
ছবি: সংগৃহীত
বাড়ির বড়রা প্রায়ই ছোটদের ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন। অনেকেই জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য ভোরে ঘুম থেকে ওঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ভোরে ওঠা এবং সাফল্যের মধ্যে আসলেই কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি? এ বিষয়ে গবেষণাগুলো কী বলছে, তা দেখা যাক।
গবেষণার ফলাফল
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (UCL) একটি গবেষণায় ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত প্রায় এক ডজন জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে ৪৯,২১৮ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন। গবেষণার ফলাফল, যা ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল মেন্টাল হেলথে প্রকাশিত হয়েছে, জানায় যে যেসব মানুষ তাদের দিন খুব সকালে শুরু করেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত থাকে। তারা বেশি সন্তুষ্টি, সুখ এবং কম চাপ অনুভব করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সকালে ঘুম থেকে ওঠা আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দেখা গেছে, মধ্যরাতের দিকে মানুষ সবচেয়ে খারাপ অনুভব করেন, আর সকালে তুলনামূলকভাবে ভালো থাকেন। তবে, মানসিক স্বাস্থ্যের ওঠানামা এবং একাকীত্বের বিষয়টি সপ্তাহের বিভিন্ন সময় জুড়েই বিদ্যমান থাকে।
গবেষণার প্রধান গবেষক ও ইউসিএলের পরিসংখ্যান এবং মহামারীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেইফেই বু বলেন, "আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, সময়ের সাথে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুখ ওঠানামা করে। তবে গড়ে, মানুষ খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় সবচেয়ে ভালো বোধ করেন এবং রাতে সবচেয়ে খারাপ।"
গবেষণার সীমাবদ্ধতা
ড. বু বলেন, যদিও সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং ভালো মেজাজ, সন্তুষ্টি ও আত্মবিশ্বাসের মধ্যে শক্তিশালী যোগসূত্র পাওয়া গেছে, তবুও আরও গবেষণা প্রয়োজন। তিনি জানান, এই গবেষণার ফলাফল প্রতিলিপি করাও জরুরি, কারণ সব ধরনের গবেষণার মতোই এটিরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, সুখ হলো একটি ইতিবাচক অবস্থা, যা সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। এর মধ্যে জীবনের মান, উদ্দেশ্য এবং অর্থ অন্তর্ভুক্ত।
কখন কাজ করাই সবচেয়ে উপযুক্ত?
গবেষণাগুলোর ফলাফল থেকে এটা বোঝা যায় যে, সকালে ঘুম থেকে ওঠা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং প্রফুল্লতা বাড়াতে সহায়তা করে। তবে, সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে দেরি সকালই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কারণ, এই সময় একজন মানুষের মেজাজ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে এবং তারা চাপমুক্ত থেকে কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বিকেলের দিকে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে শরীরের ওপর চাপও হ্রাস পায়। তাই, গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাঁরা সমস্যার সমাধান করেন, তাঁদের জীবনের রুটিনে পরিবর্তন আনার তেমন প্রয়োজন নেই। তবে দিনের শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে ব্যক্তিগত সুখ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যোগসূত্রের বিষয়টি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। তবে, প্রতিটি মানুষের জীবনের ধরন এবং কাজের ধরন আলাদা। তাই, কাজ এবং সমস্যার সমাধানের জন্য সঠিক সময় নির্ধারণ করা উচিত নিজের সুবিধা এবং মেজাজ অনুযায়ী।
সায়মা ইসলাম