতা নয়। এটি সুস্থ ও সুখী থাকার অন্যতম শর্ত।

৬) অন্যের আবেগের জন্য নিজেকে দায়ী ভাবা

অনেকেই মনে করেন, আশপাশের মানুষের আবেগ ও মনোভাব নিয়ন্ত্রণ করাই তাদের দায়িত্ব। তবে এটি একটি ভুল ধারণা।

প্রত্যেকের অনুভূতি তাদের নিজস্ব, এবং সেগুলোর জন্য অন্য কাউকে দায়ী করা উচিত নয়। সহানুভূতিশীল হওয়া ভালো, তবে অন্যের নেতিবাচক আবেগের ভার নিজের কাঁধে নেবেন না।

৭) নিজেকে পরিবর্তন করা যাতে অন্যদের ভালো লাগে

সবার সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য নিজের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করা অত্যন্ত ক্লান্তিকর।

যারা সত্যিই আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী, তারা আপনাকে যেমন আছেন তেমনই গ্রহণ করবেন। তাই নিজেকে বদলানোর চেয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের প্রকৃত সত্তাকে তুলে ধরুন।

মানুষ-খুশি করার অভ্যাস ত্যাগ করা সহজ নয়। বছরের পর বছর অন্যদের চাওয়া-পাওয়া গুরুত্ব দেওয়ার পর নিজের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রথমে অস্বস্তিকর লাগতে পারে।

কিন্তু মনে রাখবেন, সবাইকে খুশি রাখা আপনার দায়িত্ব নয়। সীমানা নির্ধারণ করুন, নিজের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন এবং নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন। কারণ, সত্যিকার সুখ তখনই আসে, যখন আপনি নিজের সঙ্গে আপস না করেই জীবনযাপন করেন।

সূত্র: https://newsreports.com/dan-if-you-really-want-to-take-control-of-your-life-say-goodbye-to-these-people-pleasing-behaviors/

সায়মা ইসলাম

×