ছবি: সংগৃহিত।
ডিমকে পুষ্টির ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মুরগি ও হাঁসের ডিম—দুই ধরনের ডিমই পুষ্টিকর ও জনপ্রিয়। তবে অনেকেই ভাবেন, এই দুই ডিমের মধ্যে কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর বা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ? বিশেষত, শরীরের চাহিদা ও খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে সঠিক ডিম বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
পুষ্টিবিদ আঞ্জুমান আরা শিমুল জানিয়েছেন, মুরগির ডিম এবং হাঁসের ডিমের মধ্যে পুষ্টিগুণের পার্থক্য থাকলেও দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস, পুষ্টির চাহিদা এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে কোন ডিম বেশি উপযোগী তা নির্ধারণ করতে হবে।
মুরগির ডিম: সহজলভ্য ও ভারসাম্যপূর্ণ পুষ্টি
মুরগির ডিম পৃথিবীর সর্বাধিক প্রচলিত প্রোটিন উৎস। প্রতিটি সংস্কৃতি ও খাদ্যতালিকায় মুরগির ডিমের এক অনন্য স্থান রয়েছে।
পুষ্টিগুণ
প্রোটিন: একটি মুরগির ডিমে গড়ে ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা কোষ গঠন, পেশী শক্তিশালীকরণ এবং হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে।
ক্যালরি ও চর্বি: একটি মাঝারি আকারের ডিমে প্রায় ৭০-৭৫ ক্যালোরি এবং ৫ গ্রাম চর্বি থাকে। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম, যা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সরবরাহ করে।
ভিটামিন ও খনিজ: ভিটামিন এ, ডি, ই, এবং বি১২-এর পাশাপাশি সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস, এবং আয়রন সমৃদ্ধ।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
মুরগির ডিম সহজপাচ্য, অধিকাংশ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তাকারী কোলিন সমৃদ্ধ। ভিটামিন ডি হাড়ের শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হাঁসের ডিম: উচ্চ পুষ্টির শক্তিশালী উৎস
হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের তুলনায় কম প্রচলিত হলেও পুষ্টিগুণে এটি অনন্য। আকারে বড় এবং স্বাদে গাঢ় এই ডিম পুষ্টি ও শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকর।
পুষ্টিগুণ
প্রোটিন: হাঁসের একটি ডিমে প্রায় ৯ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা মুরগির ডিমের তুলনায় বেশি।
ক্যালরি ও চর্বি: একটি হাঁসের ডিমে প্রায় ১৩০ ক্যালোরি এবং ১০ গ্রাম চর্বি থাকে। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
কোলেস্টেরল: হাঁসের ডিমে ৬২০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা মুরগির ডিমের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি।
ভিটামিন ও খনিজ: হাঁসের ডিমে ভিটামিন ডি ও বি১২, আয়রন, জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
শক্তি চাহিদা বেশি থাকলে হাঁসের ডিম উপকারী। এতে থাকা ওমেগা-৩ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কাদের জন্য কোনটি উপযুক্ত?
ওজন কমাতে চাইলে:
যারা কম ক্যালোরি চাহিদায় ডায়েট অনুসরণ করছেন, তাদের জন্য মুরগির ডিম উত্তম। এটি কম ক্যালোরি ও চর্বি সরবরাহ করে।
অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হলে:
হাঁসের ডিম উচ্চ প্রোটিন ও ক্যালোরি সরবরাহ করে, যা ভারী কাজ করা বা শারীরিক পরিশ্রম বেশি হয় এমন ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ।
কোলেস্টেরলের ঝুঁকিতে থাকলে:
যাদের কোলেস্টেরল বা হৃদরোগের সমস্যা আছে, তারা হাঁসের ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। মুরগির ডিমও পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য:
মুরগি ও হাঁসের ডিমে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য উপকারী। তবে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের কারণে হাঁসের ডিম কম খাওয়াই ভালো।
অ্যালার্জির প্রবণতা:
অনেকে হাঁসের ডিম খেলে অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন। তাই এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মুরগি ও হাঁসের ডিম দুটোই পুষ্টিকর। তবে পুষ্টির চাহিদা এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনায় সঠিক ডিম বেছে নেওয়া জরুরি। সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রেখে ডিম খেলে শরীর পাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি।
সায়মা ইসলাম