ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

ঐতিহ্য ও আধুনিকতা

জলি রহমান

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ৫ জানুয়ারি ২০২৫

ঐতিহ্য ও আধুনিকতা

সময়ের চাকা ঘুরছে দ্রুত বেগে। চোখের পলকে শেষ হয়ে যায় এক একটি বছর। মনে হয় এইতো সেদিন শুরু হলো ২০২৪ সাল। অথচ বছরটির সমাপ্তি হয়েছে পাঁচদিন আগেই। ইতোমধ্যে আমরা স্বাগত জানিয়েছি ২০২৫ সালকে। ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন তীব্র শীত নিয়ে হাজির হয়েছে নতুন বছর। সূর্য তার স্বরূপে এসেছে বছরের দুটি দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে। সদ্যসমাপ্ত বছরে ঘটেছে নানা ঘটনা। যার রেশ ছড়িয়েছে ফ্যাশন জগতেও। কিছুটা ছন্দ পতন হলেও সবকিছু আবার ফিরছে স্বাভাবিক ছন্দে। পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে দেশীয় পোশাক শিল্পে ‘ইজি টু ওয়্যার‘ ধারার বিকাশ ঘটেছে। এ বছর দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি এবং আন্তর্জাতিক ফ্যাশন জগতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এবং নতুন ট্রেন্ডও দেখা গেছে।
জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এটি শুধু পোশাকেই নয়, বরং একটি সামাজিক বার্তা যা চেতনার প্রতিফলন হিসেবে কাজ করেছে। পরিস্থিতি আমাদের শিখিয়েছে, ফ্যাশন শুধু বাহ্যিক স্টাইল নয়, এটি পরিবেশ এবং মানুষের প্রতি দায়িত্বশীলতার প্রতীকও বটে। বাংলাদেশের ফ্যাশনে অভ্যুত্থানের প্রভাব দেখা যাবে আগামী বছরগুলোতেও। যেখানে স্থানীয় ঐতিহ্য এবং সামাজিক সচেতনতা থাকবে ফ্যাশনের কেন্দ্রবিন্দুতে। এছাড়া নতুন প্রজন্মের আগ্রহ দেখা গেছে সাসটেইনেবল ফ্যাশন এবং ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনের প্রতি।
সদ্য শেষ হওয়া বছরটিতে পার্টিতে খুব বেশি ফর্মাল নয় বরং আরামদায়ক ক্যাজুয়াল লুকে বেশি ছিল তরুণ-তরুণীরা। প্রতি বছরই ফ্যাশন স্টেটমেন্টে কিছু সংযোজিত হয় আবার কিছু বাদ যায়। তবে করোনার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে, মানুষ জীবনযাত্রাকে অনেক সহজ করেছে। যার প্রভাব পড়েছে পোশাকেও। হালকা ও সিম্পল মোটিফের পোশাক পছন্দ করে সবাই। এ বছরও ফ্যাশনে এমন হালকা মেজাজের পোশাক থাকবে চাহিদার শীর্ষে এমনটাই জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনার। সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে মানুষ এখন বিশ্বকে দেখতে পায়। জীবনযাত্রায় সেই প্রভাবও পড়ে। আরামদায়ক  ফেব্রিকে উজ্জ্বল রঙের পোশাকের আধিপত্য দেখা যাবে এ বছর। পোশাকে ফ্লোরাল মোটিফ আনন্দ প্রকাশ করে। বিগত বছরের মতো এ বছরও থাকবে এ মোটিফ। তবে দেখা যাবে বৈচিত্র্য। ঢিলেঢালা শর্ট লেন্থের কুর্তি কামিজের চল। এর সঙ্গে বিভিন্ন কাটছাঁটের মানানসই প্যান্ট তো আছেই। বিগত বছরগুলোর কাজের অভিজ্ঞতা, ক্রেতার চাহিদা, পছন্দ এমন নানা বিষয় থেকেই জন্ম হয় নতুন কিছু। এ বছরে সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই নতুন নতুন কাজ করবেন বলে জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। প্রতি বছরই কিছু কাজ থাকে যা হয় দিবসভিত্তিক, কিছু থাকে ট্রেন্ডি ও ফ্যাশনেবল। আবার কিছু পোশাকে দেখা মেলে দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। ফেব্রিক, নানান ধরনের ভ্যালু অ্যাডেড, পোশাকের ডিজাইন সবকিছুতেই নতুনত্ব আনার প্রয়াস থাকবে এ বছরে। থিমেটিক পোশাকের চাহিদা এখন অনেক বেশি। উৎসবভিত্তিক পোশাকগুলোয় এমনভাবে মোটিফ ও রঙের ব্যবহার করা হয় যা উৎসব ছাড়াও পরা যাবে যেকোনো সময়। প্রাচ্য আর প্রাশ্চাত্যের মিশেলে ফিউশন পোশাকের চল এ বছরও দেখা যাবে।
প্রতি বছরই উৎসব-পার্বণে দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নিয়ে নতুন নতুন কাজ করা হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পাশ্চাত্যের ফ্যাশন, সংস্কৃতির প্রভাব দেখা যায়। তাদের ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের মিশেলে ফিউশন পোশাকের দেখা মিলছে। এ বছর এমন ফিউশনধর্মী কাজ আরও বেশি হবে। বিগত বছরের থেকে এ বছরের ডিজাইনে যে আমূল পরিবর্তন হবে ব্যাপারটা এমন না। বরং আগের বছরের থেকে এ বছরের নকশা, রঙের মধ্যে আসবে ভিন্নতা। ঢোলা পোশাকের ধারা বেশ কিছু বছর পর গত বছর দেখা গেছে। এ বছর এ পোশাকের চাহিদা আরও বাড়বে। 

×