ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১

ফ্যাশন শিল্প

ফিরে দেখা সময়

রেজা ফারুক

প্রকাশিত: ২০:৪১, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

ফিরে দেখা সময়

চিরন্তন নিয়ম মেনে ২০২৫ এসে দাঁড়াল প্রকৃতির দুয়ারে। পেছনে ফেলে আসা ২৪ এর যে বিহ্বল সময়কে অতিক্রম করে আসা হয়েছে। তারই আলোকে নতুনভাবে দিন শুরু করেছে সবাই। বলা চলে শিল্প সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে নতুন বিশ্লেষণ। এখন চলছে শীত ঋতু। রৌদ্র মোড়ানো কুয়াশা ভেজা পথে-প্রান্তরে শীতের আমেজ যা এখন প্রচ্ছন্নভাবে সবাইকে স্পর্শ করে যাচ্ছে। এই স্পর্শের মধ্যেই বুটিক শিল্পের বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। শীতকে সামনে রেখে বুটিক শিল্প তথা ফ্যাশন ধারাতেও নতুন পরিবর্তন অব্যাহত রেখে বসন্তের আয়োজন চলবে ব্যাপকভাবে।
ফেলে আসা দিনের দিকে তাকালে দেখা যায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকটসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্ব গতিতে মানুষ ফ্যাশন শিল্পের দিকে খুব একটা ফিরে তাকাতে পারেনি। প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ ছাড়া ঈদ, পূজা ও পহেলা বৈশাখের মতো যেসব উৎসব সামনে এসেছে সেটা উপলক্ষ করে কেনাকাটা করেছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ খুব একটা ছিল না। কেননা অর্থের সঙ্গতি একটা বিরাট ব্যাপার বিশেষ করে ফ্যাশন হাউজের যারা ক্রেতা সেই মধ্যবিত্তের বিশাল অংশটি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন। ফ্যাশন হাউজমুখী হয়েছেন খুবই কম। দৈনন্দিন প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা কেনাকাটা করেনি। সারা বছর এ পোশাক শিল্পটিকে স্থবিরতা ঘিরে রেখেছিল। রং-সুতাসহ যে সব বিষয় এই ফ্যাশন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেগুলোর মূল্য বৃদ্ধির কারণেও এই শিল্পে অনেকটা স্থবিরতা নেমে আসে। নগরকেন্দ্রিক এ শিল্পের পাশাপাশি লুঙ্গি কিংবা গামছা-চাদরসহ গ্রামীণ জনপদের এ  শিল্পেও আশাহীনতা অব্যাহত রয়েছে। এ শিল্পের সম্ভাবনার যে ক্ষেত্রগুলো ছিল তাও ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। জিনিসপত্রের দামের কারণে খুব এগিয়ে যেতে পারেনি। বিশেষ করে টাঙ্গাইল শাড়ির কথা যদি বলা হয়, তা হলে বলতে হবে এই শিল্পটি   একেবারে যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে যে তাঁত শিল্পীরা জড়িত ছিলেন অনেকেই এই ব্যবসা পরিহার করে অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। টিকে থাকা এবং ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখাই হলো এর কারণ। এর পেছনের মূল কারণ হলো মূল্যস্ফীতিতে দৈনন্দিন জীবনের ব্যয় বৃদ্ধি।
পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও একটা বড় বিষয়। ফেলে আসা সময়ে বিশেষ করে গত ২০২৪ সালটি প্রথম থেকেই ছিল রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত। যার ফলে এ শিল্পটা এগুতে পারেনি। এখন এই পরিস্থিতি অতিক্রম করে সামনের দিনে কিভাবে তারা নতুনভাবে কাজ করবেন সেটাই এখন তাদের ভাবনার মধ্যে উদিত হয়েছে। এখন দেখার বিষয় ২০২৫ সালটি তাদের কেমন যাবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দ্রব্যমূল্যের সহনীয় অবস্থা, এই দুটি   বিষয়ে উত্তরণ না ঘটলে ফ্যাশন শিল্পের ছবিটা ঝাপসাই থেকে যাবে। তাই এ পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারিভাবেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এই শিল্প যদি টিকে না থাকে তা হলে এই শিল্পের সঙ্গে লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ভীষণ সংকটের মধ্যে পতিত হবে এবং তাদের জীবন অনেকটাই অনিশ্চিয়তায় আবৃত হয়ে পড়বে। তাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ফ্যাশন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সবাই সরকারের কাছে দাবি করেছেন, যেন তাদের প্রতি সরকার সুদৃষ্টি দেন। বাঙালির ঐতিহ্যকে  ধারণ করে দেশীয় ফেব্রিকে তৈরি এই পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে এ শিল্পের সঙ্গে যারা দীর্ঘকাল যাবৎ যুক্ত  রয়েছেন তারা সবাই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সামগ্রিকভাবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ শিল্পের পেছনে উদ্যোক্তাদের অবদানের পাশাপাশি মিডিয়া শিল্পের অবদানও কম নয়।
তাই সবার প্রত্যাশা এ শিল্পের জন্য ২০২৫ একটি মাইলফলক বছর হয়ে চমৎকারভাবে দেশীয় ফেব্রিকের তৈরি পোশাক শিল্পটি ঘুরে দাঁড়াতে পারে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অনস্বীকার্য একটি বিষয়। ঐতিহ্যের স্মারক গেঁথে এই শিল্প বহুদূর বাংলাদেশের চিরায়ত রূপটিকে এগিয়ে নেবে। বাংলা ফিরে পাবে তার গর্বিত প্রহর। পোশাক শিল্পে সুদিন ফিরে আসবেÑ এই প্রত্যাশা সবার।
সময়কে ধারণ করে। বাঙালির আবহমান ধারাকে ধারণ করেই দেশীয় পোশাক শিল্পটি নিজের অবস্থানকে সৃজন করবে। ২০২৫ সাল এই অঙ্গীকারে রৌদ্রে মোড়ানো আগামী স্বপ্নকে বুকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে আসন্ন সময়।

×