প্রতীকী ছবি
আপনি যদি অধিকাংশ মানুষের মতো হন, তাহলে হয়তো জীবনের অনেক কিছুই অবচেতনভাবে অবহেলা করেন। আমাদের জীবনকে সহজ এবং আনন্দময় করে তুলতে ছোট ছোট বিষয়গুলো আমরা প্রায়শই ভুলে যাই।
স্বাস্থ্যকে ততক্ষণ গুরুত্ব দিই না, যতক্ষণ না অসুস্থ হই। অবসর সময়ের মুল্য বুঝি না, যতক্ষণ না দায়িত্বে ডুবে যাই। এটা মানুষের স্বভাব, কিন্তু মনোবিজ্ঞানের মতে, এই অভ্যাসটি বদলানো উচিত। সত্য হলো, আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছু আছে যা বেশি কৃতজ্ঞতা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু সেগুলোকে উপেক্ষা করে আমরা নিজেদের গভীর আনন্দ এবং তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত করি।
এখানে জীবনের আটটি বিষয় দেওয়া হলো যা হালকাভাবে নেওয়া বন্ধ করা উচিত-
১. সুস্বাস্থ্য: ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ’ প্রবাদটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা সাধারণত ভালো স্বাস্থ্যের মুল্য বুঝি না, যতক্ষণ না অসুস্থতা বা আঘাতের মুখোমুখি হই। আমাদের দেহ ঠিকমতো কাজ করছে বলেই আমরা দৈনন্দিন কাজ করি। কিন্তু এই জটিল প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে আমরা খুব কমই চিন্তা করি।
সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম বা পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব ততক্ষণ বুঝি না, যতক্ষণ না এর অবহেলায় ফল ভোগ করতে হয়।
মনোবিজ্ঞানের মতে, আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কেবল আমাদের জীবনযাত্রার মানই উন্নত করে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। তাই পরের বার যখন দেখবেন আপনি সহজে হাঁটতে বা দৌড়াতে পারছেন বা কোনো ব্যথা ছাড়া ঘুম থেকে উঠেছেন, তখন এক মুহূর্তের জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন। ভালো স্বাস্থ্য হলো এমন একটি আশীর্বাদ যা কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।
২. ব্যর্থতা: ব্যর্থতাকে গুরুত্ব দেওয়া অদ্ভুত শোনালেও এটি আমাদের জীবনে অপরিহার্য। কারণ, ব্যর্থতা এমন কিছু শেখায় যা সফলতা কখনো পারে না। সাফল্য কেবল যা আমরা জানি তা নিশ্চিত করে। কিন্তু ব্যর্থতা আমাদের মূল্যায়ন, শেখা এবং উন্নতি করতে বাধ্য করে।
মনোবিজ্ঞানের মতে, ব্যর্থতা চরিত্র গঠন ও আত্মোন্নয়নের শক্তিশালী একটি হাতিয়ার। এটি স্থিতিস্থাপকতা, অভিযোজনক্ষমতা এবং নম্রতা বাড়ায়। ব্যর্থতাকে ভয় না পেয়ে জীবনের একটি মূল্যবান অংশ হিসেবে গ্রহণ করুন। এটি কখনোই অবহেলা করার মতো নয়।
৩. পরিবর্তনের ক্ষমতা: আমাদের অনেকেই মনে করি আমরা পরিবর্তন আনতে অক্ষম। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমাদের মস্তিষ্ক পরিবর্তনের জন্য তৈরি। স্নায়ুবিক সংযোগ গঠনের ক্ষমতা আমাদের নতুন কিছু শেখার, অভ্যাস পরিবর্তন করার এবং জীবনকে নতুনভাবে দেখার সুযোগ দেয়। আপনি বর্তমান পরিস্থিতিতে আটকে নেই। আপনার হাতে আছে নিজেকে উন্নত করার ক্ষমতা।
৪. একাকীত্বের মুহূর্ত: আজকের সংযুক্ত পৃথিবীতে একা থাকার সময়কে আমরা অনেক সময় অবহেলা করি। কিন্তু বিশ্বের কোলাহল এবং চাহিদা থেকে দূরে নিজেদের জন্য সময় বের করা আমাদের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই একান্ত মুহূর্তগুলো আমাদের আত্ম-অন্বেষণ এবং মানসিক পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়।
মনে রাখবেন, নিজের জন্য সময় বের করা একেবারেই ঠিক। আপনি এটির যোগ্য। একাকীত্বের মুহূর্তগুলি মূল্যবান এবং কখনই এগুলিকে হালকা করে দেখা উচিত নয়।
৫. শেখার ক্ষমতা: প্রতিদিন আমরা নতুন কিছু শিখি। এটি আমাদের মস্তিষ্কের এক অসাধারণ গুণ। পরবর্তীবার যখন কিছু শিখতে বাধ্য হবেন, বিরক্ত না হয়ে কৃতজ্ঞ হোন। কারণ, এটি আমাদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।
এই ক্রমাগত শেখার প্রক্রিয়াটি আমাদের গঠন করে, আমাদের মানিয়ে নিতে সাহায্য করে এবং জীবনকে আকর্ষণীয় এবং গতিশীল করে তোলে। পরের বার যখন আপনি শেখার জন্য নতুন কিছুর মুখোমুখি হবেন, তখন হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন না। পরিবর্তে, জ্ঞান এবং বৃদ্ধির জন্য আপনার মস্তিষ্কের ক্ষমতার প্রশংসা করুন। এটি সত্যিই এমন কিছু যা হালকা করে নেওয়া উচিত নয়।
৬. প্রকৃত বন্ধুত্ব: প্রকৃত বন্ধুরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। জীবনের ব্যস্ততায় তাদের অবহেলা করবেন না। তাদের মূল্যায়ন করুন এবং জানিয়ে দিন তারা আপনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে, আমরা মাঝে মাঝে এই বন্ধুত্বের প্রশংসা করতে ভুলে যাই। আমরা নিজেদের উদ্বেগ এবং দায়িত্বের মধ্যে আটকে যাই এবং আমাদের বন্ধুদের বলতে ভুলে যাই যে তারা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
৭. সময়: আমরা সকলেই ‘আমি আগামীকাল এটি করব’ বলেছি। আমরা আমাদের স্বপ্ন বিলম্বিত করি, আমাদের লক্ষ্য ও সুখ স্থগিত করি, এই ভেবে যে আমাদের অনন্ত আগামীকাল আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সময় একটি সীমিত সম্পদ।
প্রতিটি চলে যাওয়া সেকেন্ড হলো এমন এক সেকেন্ড যা তুমি আর কখনো ফিরে পাবে না। এটি নতুন কিছু শেখার, প্রিয়জনের সাথে সংযোগ স্থাপনের, আবেগ অনুধাবন করার, এমনকি নিজের জন্য একটু সময় বের করার সুযোগ।
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। এটি আমাদের দীর্ঘসূত্রিতা বা পরিবর্তনের ভয়ের প্রতি উদাসীন হয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। তাই এমন জিনিসের জন্য এটি নষ্ট করো না, যা তোমাকে আনন্দ দেয় না বা তোমাকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে না। সময়কে বুদ্ধিমানের সাথে ব্যবহার করুন। এটি সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসগুলির মধ্যে একটি এবং কখনোই তা হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
৮. নিজের মূল্য: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজের মূল্য কখনো অবহেলা করবেন না। আপনি যথেষ্ট এবং অনন্য। বিশ্ব হয়তো আপনার মূল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবে, কিন্তু নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। কারণ, আপনি এবং আপনার অবিশ্বাস্য মূল্য কখনোই অবহেলা করার মতো নয়।
এম হাসান