ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১

ঠান্ডা হৃদয়ের ও আবেগহীন মানুষের সংকেত বুঝবেন কীভাবে?

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০০:৫৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঠান্ডা হৃদয়ের ও আবেগহীন মানুষের সংকেত বুঝবেন কীভাবে?

ছবি : সংগৃহীত

আমরা সবাই এমন কিছু মানুষকে চিনি, যাদের উষ্ণ ব্যক্তিত্ব মুহূর্তেই হৃদয়ে ছুঁয়ে যায়—তাদের হাসি, কথোপকথনের সময় সামনে ঝুঁকে পড়া, বা চোখের কোণে হাসির ছোট্ট রেখা দেখে বোঝা যায় তারা আন্তরিক।

অন্যদিকে, কিছু মানুষ থাকেন, যারা সবসময় দূরত্ব বজায় রাখেন, আবেগগতভাবে বন্ধ থাকেন এবং পড়তে কঠিন মনে হয়।

দেহভাষা বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিছু সূক্ষ্ম সংকেত থেকে সহজেই বোঝা যায় একজন ব্যক্তি আবেগগতভাবে উপলব্ধ কি না।

আপনি কি কখনো কারও সঙ্গে কথা বলে মনে করেছেন, "কিছু একটা ঠিক মনে হচ্ছে না?" সম্ভবত, আপনি অবচেতনভাবেই কিছু দেহভাষার সংকেত ধরে ফেলেছেন।

আমার ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে একাধিকবার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে।

সময়ের সঙ্গে আমি শিখেছি নিজের অনুভূতিকে বিশ্বাস করতে, পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে এই সংকেতগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বোঝার চেষ্টা করেছি।

এখানে আমি আপনাদের জন্য সাতটি গুরুত্বপূর্ণ দেহভাষার সংকেত তুলে ধরছি, যা দেখে বুঝতে পারবেন যে কেউ আবেগগতভাবে ঠান্ডা ও বিচ্ছিন্ন কি না।

১. সীমিত মুখের অভিব্যক্তি

কথোপকথনের সময় কারও মুখের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, আমরা ভ্রু তোলা, মৃদু হাসি, বা উদ্বেগের সামান্য ছাপ প্রত্যাশা করি।

কিন্তু যদি কেউ সবসময় নিরাবেগ থাকে, মুখে কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে তা আবেগগত দূরত্বের ইঙ্গিত দিতে পারে।

আমি একবার এমন এক সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করেছি, যিনি কখনোই আবেগ প্রকাশ করতেন না—হাসির মুহূর্তেও তিনি পাথরের মতো স্থির থাকতেন। গবেষণা অনুযায়ী, মুখের অভিব্যক্তি ও আবেগগত প্রক্রিয়ার মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

২. চোখে চোখ না রাখা

চোখের সংযোগ বিশ্বাস ও সম্পর্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কিন্তু কেউ যদি বারবার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে, বা ফোনে ব্যস্ত থাকে, তাহলে এটি একধরনের মানসিক বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

অনেক সময় এটি সামাজিক উদ্বেগ বা সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণেও হতে পারে, তবে কেউ যদি দীর্ঘ সময় ধরে চোখের সংযোগ এড়িয়ে চলে, তাহলে এটি তার অনাগ্রহ বা সহানুভূতির অভাব নির্দেশ করতে পারে।

৩. কঠোর ভঙ্গি ও অনমনীয় অঙ্গভঙ্গি

যারা আবেগগতভাবে উন্মুক্ত, তারা সাধারণত স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে শরীরের ভাষা ব্যবহার করেন।

কিন্তু যদি কেউ সর্বদা শক্তভাবে বসে থাকে, হাত-পা শক্ত করে রাখে, বা শরীরকে নড়াচড়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখে, তবে এটি একটি সুরক্ষা দেয়ালের মতো কাজ করতে পারে।

মনোবিজ্ঞান গবেষণায় দেখা গেছে, খোলা দেহভঙ্গি সংযোগের ইঙ্গিত দেয়, আর কঠোর অঙ্গভঙ্গি মানসিক দূরত্ব তৈরি করে।

৪. হাতের অঙ্গভঙ্গির অভাব বা অবজ্ঞাসূচক অঙ্গভঙ্গি

কথোপকথনের সময় হাতের ইশারা, মাথা নাড়ানো ইত্যাদি জড়িত থাকে, যা আন্তরিকতার পরিচয় বহন করে।

কিন্তু কেউ যদি খুব কম অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করে, বা চোখ ঘুরিয়ে ফেলে, কাঁধ ঝাঁকিয়ে দেয়, তবে তা বিচ্ছিন্নতার ইঙ্গিত দিতে পারে।

যেমন, আমি একবার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলছিলাম, আর আমার এক সহকর্মী কেবল কাঁধ ঝাঁকাচ্ছিলেন—এটি ছিল একধরনের অবজ্ঞার প্রকাশ।

৫. ব্যক্তিগত পরিসীমার অসচেতনতা

সাধারণত আমরা ব্যক্তিগত পরিসীমা রক্ষা করি। ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা মাঝে মাঝে তা লঙ্ঘন করতে পারে, তবে সংবেদনশীল বা বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিরা সবসময় দূরত্ব বজায় রাখেন।

কিছু ক্ষেত্রে, তারা ঠিক উল্টোটাও করতে পারেন—অনর্থক খুব কাছাকাছি চলে আসেন, কিন্তু তাতে কোনো উষ্ণতা থাকে না।

এটি দেখায় যে তারা আবেগগত সংযোগ গড়ে তুলতে আগ্রহী নয়।

৬. আবেগহীন কণ্ঠস্বর

একটি কথোপকথনে আবেগ কেবল দেহভাষায় নয়, কণ্ঠস্বরেও প্রকাশ পায়।

কিন্তু যদি কেউ সর্বদা একঘেয়ে স্বরে কথা বলে, উচ্ছ্বাস বা সহানুভূতির অভাব দেখায়, তাহলে তা মানসিক দূরত্বের সংকেত হতে পারে।

গবেষণা বলে, আবেগপ্রবণ মানুষরা কথোপকথনে স্বাভাবিকভাবে কণ্ঠস্বরের ওঠানামা করেন।

৭. সূক্ষ্মভাবে দূরত্ব তৈরি করা

কিছু মানুষ কথা বলার সময় অজান্তেই শরীরের ভঙ্গি এমনভাবে সেট করেন, যেন তারা দূরে সরে যেতে চাচ্ছেন।

তারা হয়তো বসার সময় শরীরকে পাশ ফিরিয়ে নেন, দরজার দিকে পা রাখেন, বা টেবিলে ফোন, ব্যাগ বা ল্যাপটপ রেখে দূরত্ব সৃষ্টি করেন।

আমি নিজেও অনেক মিটিংয়ে দেখেছি, কিছু ব্যক্তি সচেতনভাবে বসার মুহূর্তেই সামনে একটি ফাইল বা ব্যাগ রাখেন, যেন এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল।

সর্বশেষ, এমন সংকেত দেখলেই কাউকে ঠান্ডা হৃদয়ের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।

মানুষের আচরণ জটিল, এবং অনেকে ব্যক্তিগত চাপের কারণে এমন আচরণ করে।

তবে যদি কেউ বারবার একই দেহভাষার সংকেত দেখায়—যেমন মুখাবয়বের অভিব্যক্তির অভাব, চোখের সংযোগ এড়ানো, কঠোর শরীরের ভঙ্গি, অবজ্ঞাসূচক অঙ্গভঙ্গি, ব্যক্তিগত পরিসীমার প্রতি অসচেতনতা, আবেগহীন কণ্ঠস্বর, এবং দূরত্ব তৈরি করা—তাহলে বুঝতে হবে যে তারা আবেগগতভাবে অনুপলব্ধ।

আমার পরামর্শ: এসব সংকেত বোঝার চেষ্টা করুন, নিজের অনুভূতিকে বিশ্বাস করুন, এবং প্রয়োজনে নিরাপদ ও উপযুক্ত উপায়ে খোলাখুলি কথা বলুন।

কিছুক্ষেত্রে, আন্তরিক আলোচনা মানসিক দেয়াল ভাঙতে পারে।

আর কিছু ক্ষেত্রে, দূরত্ব বজায় রাখাই ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।

অবশেষে, এই দেহভাষার সংকেত সম্পর্কে সচেতন হওয়া আপনাকে আরও স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক তৈরি ও রক্ষা করতে সাহায্য করবে।

মো. মহিউদ্দিন

×