ছবিঃ সংগৃহীত
বিবাহকে আমরা অনেক সময় একধরনের রূপকথার সম্পর্ক হিসেবে ভাবি—যেখানে দুজন মানুষ একে অপরের জন্য একদম নিখুঁত। কিন্তু যারা বিবাহিত জীবনে অনেকদিন কাটিয়েছেন, তারা এক বাক্যে স্বীকার করবেন—বিবাহ কখনোই সহজ নয়। এটি এমন এক সম্পর্ক, যা প্রতিনিয়ত যত্ন ও প্রচেষ্টা দাবি করে।
এই লেখায় আমরা এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়ে কথা বলব, যা অনেকেই কেবল কঠিন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখতে পারেন।
কেউই জন্মগতভাবে ভালো সঙ্গী হন না
আমরা প্রায়ই মনে করি, কেউ কেউ স্বভাবগতভাবেই ভালো সঙ্গী হতে পারে। তবে এটি আসলে একটি মিথ। ভালো সঙ্গী হওয়া কোনো জন্মগত গুণ নয়; এটি শেখা যায় এবং চর্চার মাধ্যমে অর্জন করা যায়।
বিবাহে ভালো সঙ্গী হওয়ার জন্য অনেক দক্ষতা প্রয়োজন, যেমন—যোগাযোগের ক্ষমতা, সহানুভূতি, সময় ব্যবস্থাপনা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ। এসব গুণ কেউ সঙ্গে করে নিয়ে আসেন না। জীবনের অভিজ্ঞতা, ব্যর্থতা এবং চর্চার মাধ্যমে এগুলো তৈরি হয়।
উদাহরণ হিসেবে, যোগাযোগের কথাই ধরা যাক। অনেক দম্পতিই নিজেদের চাহিদাগুলো ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারেন না। কিংবা সমস্যার সমাধানের সময় রাগ বা বিরক্তি দেখিয়ে ফেলে। তবে এগুলো ধীরে ধীরে শেখা যায়, যদি আপনি নিজেকে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত করেন।
এছাড়া, বিবাহ আপনাকে নিজের এমন কিছু দিকের মুখোমুখি করে, যা হয়তো আগে জানা ছিল না। হতে পারে, আপনি এমন পরিবারে বড় হয়েছেন যেখানে আবেগ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা হতো না। তাই এখন আপনিও মনের কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন। অথবা, আপনি হয়তো সমস্যাকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন, যদিও এতে সম্পর্কের ক্ষতি হয়।
এই দুর্বলতাগুলোকে স্বীকার করা এবং এগুলো নিয়ে কাজ করা জরুরি। তবে সুসংবাদ হলো, চেষ্টার মাধ্যমে যে কেউ ভালো সঙ্গী হয়ে উঠতে পারেন।
আপনি যা দেবেন, সেটাই ফিরে পাবেন
বিবাহ কোনো প্যাসিভ অভিজ্ঞতা নয়; এটি একটি পারস্পরিক চেষ্টার সম্পর্ক। আপনি যা দেবেন, সেটাই ফিরে পাবেন। অর্থাৎ, আপনি যদি সম্পর্ককে সময় ও যত্ন দেন, তা আপনার সম্পর্কের মান বাড়াবে।
এখানে প্রচেষ্টার মানে হলো—সঙ্গীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা, একসঙ্গে সময় কাটানো, সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হওয়া এবং ভালো সময় ও খারাপ সময় একসঙ্গে সামলানো।
যখন দুজন সঙ্গীই সমানভাবে চেষ্টা করেন, তখন সেই সম্পর্ক ভার মনে হয় না; বরং এটি দুজনের জন্যই আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে। কিন্তু যদি এক পক্ষের প্রচেষ্টা কমে যায়, তাহলে অন্য পক্ষ ধীরে ধীরে বিরক্তি ও হতাশায় ডুবে যেতে পারে।
যেমন, দৈনন্দিন ব্যস্ততার কারণে আমরা প্রায়ই ঘনিষ্ঠতার গুরুত্ব ভুলে যাই। কিন্তু ঘনিষ্ঠতা নিজে থেকেই টিকে থাকে না। এটি ঠিক গাছের মতো, নিয়মিত পানি না দিলে তা শুকিয়ে যাবে।
তেমনি, ঝগড়া বা সমস্যার মুখোমুখি না হয়ে এড়িয়ে চলা সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু এটি অমীমাংসিত সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে তোলে। তাই কঠিন হলেও, সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করাই সঠিক পথ।
এই দুটি শিক্ষার মিল
এই দুই শিক্ষা একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। ভালো সঙ্গী হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা প্রয়োজন, এবং সেই প্রচেষ্টা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলে।
যেমন, ভালোভাবে যোগাযোগ শিখতে হলে চর্চা করতে হয়। সঙ্গীর দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করলে, আপনি আরও দক্ষ হয়ে ওঠেন। এতে কেবল সম্পর্কই নয়, আপনি নিজেও আরও ভালো মানুষ হয়ে উঠেন।
অন্যদিকে, সম্পর্কের যত্ন না নিলে দূরত্ব তৈরি হয়। ধীরে ধীরে সেই দূরত্ব সম্পর্কের ক্ষতি করে এবং তা মেরামত করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
তাই বিবাহকে শুধুই একটি সম্পর্ক নয়, বরং শেখার একটি যাত্রা হিসেবে দেখুন। প্রতিদিন ছোট ছোট প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনি শুধু ভালো সঙ্গীই নন, ভালো মানুষও হয়ে উঠতে পারবেন।
মারিয়া