ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

যেকারণে ব্রেন নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলতে পারে: নিউরোসাইন্সের গবেষণা

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যেকারণে ব্রেন নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলতে পারে: নিউরোসাইন্সের গবেষণা

ছবি:সংগৃহীত

নিউরোসাইন্সের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কে একটি বিপজ্জনক প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে, যা "স্নাইফিং" বা মস্তিষ্কের কোষ নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলার মতো কাজ করে। এই প্রক্রিয়াটি অটোফ্যাগি (autophagy) নামে পরিচিত, যা শরীরের কোষের অভ্যন্তরীণ মেরামতের এবং দূষিত বা ক্ষতিগ্রস্ত উপাদান অপসারণের প্রক্রিয়া। তবে যখন ঘুমের অভাব হয়, এই প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে এবং মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

মস্তিষ্কে ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে পরিষ্কার এবং পুনর্গঠন করতে অটোফ্যাগি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তবে ঘুমের অভাবে এই প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। এতে কোষগুলো সঠিকভাবে পুনর্গঠন হতে পারে না এবং এই কোষগুলো ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, যেগুলো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।

ঘুমের সময়, বিশেষত গভীর ঘুমের সময়, মস্তিষ্ক তার কোষগুলো পরিষ্কার করার জন্য কাজ করে। এটি মস্তিষ্কের প্রোটিনগুলো সঠিকভাবে পরিস্কার করে এবং স্নায়ু কোষগুলোকে পুনঃস্থাপন করে। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম না হলে, এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং ক্ষতিকর প্রোটিনগুলি জমা হতে শুরু করতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগের কারণ হতে পারে।

ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কে সেল ডেথ বা কোষের ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। একে "স্বচ্ছতা সংকট" বা "ক্লিয়ারিং ক্রাইসিস" বলা যেতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলি নিজেই নিজেদের খাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে (অটোফ্যাগি)। এতে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিভ্রষ্টতা, অস্থিরতা, মানসিক অবসাদ এবং অন্যান্য স্নায়ুবিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

গবেষণাগুলি দেখায় যে ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের ক্ষতিকর প্রক্রিয়া এবং সেল ডেথ বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। মস্তিষ্কের কোষের সঠিক পুনঃস্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ না হলে তা ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়। বিশেষ করে, ঘুমের সময় মস্তিষ্কের যেসব ক্ষতিকর প্রোটিন তৈরি হয়, সেগুলি সঠিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয় না এবং বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

ঘুমের অভাবের ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো নিজেরাই নিজের ক্ষতি করতে শুরু করতে পারে, যাকে নিউরোসাইন্সে "অটোফ্যাগিক সেল ডেথ" বলা হয়। তাই পর্যাপ্ত এবং গুণগত মানের ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম। ঘুমের অভাব দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে, এটি স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

×