আজকের যুগে, যেখানে প্রযুক্তি এবং আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে শিশুরা বেশিরভাগ সময় গ্যাজেট বা টিভির পর্দায় সময় কাটায়, সেখানে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দিনের প্রথম অংশ, অর্থাৎ সকালের সময়, একজন শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। সঠিক সকালের অভ্যাস শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, অনেক সময় শিশুদের মধ্যে অলসতা এবং এক ধরনের অবস্থা দেখা যায়, যেখানে তারা সকাল সকাল উঠতে চায় না বা সঠিকভাবে দিনের শুরুটা করতে চায় না।
কিন্তু কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যদি শিশুর দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তবে তা তাদের মধ্যে সজীবতা, মনোবল এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। আজকে আমরা এমন ৫টি সকালের অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করব, যা শিশুরা গ্রহণ করলে তাদের অলসতা দূর হবে এবং তারা সারা দিন জীবন্ত ও কর্মঠ অনুভব করবে।
১. সকালে উঠে সোজা হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা
শিশুদের জন্য সকালের প্রথম কাজ হওয়া উচিত হালকা কিছু শারীরিক ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি। এটি শুধু শরীরকেই সক্রিয় করে না, পাশাপাশি তাদের মনকেও চাঙ্গা করে তোলে। সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে কিছুটা সময় কাটানো, ধীরে ধীরে শরীরচর্চা করা শিশুকে প্রফুল্ল এবং উজ্জীবিত রাখে। হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং বা কিছু যোগাসন শিশুর দৈনন্দিন রুটিনে যুক্ত করলে তাদের অলসতা অনেকটাই কমে যায়।
২. স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট খাওয়া
সকালে সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শিশুর শক্তি এবং মনোযোগের স্তর বৃদ্ধি পায়। প্রোটিন, ভিটামিন, এবং মিনারেলস সমৃদ্ধ ব্রেকফাস্ট যেমন ডিম, দুধ, ফল, ওটমিল, মিষ্টি আলু ইত্যাদি শিশুকে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়, যা তাকে পুরো দিনজুড়ে সতেজ রাখে। একপেট খালি বা অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে শিশুরা সকালের সময়টিতে আরও মনোযোগী এবং শক্তিশালী হতে পারে।
৩. সঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠা
শিশুরা দিনের প্রথম ভাগে ঘুম থেকে উঠে যদি দেরি করে, তবে তাদের মধ্যে অলসতা আসতে পারে। সুতরাং, প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠতে উৎসাহিত করা উচিত। সাধারণত, শিশুরা যদি সঠিক সময় ঘুমাতে যায় এবং প্রয়োজনীয় ঘুম পায়, তবে তারা সকালে তাজা এবং চনমনে থাকে। সঠিক সময়ে ঘুম এবং ঘুমের পর্যাপ্ত সময় শিশুর সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৪. সৃজনশীল কাজ করা
সকালের শুরুতে কিছু সৃজনশীল কাজ করা শিশুর মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। ছবি আঁকা, গান গাওয়া, লেখালেখি বা কোনো নতুন কিছু শিখে দেখা শিশুকে এক ধরনের উদ্দীপনা দেয়। এটি তার মনোযোগ এবং কনসেনট্রেশন ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে, যা সারা দিনের জন্য তার কার্যক্ষমতা বাড়ায়। একঘেয়ে কাজের পরিবর্তে সকাল বেলা সৃজনশীলতা ও শিখনের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. দৃষ্টিকোণ বদলানো - বাইরের প্রকৃতিতে সময় কাটানো
সকালে কিছুটা সময় বাইরের প্রকৃতিতে কাটানো শিশুর মন এবং শরীরের জন্য উপকারী। এটি তাদের শ্বাসযন্ত্রকে শুদ্ধ করে, মনকে শান্ত রাখে এবং শরীরকে তাজা করে। যদি সম্ভব হয়, শিশুকে বাইরে গিয়ে কিছুটা সময় ব্যয় করার জন্য উৎসাহিত করুন, যেমন বাগান বা পার্কে হাঁটা। প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিশুর মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং সজীবতা বৃদ্ধি পায়।
সকালের সময় শিশুর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে সঠিক অভ্যাস গড়ে তুললে তারা সারাদিনের জন্য সজীব এবং কর্মঠ থাকতে পারে। অলসতা দূর করার জন্য এই ৫টি অভ্যাস শিশুর দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এর মাধ্যমে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হবে, এবং তারা ভবিষ্যতের জন্য আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।