ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

সন্ধ্যার যে অভ্যাসগুলো কাউকে নিম্নমানের মানুষে পরিণত করছে!

প্রকাশিত: ১৩:০১, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

সন্ধ্যার যে অভ্যাসগুলো কাউকে নিম্নমানের মানুষে পরিণত করছে!

সন্ধ্যা নামলে দিনশেষের ক্লান্তি আসে, আর এটাই সেই সময় যখন একজন মানুষ নিজেকে আরও উন্নত করতে পারেন বা অজান্তেই এমন কিছু অভ্যাসের মধ্যে পড়ে যেতে পারেন, যা তাকে ধীরে ধীরে পিছিয়ে দেয়। মনোবিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, কিছু নির্দিষ্ট সন্ধ্যার অভ্যাস মানুষের মানসিক ও ব্যক্তিগত উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে।

এখানে এমন আটটি অভ্যাসের কথা বলা হলো, যা অনেকের অজান্তেই তাদের জীবনকে সীমাবদ্ধ করে রাখে।

সময় নষ্ট করা
কেউ হয়তো সারাদিনের পর বিশ্রাম নিতে চায়, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি সন্ধ্যার পুরোটা সময় সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করে, উদ্দেশ্যহীনভাবে টিভি দেখেই কেটে যায়, তাহলে তা আসলে সময়ের অপচয়। কেউ কেউ ভাবে, "আরেকটু দেখি, একটু পর কাজ করব।" কিন্তু এই "একটু পর" কখনোই আসে না। যারা নিজের উন্নতি চায়, তারা অবসর সময়কেও কাজে লাগায়-হয় নতুন কিছু শেখে, নয়তো অন্তত পরের দিনের পরিকল্পনা করে। কিন্তু যাদের উন্নতির তাড়া নেই, তারা সময় নষ্ট করেই দিন পার করে ফেলে।

শারীরিক সুস্থতা উপেক্ষা করা
দিনশেষে শরীর ক্লান্ত থাকতেই পারে, কিন্তু এটাকে অজুহাত বানিয়ে কেউ যদি নিয়মিত ব্যায়াম বা স্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলে, তাহলে সেটাই তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিছু মানুষ আছে, যারা সন্ধ্যায় কাজের পর একদম হেলেদুলে বসে থাকে, অস্বাস্থ্যকর খাবার খায় এবং নিজের যত্ন নেয় না। অথচ সুস্থ শরীর না থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে কোনো স্বপ্নই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম
অনেকেই সন্ধ্যা মানেই ধরে নেয়, মোবাইল বা ল্যাপটপের সামনে বসে থাকা। তারা হয়তো ভাবে, "আরেকটু দেখলেই বা কী?" কিন্তু এই অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শুধু চোখের ক্ষতি করে না, বরং ঘুমের সমস্যাও তৈরি করে। ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, আর তাই রাতের পর রাত অস্থির কাটে। অথচ সন্ধ্যার সময়টা যদি বই পড়া বা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কাটানো হয়, তাহলে মানসিক প্রশান্তিও পাওয়া যায়।

আত্মবিশ্লেষণের অভাব
একজন মানুষ দিনের শেষে যদি নিজের কাজের ভালো-মন্দ নিয়ে একবারও না ভাবে, তাহলে সে কীভাবে বুঝবে কোথায় উন্নতি করা দরকার? অনেকেই সন্ধ্যায় নিজের ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে চায়, কারণ সেগুলো মুখোমুখি হওয়া সহজ নয়। কিন্তু যারা জীবনে এগিয়ে যায়, তারা প্রতিদিন একটু সময় নিয়ে ভাবে, "আজ আমি কী শিখলাম? কোথায় উন্নতি করা দরকার?"

পরের দিনের জন্য কোনো পরিকল্পনা না করা
একজন সফল মানুষ সবসময় পরবর্তী দিনের পরিকল্পনা আগেভাগেই করে রাখে। যারা এই অভ্যাসের অভাব বোধ করে, তারা প্রায়ই সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না। সন্ধ্যায় যদি কেউ পরের দিনের জন্য ছোট্ট একটা পরিকল্পনা করে নেয়, তাহলে সকালে উঠে দিশাহীন লাগে না। কিন্তু অনেকেই সেটার বদলে এলোমেলোভাবে সময় কাটায়, ফলে সকালে উঠে কী করা উচিত, সেটা নিয়েই বিভ্রান্ত থাকে।

কোনো শখ বা সৃজনশীল কাজের চর্চা না করা
একজন মানুষের শুধু কাজ করলেই হয় না, তার আনন্দের জন্যও কিছু করা দরকার। অনেকেই সন্ধ্যায় এমন কিছু করেন না, যা তাদের আনন্দ দেয় বা সৃজনশীলভাবে ভাবতে শেখায়। কেউ হয়তো গিটার বাজাতে পারে, কেউ ছবি আঁকতে ভালোবাসে, কেউ আবার গল্প লিখতে পছন্দ করে-কিন্তু যাদের এসব কিছুতেই আগ্রহ নেই, তারা ধীরে ধীরে একঘেয়ে জীবনে আটকে পড়ে।

নেতিবাচক চিন্তায় ডুবে থাকা
সন্ধ্যার সময়টাই এমন, যখন সারাদিনের ক্লান্তি এসে ভর করে, আর তখন নেতিবাচক চিন্তা সহজেই মাথায় চলে আসে। অনেকেই ছোটখাটো সমস্যাকে বড় করে দেখে, নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা করে। অথচ নেতিবাচক চিন্তা করলে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না, বরং আরও মানসিক চাপ বাড়ে।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা
একজন মানুষের জীবনে কত ছোটখাটো ভালো জিনিস ঘটে, কিন্তু সে যদি সেগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ না হয়, তাহলে সে কখনোই প্রকৃত সুখী হতে পারবে না। কিছু মানুষ সবসময় যা নেই, সেটা নিয়ে চিন্তা করে, কিন্তু যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তারা জীবনের ছোট ছোট সুখগুলো উপভোগ করতে পারে।

এই অভ্যাসগুলো হয়তো কারো জীবনে খুব সাধারণ মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলোই ধীরে ধীরে একটা মানুষকে সীমাবদ্ধ করে দেয়। তবে এগুলো শুধরানো সম্ভব, যদি কেউ সচেতনভাবে চেষ্টা করে। প্রতিদিন একটু একটু করে ভালো অভ্যাস তৈরি করলে, ধীরে ধীরে জীবন অনেক সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। পরিবর্তন রাতারাতি হয় না, তবে ইচ্ছাশক্তি থাকলে যেকোনো কিছু সম্ভব!


সূত্র:https://tinyurl.com/5n7dxyv6  

 

আফরোজা

×