ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমানে অনেকেই লম্বা হতে চান এবং এর জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করেন। বিশেষ করে যারা শারীরিকভাবে উচ্চতা নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগছেন, তাদের জন্য বিভিন্ন দিশা খোঁজার চেষ্টা করা স্বাভাবিক। লম্বা হওয়া কি আসলেই সম্ভব? আর যদি সম্ভব হয়, তবে কি সাপ্লিমেন্ট বা বিশেষ কোন ওষুধ খেয়ে লম্বা হওয়া সম্ভব? এ সব প্রশ্নের উত্তর জানতেই আমরা অনেকেই নানা ধরনের গবেষণা করি।
প্রথমত, লম্বা হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টি হলো শৈশব ও কৈশোরকাল। এই সময়ে হাড়ের বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি থাকে। তবে এই সময় পার হয়ে গেলে, শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি অনেকটাই কমে আসে। কিন্তু তারপরও কিছু উপায় রয়েছে, যার মাধ্যমে শরীরের বৃদ্ধি কিছুটা সহায়ক হতে পারে। তার মধ্যে সঠিক পুষ্টি, ব্যায়াম, এবং কিছু নির্দিষ্ট সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার প্রভাব ফেলতে পারে।
এই ফিচার নিউজে আমরা জানবো, লম্বা হওয়ার জন্য কোন উপায়গুলো কার্যকরী এবং সাপ্লিমেন্ট খেলে কি আসলেই উচ্চতা বৃদ্ধি সম্ভব।
শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি সাধারাণভাবে জেনেটিক (জীববৈজ্ঞানিক) কারণে নির্ভরশীল। তবে, এর জন্য কিছু জীবনযাপন পরিবর্তন, পুষ্টি এবং সঠিক ব্যায়াম গ্রহণ করে কিছুটা সাহায্য পাওয়া সম্ভব। সাপ্লিমেন্ট খেয়ে কি আসলেই লম্বা হওয়া যায়? সে প্রশ্নে উত্তর খোঁজা যাক।
১. সঠিক পুষ্টি:
লম্বা হওয়ার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল সঠিক পুষ্টি গ্রহণ। আপনি যদি সঠিকভাবে পুষ্টিকর খাবার খান, তবে আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিনগুলো সরবরাহ হবে, যা হাড়ের বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়ক। বিশেষভাবে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন D, প্রোটিন এবং জিঙ্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম হাড় শক্তিশালী এবং লম্বা হতে সাহায্য করে, ভিটামিন D হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, এবং প্রোটিন শরীরের কোষ এবং পেশী তৈরি করতে সাহায্য করে।
২. সঠিক ব্যায়াম:
নিয়মিত ব্যায়াম এবং শারীরিক চর্চা শরীরের উচ্চতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। কিছু বিশেষ ব্যায়াম যেমন স্ট্রেচিং, হ্যাঙ্গিং (যেমন বারের উপর ঝুলে থাকা), পুল আপ এবং সাইক্লিং হাড় এবং পেশীকে শক্তিশালী করে এবং লম্বা হতে সাহায্য করে। এই ব্যায়ামগুলো শরীরের পেশী এবং হাড়ের বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী।
৩. সঠিক ঘুম:
ঘুমের মধ্যে শরীর পুনরুদ্ধার এবং বৃদ্ধি পায়। বিশেষত, গভীর ঘুমে গ্রোথ হরমোন নির্গত হয়, যা শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম প্রয়োজন।
৪. সাপ্লিমেন্ট:
বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় যা উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। তবে, সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু সাপ্লিমেন্ট যা হাড় এবং শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D সাপ্লিমেন্ট: এগুলি হাড়ের বৃদ্ধি এবং শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- অ্যামিনো অ্যাসিড এবং প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট: শরীরের কোষের বৃদ্ধি এবং পুনর্নিমাণে সাহায্য করে।
- জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট: জিঙ্ক হাড়ের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং এটি শরীরের গ্রোথ হরমোনের নিঃসরণে সাহায্য করে।
৫. সঠিক জীবনযাপন:
লম্বা হওয়ার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা জরুরি। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে পর্যাপ্ত পানি পান, মানসিক চাপ কমানো এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা। অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন ধূমপান বা অতিরিক্ত মদ্যপান উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
যদিও সাপ্লিমেন্ট বা অন্যান্য পদ্ধতি হাড়ের বৃদ্ধিতে কিছুটা সহায়ক হতে পারে, তবে মূলত সঠিক পুষ্টি, ব্যায়াম এবং জীবনযাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বয়স যদি ২০ বছরের নিচে হয়, তাহলে কিছুটা বৃদ্ধি সম্ভব, কিন্তু ২০ এর পর উচ্চতার বৃদ্ধি বেশ কমে যায়। যেকোনো সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ কিছু সাপ্লিমেন্টের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
নুসরাত