ছবি : সংগৃহীত
অতিরিক্ত চিন্তা আমাদের মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়, আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং অপ্রয়োজনীয় উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তবে সুখী জীবনযাপন করতে হলে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বিষয়গুলো মেনে নেওয়া, নিজেকে বিশ্বাস করা ও বর্তমান মুহূর্তে থাকার অনুশীলন করতে হবে।
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একজন মানুষ প্রায় ৬,০০০-এর বেশি চিন্তা করে, যার বেশিরভাগই উদ্বেগজনক ও নেতিবাচক হতে পারে। তবে কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করে অতিরিক্ত ভাবনার এই চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কেন আমরা অতিরিক্ত চিন্তা করি?
অনেকেই মনে করেন, বেশি বিশ্লেষণ করলেই হয়তো আমরা ভুল করা থেকে বাঁচতে পারবো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অতিরিক্ত চিন্তা করার ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হয়, আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং মানসিক চাপ বাড়ে।
একটি সুখী ও পরিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য আমাদের উচিত নিজেকে বিশ্বাস করা, অপ্রয়োজনীয় চিন্তাগুলো ঝেড়ে ফেলা এবং যে বিষয়গুলোর উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তা মেনে নেওয়া।
অতিরিক্ত ভাবনার ফাঁদ থেকে মুক্তি পাওয়ার ৮টি কার্যকর উপায়
১) সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা বাদ দিন
আমরা প্রায়ই ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি এবং প্রতিটি পরিস্থিতির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাই। তবে বাস্তবতা হলো, জীবন সবসময় পূর্বাভাস অনুযায়ী চলে না।
কী করতে পারেন?
- আপনার মানসিকতা, সিদ্ধান্ত এবং প্রতিক্রিয়ার উপর ফোকাস করুন।
- যা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে যা করতে পারেন, তার উপর মনোযোগ দিন।
২) নিজের সব চিন্তাকে সত্য ভেবে নেওয়া ভুল
আমাদের মন অনেক সময় ভুল তথ্য দেয়। কেউ উত্তর দিতে দেরি করলে আমরা ধরে নিই সে রাগ করেছে, বা ছোট একটা ভুল করে মনে হতে পারে সবাই আমাদের নিয়ে বাজে ভাবছে।
কী করতে পারেন?
- নিজের চিন্তাগুলো যাচাই করুন—এটি বাস্তব নাকি আমার কল্পনা?
- নিজেকে প্রশ্ন করুন, এর পেছনে সত্যিকারের কোনো প্রমাণ আছে কি?
৩) নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
অতিরিক্ত চিন্তা করার সবচেয়ে বড় কারণ হলো অলস মস্তিষ্ক। যখন আমরা কোনো অর্থবহ কাজে ব্যস্ত থাকি না, তখনই নেতিবাচক চিন্তাগুলো মাথায় আসে।
কী করতে পারেন?
- নতুন শখ শুরু করুন, যেমন—চিত্রাঙ্কন, গান, লেখালেখি বা ব্যায়াম।
- স্বেচ্ছাসেবী কাজে নিজেকে যুক্ত করুন।
৪) বর্তমান মুহূর্তে বাঁচুন
বৌদ্ধ দর্শনে বলা হয়, অতীতের অনুশোচনা এবং ভবিষ্যতের চিন্তা আমাদের কষ্টের কারণ। তাই সুখী জীবনের জন্য বর্তমানকে উপভোগ করতে হবে।
কী করতে পারেন?
- মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করুন—আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস, চারপাশের পরিবেশ এবং বর্তমান অনুভূতির দিকে মনোযোগ দিন।
- ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তার পরিবর্তে "এখন" যা করতে পারেন, সেটাতে ফোকাস করুন।
৫) পারফেকশনিজম ত্যাগ করুন
অনেকেই মনে করেন, সবকিছু নিখুঁতভাবে করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে পরিপূর্ণতা অর্জন করা প্রায় অসম্ভব।
কী করতে পারেন?
- সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় নষ্ট না করে, যতটুকু সম্ভব সেটাই করুন।
- মনে রাখুন, অগ্রগতি পারফেকশনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৬) চিন্তার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন
আপনার যদি মনে হয় কোনো বিষয় নিয়ে আপনি বারবার চিন্তা করছেন, তাহলে একটি “ওভারথিংকিং টাইম” নির্ধারণ করুন।
কী করতে পারেন?
- দিনে ১০–১৫ মিনিট নির্দিষ্ট করুন, যেখানে আপনি যত ইচ্ছা চিন্তা করতে পারবেন।
- নির্ধারিত সময় শেষ হলে, অন্য কাজে মন দিন।
৭) নিজেকে প্রশ্ন করুন: "এটি কি এক বছর পরও গুরুত্বপূর্ণ থাকবে?"
অনেক সময় আমরা এমন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করি যা ভবিষ্যতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
কী করতে পারেন?
- যখনই কোনো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, নিজেকে প্রশ্ন করুন—"এটি কি এক বছর পরও গুরুত্বপূর্ণ থাকবে?"
- যদি উত্তর হয় "না", তাহলে এটি নিয়ে বেশি চিন্তা করার দরকার নেই।
৮) নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন
অতিরিক্ত চিন্তার একটি প্রধান কারণ হলো নিজের উপর আস্থার অভাব। কিন্তু মনে রাখুন, আপনি ইতোমধ্যেই অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন এবং ভবিষ্যতেও পারবেন।
কী করতে পারেন?
- নিজেকে মনে করিয়ে দিন—"আমি আগেও কঠিন সময় পার করেছি, এবারও পারবো।"
- অতীতের সফলতা এবং শেখার অভিজ্ঞতা থেকে আত্মবিশ্বাস অর্জন করুন।
শেষ কথা: চিন্তাগুলো আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে না
আমাদের মন অনেক কিছু ভাবতে পারে, কিন্তু সেটাই বাস্তবতা নয়। সব চিন্তার পেছনে ছুটতে হবে না।
বৌদ্ধ দর্শনে বলা হয়, চিন্তাগুলোকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করুন, কিন্তু তাদের সাথে জড়িয়ে পড়বেন না। জীবন সবসময় আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে না, কিন্তু আপনি শান্ত ও সুখী থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
সুতরাং, অতিরিক্ত ভাবনার ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এসে এখনই জীবন উপভোগ করা শুরু করুন!
মো. মহিউদ্দিন