ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

ফ্যাশনে ডেনিম

জলি রহমান

প্রকাশিত: ১৯:২৭, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

ফ্যাশনে ডেনিম

হাল ফ্যাশনে তরুণ-তরুণীরা বিশ্বের সঙ্গে চলছে তাল মিলিয়ে। তাদের কাছে শীত মানেই বাহারি ও নান্দনিক পোশাকের সমাহার। তবে ফ্যাশন এখন আর কোনো বয়সের ঘরে আটকে নেই। সব বয়সের নর-নারী পড়ছে ফ্যাশনেবল পোশাক। প্রতি বছরই শীত ফ্যাশনে যোগ হয় নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক। গত এক দশকে ডেনিম কাপড়ের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেড়েছে অনেক। বিশেষত শীতে ডেনিমের জ্যাকেট পরতে পছন্দ করেন নারী-পুরুষ উভয়ই। কেননা এটি দেখতে যেমন স্মার্ট তেমনি ফ্যাশনাবলও। আজ থেকে দুই দশক আগেও ডেনিমের পোশাক পরার প্রচলন ছিল না বললেই চলে। তখন মেয়েদের জন্য কার্ডিগান এবং পুরুষের জন্য সোয়েটার ও জ্যাকেট বেশি প্রচলিত ছিল। আজকাল ফ্যাশনে কারুকাজ সম্পন্ন ডেনিম জ্যাকেটের চাহিদা বেশ। এই জ্যাকেট এক সময় খুব দামি ছিল। বিশেষত লেদার আর ডেনিম কাপড়ের তৈরি জ্যাকেট। ডেনিমের জ্যাকেটে সুতা ও অ্যাম্ব্র্রয়ডারি ওয়ার্ক এখন খুবই ট্রেন্ডি।
আদি ফেব্রিকের মধ্যে ডেনিম যেন চিরসবুজ। ডেনিমের অম্লান পথ চলা আঠারো শতক থেকে। বিভিন্ন  অনলাইন পেজেও সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যাচ্ছে ডেনিমের পোশাক। বছরজুড়ে ডেনিম পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও হাল্কা শীত পড়তেই এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এক সময় ডেনিমের শুধু জিন্স প্যান্ট তৈরি করা হলেও বর্তমানে ডেনিমের শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, হাফপ্যান্ট, জগার, জ্যাকেট, স্যুট এমনকি পাঞ্জাবি, টপস, ব্লাউজ, কুর্তি ও শাল তৈরি করছে ফ্যাশন হাউসগুলো। এর মধ্যে রয়েছে স্লিভলেস, ফুলস্লিভ, শর্টস্লিভ, পাফি স্লিভ ও কোল্ড শোল্ডারের পোশাক। লং, মিডি, মিনি, পেন্সিল, ঢোলা প্রায় সব রকমের স্কার্টও পাওয়া যায়। এ ছাড়া পাওয়া যায় টপস ও কুর্তা।
পাশাপাশি শিশুদের জন্যও তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক পোশাক। আবহাওয়া ও সবার চাহিদা মাথায় রেখে ফ্যাশন হাউসগুলোও ডেনিম পোশাকে নিয়ে এসেছে নানা বৈচিত্র্য।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডেনিমের রঙেও এসেছে পরিবর্তন। ডেনিম এখন আর শুধু চিরাচরিত নীল রঙে আটকে নেই। লাইট ব্লু, সাদা, অ্যাশ, ওশান ব্লু, ইন্ডিগো, ওলিভ, কালোসহ নানা রঙে ফুটে উঠেছে ডেনিমের তৈরি পোশাকগুলো। ছেলেদের ফ্যাশনে বেশি দেখা যায় স্ট্রেটকাট, বুটকাট, লেগকাট, ব্যাগি জিন্স, ছেঁড়াফাটা ও ঝলসানো ট্রেন্ড। মেয়েদের পোশাকে অ্যাম্ব্রয়ডারি, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ফ্লোরার প্রিন্ট ছাড়াও রয়েছে টাই-ডাইয়ের ব্যবহার। এমনকি জামদানি মোটিফও খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ডেনিমে। অনেক পোশাকে পুঁতি, চুমকি ও গামছা প্যাচওয়ার্ক দেখা যায়। কুশিকাঁটার লেইসের মিশেলে ডিজাইন করা হয় ডেনিম পোশাক।
ফ্যাশন ডিজাইনারদের থেকে জানা যায়, গতানুগতিক ডিজাইন থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে এসেছে ডেনিমের পোশাক। এখন অভিনব ডিজাইন ও সৃজনশীল ডেনিমের পোশাক তৈরি করা হচ্ছে। প্রযুক্তির কল্যাণে শুরুর সেই মোটা ডেনিম এখন চিকন সুতায় বোনা হয়। ক্যাজুয়াল, ফরমাল এবং সেমি ফরমাল- এ তিনটি লুকেই ডেনিম পোশাক পাওয়া যায় বলে এটি সর্বকালেই সমাদৃত। ডেনিম পোশাক এখন অফিস, মিটিং, উৎসব, ভ্রমণ সব জায়গার জন্যই মানানসই। ১৮৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয়তা লাভ করে ডেনিমে তৈরি জিন্স প্যান্ট। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। ‘পৃথিবীর আদি ফেব্রিক বা কাপড়গুলোর মধ্যে ডেনিম অন্যতম পুরনো হলেও এর যৌবন চিরন্তন’ ১৯৬৯ সালে ‘আমেরিকান ফেব্রিকস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এ কথাটি একদম সত্য। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও বেশ দাপটের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে ডেনিম।
ডেনিম ব্যবহারের সুবিধা : ডেনিম ফেব্রিক খুব শক্ত হওয়ায় এটি সহজে ছিঁড়ে যাওয়া বা ফেটে যাওয়ার ভয় থাকে না। এতে সহজে ক্র্যাচ পড়ে না। আয়রন ছাড়াই ডেনিম ফেব্রিকের তৈরি পোশাক ব্যবহার করা যায় অনেক দিন। এটি ময়লা হলেও সহজে চোখে পড়ে না। সে জন্য ঘন ঘন ধোয়ার প্রয়োজন হয় না।
ডেনিমের বৈচিত্র্য : ডেনিম পণ্য এখন প্রায় সব বয়সী মানুষই ব্যবহার করছে। নারীর হ্যান্ডব্যাগ, স্কুল এবং কলেজ ব্যাগ, ভ্রমণ ব্যাগ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ডেনিম। সুতরাং দিন দিন বাড়ছে ডেনিমের পরিসীমা। ডেনিম দিয়ে টুপি, বেল্ট, বুট, অ্যাথলেটিক জুতা, ডেনিম ওয়াইন ব্যাগ, ডেনিম পেন্সিল কেস, ডেনিম  অ্যাপারন, ডেনিম গিলস ও ল্যাম্পশেডসহ  বিভিন্ন গৃহসজ্জার সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া সানগ্লাস ফ্রেম তৈরি করতেও ব্যবহৃত হচ্ছে ডেনিম।
কোথায় পাবেন : ব্র্যান্ড এর ডেনিম পোশাক পেতে যেতে হবে যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে। এছাড়া দেশীয় অনেক ফ্যাশন হাউসেও পাওয়া যায় ভালো কোয়ালিটির ডেনিমের পোশাক। নন ব্র্যান্ডেড পোশাক পাওয়া যাবে নিউ মার্কেট, নূরজাহান মার্কেট, বঙ্গবাজার, গাউছিয়াসহ যে কোনো শপিং মলে।

×