ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

যেসব কারণে প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

যেসব কারণে প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে

ছবি: সংগৃহীত

গর্ভধারণ কিছু দম্পতির জন্য সহজ হলেও, অনেকের জন্য এটি কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ শতাংশ দম্পতি প্রজনন সমস্যার মুখোমুখি হন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

 

জীবনযাত্রার নানা ভুল অভ্যাস, অসুস্থতা, মাদকাসক্তি, রাসায়নিক উপাদানের ক্ষতিকর প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। তবে অনেকেই তরুণ বয়সে এই বিষয়গুলোর প্রতি সচেতন থাকেন না। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন অভ্যাস বা কারণ প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

ধূমপান

ধূমপান যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা সবাই জানেন। তবে এটি নারী ও পুরুষ—উভয়ের প্রজনন ক্ষমতার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। নিয়মিত ধূমপানের ফলে নারীদের ক্ষেত্রে ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমে যায় এবং রজঃবন্ধ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অন্যদিকে, পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতিশীলতা কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি পরোক্ষ ধূমপানও প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

রাসায়নিক উপাদানের সংস্পর্শ

অনেক গৃহস্থালির পণ্য, কীটনাশক, প্লাস্টিকজাত সামগ্রী এবং কসমেটিকসে ‘পিসিবি’, ‘থ্যালেটস’, ‘ফুরান’ ইত্যাদি রাসায়নিক থাকে, যা প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব রাসায়নিক উপাদানের কারণে গর্ভধারণের সম্ভাবনা প্রায় ২৯ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। তাই প্রসাধনী বা পরিষ্কারক পণ্য ব্যবহারের সময় এগুলোতে ক্ষতিকর উপাদান আছে কিনা দেখে নেওয়া উচিত।

মানসিক চাপ

অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা সরাসরি প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে নারীদের মাসিকচক্র অনিয়মিত হতে পারে এবং পুরুষদের শুক্রাণুর মান কমে যেতে পারে। তাই সুস্থ থাকার জন্য মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

অনিরাপদ যৌনতা ও সংক্রামক রোগ

অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের ফলে ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ’ (এসটিডি) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক যৌনরোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ না থাকায় সেগুলোর চিকিৎসা নিতে দেরি হয়, যা পরবর্তীতে প্রজনন তন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। বিশেষত, নারীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে এসব রোগ বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ

অতিরিক্ত চা বা কফি পান করাও প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। দিনে তিন থেকে চার কাপের বেশি কফি পান করলে শুক্রাণুর উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে এবং নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। এমনকি গর্ভপাতের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। তাই দিনে ২৫০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ না করাই ভালো।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও স্থূলতা

অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। এটি নারীদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক এবং পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS)-এর ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, অতিরিক্ত ওজন পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ও মান কমিয়ে দেয়।

 

সুস্থ জীবনযাত্রা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা প্রজনন ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ বয়স থেকেই সচেতন না হলে ভবিষ্যতে গর্ভধারণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন এবং যেকোনো সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

 

 

 

তাবিব

×