রোজা রাখার কি কোন বৈজ্ঞানিক উপকারিতা আছে কিনা এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।রমজান মাসে রোজা রাখা শারীরিক স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। রোজা রাখা মানবদেহের হজমের উন্নতি, বিপাক বৃদ্ধি এবং ওজন কমানোর জন্য উপকারী। এছাড়া রোজা শরীরকে ডিটক্সিফাই এবং পুনরুজ্জীবিত করে। যার ফলে মানব শরীর নতুন জীবনীশক্তি লাভ করে।
আজকে আমরা জেনে নিব রোজা রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা গুলার কি কি।
১. হার্টের রোগ বা হৃদরোগ:৫৬ জন রেড রোগীর উপর একটি গবেষণা করে দেখা যায়, তাদেরকে রোজার আগে একবার তাদের হার্টের অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয় এবং রোজার পরবর্তী সময়ে আরেক বার পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় এতে দেখা যায় ২৮.৬ ভাগ রোগের অসুস্থতা ভালো হয়ে গেছে।
এবং দেখা যায় হৃদরোগের যে ঝুঁকি গুলো ছিল সেগুলোর রোজার পরে খুব দ্রুত ভালো হয়ে গিয়েছে।
২.রক্তচাপের উপর রোজার প্রভাব:“লন্ডন রামাদান স্টাডি” অনুযায়ী ৮৫ জন রোজাদারের উপর একটি গবেষণা চালানো হয়। রোজার আগে তাদের ব্লাড প্রেসার একবার পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং রোজার পরবর্তীতে অবস্থার কোন উন্নতি হয়েছে কিনা সেটা দেখার জন্য আরো একবার পরীক্ষা করে দেখা হয়। এই দুই পরীক্ষার মধ্যে তুলনা করে দেখা যায় যে ,তাদের সিস্টলিক প্রেসার কমেছে ৭.২৯ মিলিমিটার পারদ চাপ এবং ডায়াসস্টোলিক প্রেসার কমেছে ৩.৪২ মিলিগ্রাম পারদ চাপ। এটি প্রমাণ করে, রোজা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৩. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি:নিউরো ট্রান্সমিটার মডুলেটর, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে, রোজার সময় এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ২৯ জন রোজাদারের ওপর এক গবেষণায় দেখা যায়, রোজার মাঝামাঝি সময়ে ব্রেইন-ডেরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টরের (BDNF) পরিমাণ ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। রোজার শেষে এই বৃদ্ধি দাঁড়ায় ৪৭%-এ। এটি শেখা এবং স্মৃতি উন্নতিতে সহায়তা করে।
৪. প্রদাহ কমায়:৫০ জন সুস্থ ব্যক্তির ওপর এক গবেষণায় দেখা যায়, রোজার ফলে শরীরের প্রদাহজনিত সমস্যাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এটি প্রদাহযুক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আরাম এনে দেয়।
৫.হজমশক্তি উন্নত করে: রোজা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সহায়তা করে। খাবার গ্রহণের সময় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীরের হজমব্যবস্থা কার্যকরভাবে কাজ করে। বিশেষ করে রোজা রাখার ফলে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড ও পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ে। এই সময় শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন বের হয়ে যায় এবং পাচনতন্ত্র শক্তিশালী হয়।
৬.ওজন কমায়: রোজা শরীরের চর্বি পোড়াতে সহায়তা করে এবং শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ বৃদ্ধি করে। রোজা রাখা মানুষকে বেশি খাবার খাওয়ার প্রবণতা থেকে বিরত রাখে, ফলে সঠিক পরিমাণে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব হয়। এই প্রক্রিয়াটি শরীরের বিপাকের হারও বাড়িয়ে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৭.মেটাবলিক স্বাস্থ্য উন্নত করে: রোজা শরীরের মেটাবলিজমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যা গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
৮.কিডনি ও লিভারের সুরক্ষা: রোজা শরীরের টক্সিন পরিষ্কার করতে সহায়তা করে, বিশেষত কিডনি এবং লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, রোজা রাখলে কিডনি এবং লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা দীর্ঘমেয়াদে এই অঙ্গগুলোর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখে।
রোজা রাখার এই বৈজ্ঞানিক উপকারিতাগুলি শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখে না, বরং মানসিক শান্তি, আত্মিক উন্নতি, এবং জীবনযাত্রার গুণগত মানও উন্নত করে।
আফরোজা