ছবি : সংগৃহীত
জনসমক্ষে কথা বলার দক্ষতা বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা।
যারা পেশাগত জীবনে সফল হতে চান, তাদের জন্য এই দক্ষতা অপরিহার্য।
আপনার যদি কখনো টেড টক দেওয়ার ইচ্ছা না থাকে, তবুও কর্মক্ষেত্রের মিটিং কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে কথা বলার প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই যুগে জনসমক্ষে কথা বলার দক্ষতা আপনার পেশাগত কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারেন মাইকেল চ্যাড হেপনার। তিনি একজন ভাষণ প্রশিক্ষক, যিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্পের প্রতিষ্ঠিত নির্বাহী, ক্রীড়াবিদ, এবং আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
তার নতুন বই ‘‘Don't Say Um: How to Communicate Effectively to Live a Better Life’’ জনসমক্ষে কথা বলার দক্ষতা বাড়ানোর উপর আলোকপাত করে।
নবীন এবং অনভিজ্ঞ বক্তাদের সাধারণ চ্যালেঞ্জ
হেপনারের মতে, নবীন বক্তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তারা মনে করেন "পেশাদার" হতে হলে নিজেকে সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করতে হবে। তিনি এটিকে "মোড" বলে অভিহিত করেন, যেমন: একাডেমিক মোড, লিগ্যাল মোড বা ফাইন্যান্স মোড। কিন্তু এগুলো আসলে নিজের একটি সীমিত এবং বিরক্তিকর সংস্করণ। এই ধারণার ফলে বক্তারা কম স্বর বৈচিত্র্য ব্যবহার করেন, কম উচ্চারণ করেন, শ্বাস নেয়ার সময় কম পান এবং কম গতিশীল থাকেন।
তার সমাধান কী?
তিনি বলেন, “একজন বক্তা যত বেশি নিজের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস, স্বর বৈচিত্র্য, অঙ্গভঙ্গি এবং মুখের অভিব্যক্তি ব্যবহার করবেন, তার বক্তব্য তত প্রাণবন্ত হবে।”
সাধারণ কথোপকথনে সাবলীল কিন্তু বক্তৃতায় অপ্রস্তুত কেন?
হেপনারের মতে, এটি কী বলা হচ্ছে তা নয়, বরং কার জন্য বলা হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে।
“যখন বক্তারা নিজেদের উপর বেশি মনোযোগ দেন, তখন তারা দ্রুত কথা বলেন, শব্দ হারিয়ে ফেলেন, ভুল নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করেন এবং চোখের যোগাযোগ এড়িয়ে যান। কিন্তু যদি তারা শ্রোতাদের উপর পুরোপুরি মনোযোগ দেন, তাদের স্বাভাবিক দক্ষতা সহজেই প্রকাশ পায়।”
বড় শব্দভাণ্ডার না, দরকার সঠিক শব্দ নির্বাচন
মাইকেল চ্যাড হেপনার বলেন, “অলংকারপূর্ণ ও অর্থবহ চিন্তা প্রকাশ করতে বড় শব্দভাণ্ডারের প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, ‘To be or not to be’ সম্ভবত সবচেয়ে সুন্দরভাবে ভাবা, লেখা ও বলা একটি বাক্য, যেখানে মাত্র ছয়টি শব্দ আছে, তার মধ্যে দুটি পুনরাবৃত্তি হয়েছে এবং সবগুলো শব্দ এক অক্ষরের।
তিনি বলেন, "স্পষ্ট ও অর্থবহ ভাষণ দিতে যা প্রয়োজন তা হলো সঠিক শব্দ বাছাই করার ক্ষমতা। শব্দভাণ্ডার নিয়ে অতিরিক্ত মনোযোগ দিলে দুটি খারাপ ফল হতে পারে।
প্রথমত, যদি কেউ তাদের অসংখ্য শব্দ জানার ক্ষমতা দেখাতে চায়, তবে তারা জটিল, দীর্ঘ এবং অপ্রয়োজনীয় জার্গনে ভরা বক্তব্য দিতে পারে, যা আসলে অর্থহীন।
দ্বিতীয়ত, যদি কেউ তাদের সীমিত শব্দভাণ্ডার আড়াল করতে চায়, তবে তারা সাধারণত দ্রুত কথা বলে, যা তাদের বক্তব্য আরও অস্পষ্ট করে তোলে।"
পরামর্শ?
"বড় শব্দভাণ্ডার চাওয়ার পরিবর্তে, নিজেকে সময় দিন চিন্তা করার জন্য। সর্বোত্তম শব্দ বেছে নিন। আর শব্দভাণ্ডার বাড়াতে চাইলে অবশ্যই করুন। এটি শেখার আনন্দময় দিক। তবে, শব্দ শেখার পাশাপাশি সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগের ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।"
ফিলার শব্দ: সমস্যা নয়, উপসর্গ
হেপনার বলেন, “অনেক বক্তা তাদের ভাষণকে আরও নিখুঁত, সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং ফিলার শব্দমুক্ত করতে চান। এটি একটি বৈধ লক্ষ্য, কারণ অতিরিক্ত ফিলার শব্দ শ্রোতাদের মনে বক্তার প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে এবং বিষয়বস্তু বোঝার ক্ষেত্রে বাধা দেয়। কিন্তু ফিলার শব্দ দূর করার উপর অতিরিক্ত মনোযোগ দিলে তা আরও বাড়তে পারে। কারণ আপনি যা এড়াতে চান তার উপর বেশি মনোযোগ দিয়ে বাকিটা ভুলে যান। ফিলার শব্দ আসলে ভাষার অনিশ্চয়তা এবং অস্পষ্টতার ফলাফল। তাই ফিলার শব্দ সমস্যার মূল কারণ নয়, বরং উপসর্গ।”
তিনি বলেন, ফিলার শব্দ শুধু “যেমন,” “আসলে,” “মানে” এর মতো নয়। যে কোনো শব্দ যা
(১) ব্যাকরণগতভাবে প্রয়োজনীয় নয় এবং
(২) বক্তা বুঝতে পারেন না যে তিনি সেটি বলছেন—তা ফিলার শব্দ হতে পারে।
বক্তৃতা দেওয়ার পর কীভাবে উন্নতির জন্য মূল্যায়ন করবেন?
হেপনার বলেন, “এটি সহজ। বক্তাদের তাদের বক্তৃতা দেখা এবং শোনা উচিত। এক সময় এটি কঠিন ছিল, কিন্তু প্রযুক্তি এটি সহজ করে দিয়েছে। এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে ভিডিও ও অডিও বিশ্লেষণ সম্ভব। আসল প্রশ্ন হলো, বক্তারা তাদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের সাহস কিভাবে করবেন?
নিজেকে দেখতে ভয় লাগতে পারে। এটি এড়ানো বা দেরি করা সহজ। কিন্তু প্রকৃত ভিডিও ফুটেজের মতো নিরপেক্ষ প্রমাণের বিকল্প নেই। তাই আপনার ফোনকে একটি মহৎ কাজে ব্যবহার করুন এবং এটি আপনার উন্নতির হাতিয়ার হতে দিন।”
উপসংহার
আত্মবিশ্বাসী বক্তা হয়ে ওঠার জন্য শুধু অনুশীলন নয়, নিজের ভুলগুলো চিহ্নিত করা এবং তা সংশোধন করাও জরুরি। ফিলার শব্দের চেয়ে মূল সমস্যার দিকে মনোযোগ দিন, সঠিক শব্দ নির্বাচন করুন এবং নিয়মিত নিজের বক্তৃতা বিশ্লেষণ করুন।
মো. মহিউদ্দিন