ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

কম পানি খেলে কি সত্যি কিডনিতে পাথর হয়? যা বলছে গবেষণা

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কম পানি খেলে কি সত্যি কিডনিতে পাথর হয়? যা বলছে গবেষণা

ছবি: সংগৃহীত

কম পানি খাওয়ার কারণে কিডনিতে পাথর জমা হওয়ার প্রক্রিয়া মূলত শরীরে জলাভাব (Dehydration) সৃষ্টি হওয়া এবং তার ফলস্বরূপ কিডনির সঠিক কাজকর্মে বাধা আসার কারণে ঘটে। সাধারণত, আমাদের কিডনি রক্ত পরিশোধন করে শরীর থেকে অতিরিক্ত উপাদান যেমন ইউরিয়া, সেলুলার বর্জ্য এবং অতিরিক্ত সোডিয়াম নিষ্কাশন করে। তবে, যখন শরীরে পানির অভাব হয়, তখন কিডনি এই বর্জ্যগুলো জমে যেতে দেয় এবং তা ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের আকারে রূপান্তরিত হয়। এই স্ফটিকগুলো একসাথে জমে গিয়ে কিডনিতে পাথর তৈরি করে।

গবেষণাগুলো বলছে যে, দীর্ঘসময় পানি কম খাওয়ার ফলে সঠিকভাবে মূত্র নিঃসরণের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। মূত্রে যদি পানি কম থাকে, তবে দ্রবীভূত সল্ট এবং কেমিক্যালগুলো (যেমন ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক অ্যাসিড) ঘনীভূত হয়ে পাথরের আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষত যারা খুব কম পানি পান করেন অথবা যারা অতিরিক্ত সোডিয়ামযুক্ত খাবার খান, তাদের মধ্যে কিডনির পাথর হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি।

কিডনির পাথর হওয়ার কারণসমূহ:

  • পানি কম খাওয়া: শরীরে পানি কম হলে, মূত্রের ঘনত্ব বাড়ে এবং পাথরের সৃষ্টি হতে পারে।
  • খাবারের অভ্যাস: অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার, লবণ বা ক্যালসিয়ামের উচ্চ মাত্রার খাদ্য গ্রহণ কিডনির পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
  • জীবনযাত্রার অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস: অনিয়মিত খাওয়ার সময়সূচি, অতিরিক্ত চা/কফি খাওয়া বা মদ্যপান করা পাথর তৈরিতে সহায়ক হতে পারে।
  • জেনেটিক উপাদান: পরিবারের মধ্যে যদি কারো কিডনির পাথর থাকে, তাহলে সেই পরিবারে অন্য সদস্যদেরও পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা: যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা—এগুলোও কিডনির পাথর তৈরির কারণ হতে পারে।

কিডনির পাথর থেকে মুক্তির উপায়

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা: সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৮ গ্লাস পানি বা ২ লিটার পানি খাওয়া উচিত। তবে, শরীরের আকার এবং পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে এই পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফলমূল, শাকসবজি এবং ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া উচিত। এছাড়া অতিরিক্ত লবণ, চর্বি, বা প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা উচিত।
  • নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ: যাদের কিডনি পাথর হওয়ার সমস্যা থাকে, তাদের নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ করা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করা উচিত।

তাহলে, কিডনির পাথর থেকে বাঁচতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পানি পান করার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস এবং পানির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে আমরা কিডনির স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে পারি।

নুসরাত

×