![কর্মস্থলে চ্যালেঞ্জকে সুযোগে রূপান্তরের ৩টি উপায় কর্মস্থলে চ্যালেঞ্জকে সুযোগে রূপান্তরের ৩টি উপায়](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/3-99-2502112012.jpg)
সংগৃহীত
নেতৃত্ব কখনোই সহজ ছিল না, কিন্তু আজকের বিশ্বে এটি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল পরিবেশ এবং সামাজিক বিভাজনের কারণে শুধু নিয়ম মেনে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া আর যথেষ্ট নয়। কর্মীরা এখন এমন নেতাদের খুঁজছে যারা শুধু নির্দেশ দেন না, বরং খোলা মনে শুনতে পারেন, স্বচ্ছতা বজায় রাখেন, এবং তাদের কল্যাণের প্রতি আন্তরিকভাবে যত্নশীল।
নেতৃত্ব মানে এখন শুধুই সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলা, বিশ্বাস তৈরি করা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। তাহলে, যখন পথ অনিশ্চিত, তখন একজন নেতা কীভাবে সামনে এগিয়ে যাবেন? অভিজ্ঞ ও সফল নেতাদের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা তিনটি কার্যকর উপায় এখানে তুলে ধরা হলো, যা আপনাকে কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে পরিণত করতে সাহায্য করবে।
১. স্বচ্ছতা ও কৌতূহলের মাধ্যমে আস্থা তৈরি করুন
বর্তমান সময়ে গণহারে ছাঁটাই, অফিসে ফেরার কঠোর নির্দেশনা এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাসের সংকট নেতাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মীরা এমন নেতাদের প্রতি আস্থা রাখেন যারা সৎ, স্বচ্ছ এবং কৌতূহলী।
বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি সংস্থা এইচপিই-এর বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা আইশা ওয়াশিংটন বলেন, “যে নেতারা কৌতূহলের সঙ্গে আলোচনা করেন, তারা গভীরতর অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করেন।
এর মানে হলো প্রশ্ন করা, সব দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি খোলা মন রাখা এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া।” এক জরিপে দেখা গেছে, যেসব নেতারা স্পষ্টভাবে যোগাযোগ করেন, অনুপ্রেরণামূলক ভবিষ্যৎ দেখান এবং পরিবর্তনকে সমর্থন করেন, তাদের প্রতি ৯৫% কর্মী আস্থা রাখেন।
আস্থা তৈরির জন্য নেতাদের উন্মুক্ত ও বাস্তববাদী হতে হবে। মোমেন্টাম পিপলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যারোলিন মুর বলেন, “সবকিছু জানা সম্ভব নয়, তবে সততা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে কর্মীদের আস্থা অর্জন করা সম্ভব।” নেতাদের উচিত কঠিন প্রশ্ন করা-কে আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে? কিভাবে প্রতিটি কর্মীর মতামতকে মূল্যায়ন করা যায়?
ভয় না দেখিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখলে দল আরও ঐক্যবদ্ধ হয় এবং তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। সফল নেতারা খোলামেলা আলোচনা করেন, তথ্য ভাগ করে নেন এবং কর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
২. সংযোগ ও সহমর্মিতার সুযোগ তৈরি করুন
কর্মক্ষেত্রে সুস্থ সংস্কৃতি গড়তে অফিসে প্রত্যাবর্তন দরকার হতে পারে, কিন্তু নেতাদের তা যথাযথভাবে উপস্থাপন করা উচিত। যদি এটি শুধুই উৎপাদনশীলতার অজুহাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে কর্মীরা নেতাদের ওপর আস্থা হারাতে পারে।
ডিএইচ-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক বার্জার বলেন, “কঠোর অফিস নীতিগুলি কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও অনাগ্রহ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যদি সময়ের সদ্ব্যবহার না করা হয়।” তবে অনেক কর্মী নমনীয়তা ও উদ্দেশ্যপূর্ণ সংযোগের সুযোগ পেলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অফিসে আসতে আগ্রহী হন।
নেতাদের উচিত কর্মীদের জন্য অর্থবহ সংযোগের সুযোগ তৈরি করা। কিছু কার্যকর পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে:
উদ্দেশ্যপূর্ণ অফিস দিন: সরাসরি সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দলীয় বৈঠক বা আন্তঃবিভাগীয় কর্মশালার আয়োজন করা।
অর্থবহ রিট্রিট: বছরে এক বা দুইবার কর্মীদের নিয়ে দলবদ্ধ আলোচনা ও টিম বিল্ডিংয়ের পরিকল্পনা করা।
অভিজ্ঞতার উন্নয়নে বিনিয়োগ: আকর্ষণীয় ও সুসংগঠিত ইভেন্টের আয়োজন করা যা কর্মীদের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করবে।
প্রতিক্রিয়া ও উন্নয়ন: কর্মীদের মতামত সংগ্রহ করা এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় তা অন্তর্ভুক্ত করা।
৩. মনোযোগ দিয়ে শোনা ও অর্থবহ প্রতিক্রিয়া দেওয়া
চাপের সময়ে কর্মীরা চায় তাদের কথা শোনা হোক, তাদের অনুভূতি মূল্যায়ন করা হোক এবং নেতৃত্ব তাদের পাশে থাকুক।
অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের মতামত নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে, কিন্তু সেগুলোতে কার্যকর প্রতিক্রিয়ার অভাব কর্মীদের হতাশ করে। পানোরামা গ্লোবালের প্রধান ইমপ্যাক্ট অফিসার ইলেইন গিবনস বলেন, “সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রকৃত শোনার অভাব। কেবল মতামত সংগ্রহ করলেই হবে না, সেগুলোর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্মীরা যখন দেখে তাদের মতামত বাস্তবে পরিবর্তন আনছে, তখন তারা আরও অনুপ্রাণিত হয়।”
নেতাদের উচিত নিশ্চিত করা যে তারা শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়া নিচ্ছেন না, বরং সেগুলোর বাস্তবায়নেও সচেষ্ট। এটি কর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি দৃঢ় করে।
বর্তমানে কর্মীদের মনোবল অনেক প্রতিষ্ঠানে নিম্নমুখী। মানবিক সংযোগ, গভীর মনোযোগ ও বাস্তব পদক্ষেপই কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলায় নেতৃত্বের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সফল নেতারা কেবল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নন, বরং তারা বিশ্বাস, সংযোগ ও সহমর্মিতা গড়ে তোলার কারিগর। সাহসী ও মানবিক নেতৃত্ব কর্মস্থলকে শুধু কর্মদক্ষতার কেন্দ্র নয়, বরং একত্রে বেড়ে ওঠার একটি ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। কর্মসংস্কৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেতৃত্বের ধরনও পরিবর্তন করা জরুরি। এখন সময় এসেছে চ্যালেঞ্জকে সুযোগে রূপান্তরিত করার।
সূত্র:https://tinyurl.com/ycy6pjhw
আফরোজা