ফাইল ছবি
শুধু ইবাদত পালনের জন্য নয়, বরং নিজেদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা লাভের জন্যেও মুসলমানদের নিয়মিত নামাজ আদায় করা উচিত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের নানা দেশের গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
নিয়মিত নামাজ আদায় করলে আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কি কি উপকার হয়?
মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে কোলেস্টেরল বা চর্বির দ্বারা দেহের শিরা উপশিরা গুলো সংকুচিত হতে থাকে। ফলে দেখা দেয় অসংখ্য রোগ-ব্যাধি। যার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ রোগ, অকালে বুড়িয়ে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা অন্যতম। এই কোলেস্টেরল রোধ করার সর্বোত্তম পন্থা হলো ব্যায়াম, যা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে খুব ভালোভাবে পূরণ হয়ে যায়।
হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজে শেফা ও আরোগ্য রয়েছে।’
পাকিস্তানের বিখ্যাত হৃদ রোগ চিকিৎসক, ডাক্তার মোহাম্মদ আলমগীর, এই হাদিসের সত্যতা প্রমাণের জন্য, একটি মেডিকেল টিম গঠন করেন। একজন নামাজীর শরীরে, তারা নামাজরত অবস্থাতেই ইলেকট্রনিক রেডিওলজির মাধ্যমে পরীক্ষা করেন এবং দেখতে পান, তাকবীরে উলা অর্থাৎ নিয়ত বাঁধার জন্য যখন কনুই পর্যন্ত হাত কাঁধ বরাবর উঠানো হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বেড়ে যায়। কিয়াম অর্থাৎ দাঁড়ানো অবস্থায় হাত বেঁধে রাখার সময়, কনুই থেকে কবজি ও আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত হাত ব্যবহৃত হয়। এতেও রক্তের চলাচল তীব্র হয়। এরপর রুকু, রুকুর সময় হাঁটু, কনুই, কবজি এবং কোমরের সবগুলি জোর প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দেয়, ফলে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। সেজদাতে হাত, পা, পেট, পিঠ, কোমর, রান ও শরীরের সবগুলি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জোড়ায় নাড়া পড়ে এবং টানটান থাকে, এমত অবস্থায় রক্ত মস্তিষ্ক পর্যন্ত সঞ্চালিত হয়। তাশাহুদের বৈঠকের সময়, কোমর থেকে পা পর্যন্ত রগগুলি টানটান হয়ে থাকে, এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। আর সবশেষে সালাম, সালাম ফেরানোর সময় গর্দানের দুই দিকের জোড়াগুলোই কাজ করে এবং গর্দান ঘুরানোর সময় রক্ত সঞ্চালন তীব্র হয়।
পাকিস্তানের আরেক চিকিৎসক, ডাক্তার মাজে জামান ওসমানী ফিজিওথেরাপিতে উচ্চ ডিগ্রি নেয়ার জন্য ইউরোপে গিয়েছিলেন। সেখানকার বিশেষজ্ঞরা তাকে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, নামাজের মত ব্যায়ামের মাধ্যমে বড় বড় রোগগুলিও ভালো করা সম্ভব। যেমন, মেন্টাল ডিজিজ বা মস্তিষ্কের রোগ, স্নায়ুবিক রোগ, অস্থিরতা ও অবসাদজনিত রোগ, হৃদ রোগ, আর্থ্রাইটিস, ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ, পাকস্থলীর ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। নামাজের প্রতিটা ধাপে ধাপে রক্তের এমন সঞ্চালন আর শারীরিক অনুশীলন দেখে, অবাক পশ্চিমা বিজ্ঞানীরাও।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত ধ্বনিতত্ত্ববিদ হার্ডি উইলিয়াম লেট বিটার বলেছেন, নামাজের মধ্যে ইমাম যখন কোরআন তেলাওয়াত করে, তখন মুক্তাদিরা গভীর মনোযোগের সঙ্গে তা শ্রবণ করে। কোরআনের প্রতিটি শব্দই একটি ইউনিট। তেলাওয়াত এবং শ্রবণের মাঝখানে, একটি বিশেষ ধরনের তীব্র আলোকরশ্মি তৈরি হয়। সাধারণত প্রতিটি আলোর নেগেটিভ এবং পজিটিভ দুটো দিক থাকে। কোরআনের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দই পজিটিভ। তাই নামাজী ব্যক্তির উপর যখন সেই শব্দের প্রভাব পড়ে, তখন তাদের বহু রোগ ভালো হয়ে যায়।
শুধু শারীরিক উপকারিতাই নয়, নামাজের রয়েছে মানসিক উপকারিতাও।
যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত লেখক উইলিয়াম ক্রুক্স তার জনপ্রিয় বই “রিসার্চ ইন দা ফেনোমেনা অফ স্পিরিচুয়ালিজমে” লিখেছেন, লোভ-লালসা, কৃপণতা, হিংসা, ঘৃণা, প্রতিশোধ গ্রহণ, এরকম ঘৃণ্য অভ্যাসের কারণে মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। এসব রোগে আক্রান্ত মানুষ যদি খুশু-খুজুর সঙ্গে নামাজ আদায় করতে শুরু করে, তবে শিগগিরই এসব রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হবে।
নামাজ এমন একটি ইবাদত যাতে রয়েছে ভারসাম্যপূর্ণ শারীরিক অনুশীলন। নামাজে হাত তোলা, হাত বাঁধা, নিচের দিকে চোখ রাখা, আবার হাত ছেড়ে দেয়া, ঝুঁকে যাওয়া, মন-মস্তিষ্ককে কেন্দ্রীভূত রাখা, অধিক রক্ত সঞ্চালনের সুযোগ দেয়া, কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে হাঁটু ভেঙে বসা, এসব কিছুই হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ব্যায়ামের পদ্ধতি।
মো. মহিউদ্দিন