ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

আপনি কি সুখী জীবন চান, জেনে নিন ৭টি সহজ উপায়

প্রকাশিত: ২২:১০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপনি কি সুখী জীবন চান, জেনে নিন ৭টি সহজ উপায়

ছবি : সংগৃহীত

সুখকে অনেক সময় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকা এক বড় স্বপ্ন হিসেবে মনে করা হয়। আমরা সেটাকে পেতে দৌড়াই, কিন্তু মনে হয় যত বেশি দৌড়াই, ততই তা দূরে সরে যায়।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, সুখ এত জটিল নয়। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করার পর—ব্যবসায়িক সাফল্যের উচ্চতা ও দেউলিয়া হওয়ার ভয়াবহতা দুটোই দেখে—আমি উপলব্ধি করেছি যে প্রকৃত সুখ আসে ছোট ছোট অভ্যাস থেকে।

সুখী জীবনযাপনের জন্য এখানে সাতটি সহজ উপায় তুলে ধরা হলো।

১. প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস জীবন বদলে দিতে পারে। প্রতিদিন সকালে কয়েক মিনিট সময় নিয়ে এমন কিছু বিষয় ভাবুন, যা আপনাকে কৃতজ্ঞ করে তুলেছে।

এগুলো হতে পারে বড় কিছু (যেমন পরিবার ও সুস্বাস্থ্য) বা ছোট কিছু (যেমন একটি দারুণ কাপ কফি বা মনোরম সূর্যাস্ত)। ইতিবাচক বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া ধীরে ধীরে আপনার মানসিকতা বদলে দেবে।

"আমি যত বেশি কৃতজ্ঞ থাকি, তত বেশি সৌন্দর্য দেখি।" – মেরি ডেভিস

২. সচেতনতা অনুশীলন করুন

মাইন্ডফুলনেস বা সচেতনতা মানে হলো পুরোপুরি বর্তমান মুহূর্তে থাকা। এটি হতে পারে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখা বা খাবার খাওয়ার সময় প্রতিটি কণাকে উপভোগ করা।

যখন আমি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ব্যস্ত ছিলাম, তখন প্রতিদিন কয়েক মিনিটের গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস আমাকে মানসিকভাবে স্থির থাকতে সাহায্য করেছিল।

এটি খুব সাধারণ একটি অভ্যাস হলেও মানসিক চাপ কমাতে আশ্চর্যজনকভাবে কার্যকর।

৩. ইতিবাচক মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান

আমরা সাধারণত যাদের সঙ্গে সময় কাটাই, তাদের মতো হয়ে যাই। তাই সঙ্গীদের বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

যখন আমি আমার স্টার্টআপ গড়ে তুলছিলাম, তখন নেতিবাচক ও সন্দেহপ্রবণ মানুষদের সঙ্গে থাকায় আমার মানসিকতা প্রভাবিত হচ্ছিল।

কিন্তু যখন আমি আশাবাদী ও অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষদের সঙ্গ নিতে শুরু করলাম, তখন শুধু আমার মনের অবস্থাই বদলায়নি, বরং আমার ব্যবসার অবস্থাও উন্নতি হয়েছে।

এমন বন্ধু ও মেন্টর খুঁজে নিন, যারা আপনাকে উৎসাহিত করবে ও আপনার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলবে।

৪. দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলুন

আমার উদ্যোক্তা জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল, জীবনে দেওয়া এবং সহযোগিতার গুরুত্ব। এটি হতে পারে পরামর্শ, সময় বা সহায়তা—যেকোনো কিছু।

মানুষকে সাহায্য করা শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং নিজের জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্থানীয় কোনো স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে অংশ নিন, প্রতিবেশীকে সাহায্য করুন বা শুধু কারও কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

"আমরা যা পাই তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি, কিন্তু আমরা যা দিই তা দিয়ে জীবন গড়ে তুলি।" – উইনস্টন চার্চিল

৫. শরীর সচল রাখুন

ব্যবসা পরিচালনার সময় দীর্ঘক্ষণ বসে কাটানোর ফলে বুঝতে পারলাম, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

হালকা দৌড়ানো, নাচা বা জিমে যাওয়া—যে কোনো ধরনের শারীরিক কার্যক্রম আপনার শরীরে এন্ডোরফিন (সুখের হরমোন) তৈরি করে ও মানসিক চাপ কমায়।

আপনার ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যবান ও সুখী থাকার জন্য এটি একটি সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়।

৬. অর্থবহ লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

কোনো কিছু অর্জনের লক্ষ্য থাকা জীবনের দিকনির্দেশনা দেয়।

আমার উদ্যোক্তা জীবন শেষ হওয়ার পর যখন আমি লেখালেখি শুরু করি, তখন প্রতিসপ্তাহে একটি নিবন্ধ প্রকাশের ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম।

লক্ষ্য ছোট হলেও যদি তা আপনার জন্য অর্থবহ হয়, তাহলে প্রতিদিন সকালে জেগে ওঠার অনুপ্রেরণা পাবেন।

৭. ছোট ছোট জয় উদযাপন করুন

জীবন আসলে ছোট ছোট সাফল্যের সমষ্টি—একটি কঠিন কাজ শেষ করা, এক সপ্তাহের জন্য ব্যায়াম করা বা সময়মতো ঘুম থেকে ওঠা।

এই ছোট অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দিন ও উদযাপন করুন। এগুলো স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

একটি ব্যক্তিগত উপলব্ধি

যখন আমি ফিরে দেখি—একটি ছোট গ্যারেজ অফিস থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারীদের সামনে পিচ করা, পরে ফুল-টাইম লেখক হওয়া পর্যন্ত—তখন বুঝতে পারি, সত্যিকারের সুখ শুধু বড় অর্জনের মধ্যে ছিল না। বরং এটি ছিল প্রতিদিনের ছোট ছোট ইতিবাচক অভ্যাস ও কৃতজ্ঞতার মুহূর্তগুলোতে।

তাই আমি আপনাকে একটি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি: এই সাতটি উপায়ের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিন এবং এক সপ্তাহ ধরে তা অনুশীলন করুন। হতে পারে এটি একটি কৃতজ্ঞতার জার্নাল শুরু করা, ইতিবাচক বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো বা ছোট জয় উদযাপন করা।

সুখ কোনো দূরের কল্পনা নয়—এটি ছোট ছোট ইতিবাচক কাজের সমষ্টি, যা একসময় জীবনে গভীর সন্তুষ্টি নিয়ে আসে।

সুতরাং, আপনার জীবনকে দারুণ কিছুতে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা আপনার হাতেই। প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়ে যান, কৌতূহলী থাকুন এবং আপনার মুখে হাসি ফোটায় এমন ছোট জিনিসগুলোর প্রশংসা করতে ভুলবেন না।

মো. মহিউদ্দিন

×