ছবি: সংগৃহীত
ঘুম আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করে। কিন্তু কখনো কখনো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ঘুম না হলে আমরা এর গুরুতর প্রভাব অনুভব করি।
চেতনার দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা হলো ঘুম এবং জাগৃতি। এ দুইটি একে অপরের পরিপূরক। যদি ঘুম এবং জাগৃতির মধ্যে একটি সঠিক ছন্দ বজায় থাকে, তবে আমরা শরীর ও মনের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা উপভোগ করতে পারি।
কিন্তু অনেকেই ঘুমজনিত সমস্যার শিকার। কেউ ঘুমাতে পারেন না, আবার কেউ অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। কেউ কেউ আবার জাগরণ ও ঘুমের মাঝামাঝি অবস্থায় থাকেন, যাকে বলা হয় ঝিমানো।
জার্মান বিজ্ঞানী হ্যান্স বার্জার ১৯২৯ সালে ইইজি (EEG) প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে ব্রেনের বিদ্যুৎ তরঙ্গ মাপা যায়। এর মাধ্যমে ঘুম এবং জাগৃতি কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তা জানতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়।
ইতালীয় বিজ্ঞানী গিয়াসিপ্পে মোরাজ্জি এবং ফরাসী বিজ্ঞানী মিশেল জোভেট গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, ব্রেনের মিডব্রেন অংশে থাকা জাগৃতি কেন্দ্র (ওয়েকিং সেন্টার) আমাদের ঘুম এবং জাগরণের নিয়ন্ত্রক।
জাগৃতি কেন্দ্র হরমোন সংকেতের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। শরীর এবং মনের অবস্থা অনুযায়ী হরমোন নিঃসরণের মাত্রা কমতে কমতে একটি নির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছালে জাগৃতি কেন্দ্র কাজ বন্ধ করে দেয়, এবং আমরা ঘুমিয়ে পড়ি।
ঘুমের প্রয়োজনীয়তা
ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, বয়সভেদে দৈনিক ঘুমের চাহিদা ভিন্ন।
- শিশু (০-২ মাস): ১২-১৮ ঘণ্টা
- ৩-১১ মাস: ১৫ ঘণ্টা
- ১-৩ বছর: ১২-১৪ ঘণ্টা
- ৩-৫ বছর: ১১-১৩ ঘণ্টা
- ৫-১০ বছর: ১০-১১ ঘণ্টা
- ১০-১৭ বছর: ৫-৭ ঘণ্টা
- প্রাপ্তবয়স্ক: ৭-৯ ঘণ্টা
সুস্থ শরীর এবং সজীব মন পেতে ঘুম অপরিহার্য। ঘুম আমাদের শারীরিক শক্তি পুনরুদ্ধার করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমায়। তাই ঘুমের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এর প্রতি সচেতন হওয়া জরুরি।
ঘুমের অভাবের ক্ষতিকর প্রভাব
যথাযথ ঘুম না হলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি হতাশা, ক্লান্তি, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস, এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
তাই জীবনকে সুস্থ, স্বাভাবিক ও প্রফুল্ল রাখতে নির্ধারিত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাবিব