
ছবি: সংগৃহীত
অনেকেই একটি দীর্ঘ ও সুখী জীবনের গোপন রহস্য জানতে চান। জীবনে সুখ ও সফলতা অর্জন সবারই কামনা। কিন্তু এই রহস্য কোনও গোপন রহস্য নয়। এটি হলো ভালো অভ্যাস।
সুখ এবং সফলতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো সন্ধ্যা। রাতে শোয়ার আগে আপনি যা করেন তা আপনার মনোভাব, স্বাস্থ্য, এমনকি সময়ের সাথে সাথে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও প্রভাবিত করতে পারে। বিজ্ঞানে এর পক্ষে প্রমাণও রয়েছে। ছোট ছোট সচেতন অভ্যাসগুলো দীর্ঘমেয়াদী বড় পার্থক্য আনতে পারে।
তবে আপনাকে এরজন্য পুরো জীবনযাত্রা বদলাতে হবে না। শুধু আপনার রাতের রুটিনে কয়েকটি সাধারণ পরিবর্তন আনলেই হবে। আপনি ভালো অনুভব করবেন, স্পষ্টভাবে চিন্তা করবেন এবং হয়তো আপনার আয়ুও বাড়াতে পারেন এই অভ্যাসগুলোর মাধ্যমে।
চলুন জেনে নিই মনোবিজ্ঞানের মতে ১০টি সন্ধ্যাকালীন অভ্যাসের কথা যেগুলো দীর্ঘ ও সুখী জীবনের মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়-
১) রাতের রুটিনে পরিবর্তন আনুন
অনেকেই দিনের শেষে মোবাইল চালানোয় বা টেলিভিশন দেখে সময় কাটায়। তবে আপনি যদি একটি দীর্ঘ ও সুখী জীবন চান তাহলে আপনার রাতের রুটিন সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া দরকার। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, একটি যথাযথ রাত্রিকালীন অভ্যাস তৈরি করলে ক্লান্তি ও অবসাদ কমে, ভালো ঘুম হয় এবং সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায়। এর একটি সহজ পদ্ধতি হলো মোবাইল বা টেলিভিশনের পর্দায় সময় কাটানোর পরিবর্তে বই পড়া, ডায়েরি লেখার অনুশীলনের অভ্যাস তৈরি করা।
২) পর্যাপ্ত ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন
অনেকেই পাঁচ বা ছয় ঘণ্টা ঘুমকে যথেষ্ট মনে করেন। রাত জেগে টেলিভিশন দেখেন আর সকালে প্রয়োজনের তাগিদে তাড়াতাড়ি উঠে যান। ঘুমভাব কাটাতে কফি বা চা পান করেন। কিন্তু একসময় এটি তাদের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলতে ঘুমানোর সময় নির্ধারণ করা এবং বিছানায় যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করার অভ্যাস করা প্রয়োজন।
৩) চাপমুক্ত হোন
অনেকেই দিনের পর দিন মানসিক চাপ নিয়ে চলতে থাকেন, যা তাদেরকে কার্যকরী করে তোলে না বরং আরও ক্লান্ত করে। তাই রাতে বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার আগে চাপমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন। এটি করতে পারেন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, হালকা হাঁটাহাঁটি বা দুশ্চিন্তাগুলো কাগজের পাতায় লেখার মাধ্যমে।
৪) কৃতজ্ঞতার চর্চা করুন
রাতে আপনার সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ভালো ঘটনা মনে করুন। এমনকি তা যদি ছোট কিছুও হয়। যেমন- এক কাপ মজার কফি, কারো হাসিমুখ বা সুন্দর একটি সূর্যাস্ত। জীবন নিয়ে কৃতজ্ঞতাসম্পন্ন মনোভাব পোষণ করুন।
৫) সফল ও উৎপাদনশীল হতে চাওয়ার চাপ কমান
আপনাকে মনে রাখতে হবে, জীবন একটি প্রক্রিয়া। এটি কোনও গন্তব্য নয়, একটি দিশা। প্রতিদিনের জীবনে উৎপাদনশীল হওয়ার জন্য অতিরিক্ত চাপ না নেওয়ার অভ্যাস করুন।
৬) স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন
মোবাইল, টেলিভিশনে বিশেষ করে রাতে শোয়ার আগে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম আপনার মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে এবং ঘুমকে বাধা দেয়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে বই পড়ার মত অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৭) প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটান
অনেকেই সারাদিন কাজের মাঝে থাকেন এবং সন্ধ্যায় ও রাতে একা সময় কাটান। তা না করে পরিবার, প্রিয়জনদের সাথে বেশি সময় কাটানোর অভ্যাস করুন।
৮) মেনে নেওয়ার মনোভাব বাড়ান
ব্যর্থতা, অপ্রাপ্তি মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে আপনার জন্য তা সুফলদায়ক হবে। সবসময় ‘আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি, যা পেয়েছি তা যথেষ্ট’ এমন মনোভাব পোষণ করুন।
৯) অবসর সময় কাটান
যখন কোন কাজ করার থাকেনা, অবসর থাকেন তখন অনেকেই ফোন বা টেলিভিশনের দিকে হাত বাড়ান। কিন্তু অবসর সময় বিরক্তিকর হলেও তা মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় এবং চিন্তা করার সুযোগ দেয়। তাই অবসর সময় কাটান মাঝেমধ্যে।
১০) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চিন্তা করুন
অনেকেই ছোট ছোট সমস্যায় আটকে যান। সেগুলোকেই আসল সমস্যা হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু আপনাকে জীবনের আসল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। ছোট সমস্যাকে বড় করে দেখার অভ্যাস বদলাতে হবে।
এমটি