অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষদের কিছু বৈশিষ্ট্য ও অভ্যাস সাধারণ মানুষের থেকে অনেকটাই আলাদা। তাদের চিন্তাধারা গভীর, তারা প্রায়শই নিজের অনুভূতি ও চিন্তা বোঝে, এবং তাদের চারপাশের পরিবেশ ও সমাজকে প্রশ্ন করার আগ্রহ থাকে। তাদের জীবনযাত্রার অনেক দিকেই কিছু নির্দিষ্টতা থাকে, যেমন-তারা অনেক সময় একা থাকতে পছন্দ করে, প্রশ্ন করতে ভালোবাসে, অথবা এলোমেলো পরিবেশে থাকতে আগ্রহী। তবে তারা একসঙ্গে কাজ করার সময় সাধারণত আরো আত্মসচেতন, সৃজনশীল, এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ হয়। তাদের শান্তি বজায় রাখার জন্য, তারা কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ব্যক্তিত্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় না, যাদের তাদের মানসিক শান্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাদের স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা, আত্মসচেতনতা, এবং অন্তর্দৃষ্টি তাদেরকে এমন মানুষদের কাছ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে, যারা তাদের আবেগিক ও মানসিক কল্যাণের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
১১ ধরনের ব্যক্তিত্ব, যাদের সাথে অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষরা মেলামেশা করতে চায় না
১. দোষ চাপানো ও অপরাধবোধ সৃষ্টিকারী মানুষ
অনেকে নিজেদের দোষ বা ভুল থেকে বাঁচতে, অন্যদের ওপর দোষ চাপাতে ও অপরাধবোধ তৈরি করতে চায়। এমন মানুষরা কখনো নিজেদের ভুল স্বীকার করতে চায় না এবং তাদের নিজের অস্বস্তি বা দুঃখ অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়। বুদ্ধিমান মানুষরা সাধারণত কঠিন কথোপকথন করতে ও নিজেদের ভুল স্বীকার করতে কোনো সমস্যা বোধ করেন না, তাই তারা এমন মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পছন্দ করেন না, যারা নিজেদের অস্বস্তি মোকাবেলা করার বদলে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে স্বাভাবিক একধরনের অশান্তি তৈরি হতে পারে, যেখানে একটি পক্ষ অন্যটির আবেগিক বোঝা নিতে চায় না, এবং অপর পক্ষ নিজের ভুল স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে না। এই কারণে তাদের মধ্যে সম্পর্কটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না এবং একে অপরের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে।
২. আত্মসচেতনতা বঞ্চিত মানুষ
বুদ্ধিমান মানুষরা নিজেদের এবং নিজেদের অনুভূতি সম্পর্কে খুবই সচেতন থাকে। তারা জানে তাদের কী প্রয়োজন এবং কিভাবে অন্যরা তাদেরকে দেখে। তারা যখন কোনো আলোচনা করতে বসে, তখন তারা অন্যদের অনুভূতিও ভালোভাবে বোঝে। সেই সঙ্গে, তারা জানে কখন কোনো আলোচনা পরিবর্তিত হচ্ছে বা কেউ অনুভব করছে যে তাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এ ধরনের আত্মসচেতনতা তাদেরকে সহানুভূতিশীল হতে ও সহানুভূতিশীল আলোচনা করতে সাহায্য করে, এবং এটি তাদের আত্মবিশ্বাসী ও সম্পর্ক গড়ে তোলার সক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। তবে, আত্মসচেতনতার অভাব যাদের মধ্যে থাকে, তারা সাধারণত বুঝতে পারে না যখন তারা অন্যদেরকে অস্বস্তিতে ফেলছে, বা একটি আলোচনা অসুস্থভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, যা বুদ্ধিমান মানুষদের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে।
৩. অজ্ঞ ও সংকীর্ণমনা মানুষ
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সঙ্কীর্ণ চিন্তাভাবনা করে এবং নতুন কিছু শেখার আগ্রহ পায় না, তারা সাধারণত কম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হন। বুদ্ধিমান মানুষরা যেহেতু নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে এবং বিভিন্ন মতামত শুনতে আগ্রহী, তারা অজ্ঞ ও সংকীর্ণমনা মানুষের সাথে খুব একটা সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় না। এ ধরনের মানুষরা বিভিন্ন বিষয়ে কম আগ্রহী, এবং তাদের চিন্তাভাবনা বা বিশ্বাস খুব সীমাবদ্ধ থাকে। তারা বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গে সৃজনশীল বা গভীর আলোচনায় আগ্রহী নয় এবং সেই কারণে সেই সম্পর্ক খুব দ্রুত সিঙ্গেল বা একমুখী হয়ে পড়ে। বুদ্ধিমান মানুষরা এমন অবস্থায় সময় বা শক্তি ব্যয় করতে চায় না, যেখানে বিপরীতপক্ষ প্রকৃত আগ্রহ দেখায় না।
৪. সমাজের প্রচলিত নিয়ম অন্ধভাবে অনুসরণকারী মানুষ
অনেক মানুষ সমাজের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করে, যেখানে তারা সমাজের প্রত্যাশা এবং নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু বুদ্ধিমান মানুষরা সাধারণত এই নিয়মগুলোর প্রতি প্রশ্ন তোলে এবং কিছুটা নতুন, সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে চলে। তারা সমাজের আগ্রহের বাইরে, নিজস্ব পথ অনুসরণ করতে চায়। আর যারা সমাজের নিয়ম অন্ধভাবে অনুসরণ করে, তারা এই বুদ্ধিমান মানুষের পন্থা বুঝতে বা গ্রহণ করতে পারে না, ফলে সেখানে সম্পর্ক স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমন মানুষরা কখনোই নতুন ধারণা গ্রহণ করতে পছন্দ করে না, এবং তাদের আত্মবিশ্বাসের সাথে যেকোনো ধরণের প্রশ্ন বা বিরোধ তাদের কাছে অপমানজনক হতে পারে।
৫. আত্মকেন্দ্রিক ও অহংকারী মানুষ
নার্সিসিস্টিক বা অহংকারী মানুষরা সাধারণত অন্যদের প্রতি কম সহানুভূতিশীল এবং তাদের অগোচরে অন্যদের মনোবল নষ্ট করতে পারে। এ ধরনের ব্যক্তিরা শুধু নিজেদের সফলতা বা আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে পছন্দ করে এবং নিজেদেরকে সবার উপরে মনে করে। এমন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন, কারণ তারা কখনোই অন্যদের ভাবনা বা অনুভূতি বোঝে না এবং নিজের দৃষ্টিকোণ ছাড়া অন্য কিছু দেখার আগ্রহী নয়। বুদ্ধিমান মানুষরা তাদের নিজের আত্মবিশ্বাসের কারণে খুব সহজেই এসব স্বার্থপর আচরণ শনাক্ত করতে পারে এবং তাদের থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে।
৬. অসংগত আচরণকারী মানুষ
অসংগতি হল এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা সেইসব ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায় যারা কখনোই তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না বা তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করে না। তাদের আচরণ কখনোই একধরনের না, এবং তারা খুব সহজেই অন্যান্যদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। বুদ্ধিমান মানুষরা যে কোনো সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস এবং সততা খুব মূল্য দেয়, তাই তারা এমন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না, যারা তাদের প্রতি অসঙ্গত আচরণ করবে।
৭. গসিপপ্রিয় মানুষ
গসিপ বা কানাঘুষা হল এমন একটি আচরণ যা সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস নষ্ট করতে পারে। গসিপ যারা করে, তারা সাধারণত অন্যদের সম্পর্কে মিথ্যা বা অপবাদ ছড়ায়, যা সম্পর্কের স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে। বুদ্ধিমান মানুষরা জানে যে, তাদের জীবনে গসিপ ও নাটকীয়তা থাকা উচিত নয়, এবং তারা সৃজনশীল, ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে মনোযোগী থাকে।
৮. কোডিপেনডেন্ট মানুষ
কোডিপেনডেন্ট ব্যক্তি যারা একে অপরের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল, তারা একটি সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে অক্ষম। এমন মানুষরা প্রায়ই শখ বা সম্পর্কের মধ্যে অত্যাধিক আবেগিক বোঝা ফেলে, যা অন্যজনের উপর চাপ সৃষ্টি করে। বুদ্ধিমান মানুষরা জানে যখন অন্যদের আচরণ তাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে, তাই তারা কোডিপেনডেন্ট ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় না।
৯. অনুপ্রেরণাহীন মানুষ
বুদ্ধিমান মানুষরা সবসময় নতুন কিছু শিখতে বা আগ্রহজনক কাজ করতে ভালোবাসে। তাদের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকে, এবং তারা চ্যালেঞ্জ নিতে চায়। কিন্তু যারা অনুপ্রেরণাহীন বা কম আগ্রহী, তাদের সাথে তারা সহজে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে না। তারা খুব দ্রুত নিজেদের গতিতে চলে যায়, যখন বুদ্ধিমান মানুষরা নতুন সুযোগ এবং চিন্তাভাবনার দিকে আগ্রহী থাকে।
১০. বিচারপ্রবণ মানুষ
বুদ্ধিমান মানুষরা যখন অন্যদের কাছ থেকে সমালোচনা বা চ্যালেঞ্জ আশা করে, তখন তারা সেই সমালোচনা গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে, কিন্তু যারা শুধু বিচার করে ও অন্যদের দোষ খোঁজে, তাদের সাথে তাদের সম্পর্ক কখনোই সুস্থ হয় না। বিচারপ্রবণ মানুষেরা নিজের অজ্ঞতা বা অস্বস্তি থেকে অন্যদের বিচার করতে চায়, কিন্তু বুদ্ধিমান মানুষরা তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট স্থান খুঁজে পায় না।
১১. সরল চিন্তাধারার মানুষ
বুদ্ধিমান মানুষরা সাধারণত গভীর আলোচনায় বিশ্বাস করে এবং সহজ কথাবার্তা তাদের কাছে একঘেয়ে লাগে। তারা এমন কাউকে খোঁজে যে তাদের চ্যালেঞ্জ করতে পারে এবং সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে পারে। সরল চিন্তাধারার মানুষরা এসব নিয়ে আগ্রহী নয় এবং তারা তাদের চিন্তা বা কথোপকথনে গভীরতা আনতে চেষ্টা করে না, যা বুদ্ধিমান মানুষের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে।
এ কারণে, বুদ্ধিমান মানুষরা তাদের মানসিক শান্তি বজায় রাখতে এবং সঠিক সম্পর্ক তৈরি করতে এই ধরনের ব্যক্তিত্বের সাথে মেলামেশা থেকে বিরত থাকে।
সূত্র:https://tinyurl.com/4ehx9e35
আফরোজা