ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

একদিনের ট্যুরের সেরা ১০ স্পট

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

একদিনের ট্যুরের সেরা ১০ স্পট

ভ্রমণ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশে বেড়ানোর জায়গার অভাব নেই। তবে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেরই ফুরসত নেই দিনের পর দিন ঘুরে বেড়ানো।

বর্তমানে ডে লং ট্যুরের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। একদিনের ছুটিতেই ঘুরতে যাওয়া যায়, এমন স্থানের সন্ধান করেন কমবেশি সবাই। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে রওয়ানা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে সেখানে ও তার আশপাশে সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে আবার রাতে ফেরেন সবাই। ডে লং ট্যুরে শুধু ঢাকার আশপাশেই নয়, বরং চাইলে দূরেও যেতে পারবেন। তেমনই একদিনের ট্যুরে যাওয়ার জন্য ১০ স্থানের খোঁজ রইলো এই প্রতিবেদনে-

কুমিল্লা
কুমিল্লা জেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর জন্য সুপরিচিত। জেলার উত্তর পাশের পাহাড়ি অংশ ময়নামতি ও দক্ষিণ পাশ লালমাই নামে পরিচিত। লালমাই ও ময়নামতির মধ্যবর্তী শালবন বিহার একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। শালবন বিহার ও এর আশপাশে আছে প্রাচীন সভ্যতার বেশ কিছু নিদর্শন। শালবন বিহার থেকে মাত্র ৫-৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুমিল্লা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের সমাধিস্থল কুমিল্লার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

ময়নামতি জাদুঘর হলো কুমিল্লার আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ। এই জাদুঘরে আপনি দেখতে পাবেন প্রাচীন আমলের অস্ত্রশস্ত্র, ব্রোঞ্জের পাত্র, স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা ও ব্রোঞ্জের তৈরি ৮৬ ধরনের দ্রব্যাদি। শুধু তা ই নয়, এখানে আরও দেখবেন বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দির থেকে সংগৃহীত দেড়শ’রও বেশি বৌদ্ধমূর্তি। কুমিল্লা শহরের ৪-৫ কিলোমিটার বাইরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছাকাছি কোটবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) সৌন্দর্যও মুগ্ধ করার মতো।

কুমিল্লার আরেকটি দর্শনীয় স্থান ধর্মসাগর দিঘি। ধারণা করা হয় যে, ১৭৫০ কিংবা ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রজাহিতৈষী রাজা ধর্মপালের নামে রাখা হয়েছে দিঘিটির নাম। রাজা ধর্মপাল ছিলেন পাল বংশের রাজা ও প্রজাদরদী মানুষ। দুর্ভিক্ষের সময় দুর্ভিক্ষপীড়িত লোকজনকে পানি দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য এই দিঘিটি খনন করা হয়। রাজার উদ্দেশ্য ছিল প্রজাদের পানির কষ্ট দূর করা। প্রতিদিন বিকেলে এই দিঘির পাড়ে ভিড় জমান অনেক দর্শনার্থী। কুমিল্লায় বেড়াতে গিয়ে আর যে বিষয়টি একটুও ভুলবেন না তা হলো দেশসেরা রসমালাইয়ের স্বাদ পরখ করা। এর পাশাপাশি এখানকার খাদি কাপড়ের পরিচিতিও ব্যাপক।

যাতায়াত ও থাকা
দেশের যে কোনো স্থান থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনে আপনি সহজেই কুমিল্লায় নেমে যেতে পারেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ আরও কয়েকটি জেলা থেকে বাস সার্ভিস আছে। ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে এশিয়া লাইন, তিশা, বিআরটিসি, ইকোনো সার্ভিস, রয়েল কোচ আড়াই ঘণ্টার মধ্যে কুমিল্লায় পৌঁছে।

রাতে থাকার জন্য শহরে আছে হোটেল রেড প্রুফ ইন, কানন লেইক রিসোর্ট লিমিটেড, হোটেল বিলাস, হোটেল সাগরিকা, হোটেল পিপাসা, হোটেল গোমতী- মাঝারি বাজেটের হোটেল। একটু নিরিবিলি ও আরামদায়ক বসবাসের জন্য আছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) গেস্ট হাউজ, যা ‘রাণীর কুঠি’ নামেও পরিচিত।

ময়মনসিংহ
হাওর জঙ্গল মহিষের শিং, এই তিনে ময়মনসিং- প্রবাদ প্রবচনে এভাবেই পরিচয় করানো হতো এক সময় ভারতবর্ষের বৃহত্তম জেলা ময়মনসিংহকে। বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা ময়মনসিংহকে করেছে আরও সমৃদ্ধ। এর মধ্যে মুক্তাগাছার রাজবাড়ি, আলেকজান্দ্রা ক্যাসল, শশীলজ, সিলভার প্যালেস, রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি ও গৌরীপুর রাজবাড়ি বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ জাদুঘর, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদী, বিপিন পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন পর্যটকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়।

ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শশীলজে যেতে পারবেন। এজন্য সেখান থেকে রিকশা বা অটো নিন। এর ১০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন স্থানীয়ভাবে ময়মনসিংহ রাজবাড়ি নামে পরিচিত শশীলজে। সেখানকার প্রধান ফটক পেরিয়ে প্রবেশ করলে মূল ভবনের সামনে চোখে পড়বে চমৎকার বাগান। বাগানের মাঝখানে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা ও গ্রিক দেবী ভেনাসের পাথরের মূর্তি।

শশীলজের খুব কাছে অর্থাৎ মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বেই আছে আরও এক দর্শনীয় স্থান আলেকজান্ডার ক্যাসেল। টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত আলেকজান্ডার ক্যাসেলে হেঁটে পৌঁছাতে মিনিট দশেক সময় লাগে। ‘লোহার কুঠি’ খ্যাত এই আলেকজান্ডার ক্যাসেলে নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, নবাব সলিমুল্লাহ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, লর্ড কার্জনসহ বরেণ্য ব্যক্তিরা অতিথি হিসেবে রাত কাটিয়েছেন।

এই ক্যাসলের পেছনে আছে দুটি অশ্বত্থ গাছ। জানা যায়, এই ক্যাসলে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অশত্থ গাছের ছায়ায় বসে সময় কাটাতেন। বর্তমানে আলেকজান্ডার ক্যাসেলের আটটি ঘরে প্রায় ১৫ হাজার বই রাখা আছে। আলেকজান্ডার ক্যাসেল থেকে বেড়িয়ে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। এজন্য থানা ঘাটে সেলিম হোটেলে চলে যেতে পারেন। সেলিম হোটেলে সুলভ মূল্যে দেশি খাবার পাওয়া যায়।

ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ১২০০ একর জায়গা নিয়ে এটি অবস্থিত। কারও পক্ষেই একদিনের মধ্যে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। তবে পর্যটকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলের বাগান, বৈশাখী চত্বর, লিচু ও আম বাগান, সবুজ মাঠ, লেক, ফিশ মিউজিয়াম, কৃষি মিউজিয়াম, সেন্ট্রাল মসজিদ, বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, মাছ চাষের পুকুর, গবাদি পশুর খামার, নান্দনিক সড়ক, বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন ও বিভিন্ন দর্শনীয় ভাস্কর্য ঘুরে দেখতে পারেন কম সময়ে।

যেতে পারেন জয়নুল আবেদিন পার্কেও। নদীর তীরের চমৎকার পরিবেশে অবস্থিত জয়নুল আবেদিন পার্ক। বিনোদনের জন্য এই পার্কে আছে ফোয়ারা, দোলনা, ট্রেন, ম্যাজিক নৌকা, মিনি চিড়িয়াখানা, বৈশাখী মঞ্চ, ঘোড়ার গাড়ি, চরকি ও বিভিন্ন খাবারের দোকান। যারা নদীর বুকে ভাসতে চান, তাদের জন্য সারি সারি নৌকার ব্যবস্থাও আছে। এই পার্কের অন্য প্রান্তে আছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। ২০ টাকার টিকিট কেটে সংগ্রহশালা ঘুরে দেখতে পারেন।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা জমিদার বাড়িটি সবার কাছে পরিচিত। অনেকে হয়তো এরই মধ্যে ঘুরে এসেছেন সেখান থেকে। এটি মুক্তাগাছা রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। ময়মনসিংহ শহর থেকে এই জমিদার বাড়ির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। টাঙ্গাইলগামী বাসে ৩০-৪০ টাকা ভাড়ায় মুক্তাগাছা যাওয়া যায়। এছাড়া ময়মনসিংহের টাউন হলের সামনে থেকে লোকাল বা সিএনজি রিজার্ভ করেও মুক্তাগাছা থেকে ঘুরে আসতে পারেন। লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ৪০-৪৫ টাকা। রিজার্ভে ২০০-২৫০ টাকা। মুক্তাগাছা যেতে ৪০-৫০ মিনিট সময় লাগে।

সেখানে নেমে রিকশা কিংবা সামান্য হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন মুক্তাগাছা জমিদার বাড়িতে। জমিদার বাড়ির সামনেই আছে ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী গোঁপাল পালের মণ্ডার দোকান। এই মিষ্টান্ন খেয়ে আসতে ভুলবেন না। ফেরার পথে মুক্তাগাছা থেকে লেগুনা, সিএনজি কিংবা বাসে পুনরায় ময়মনসিংহ শহরে যেতে হবে। ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে এনা, শৌখিন, শামীম পরিবহন, আলম এশিয়া, শ্যামলী বাংলা অথবা ইমাম পরিবহনের বাসে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকায় ফিরতে পারবেন।

ময়মনসিংহ যাওয়ার উপায় কী?
ঢাকার মহাখালী থেকে এনা পরিবহনে ২২০ টাকা ভাড়ায় প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় ময়মনসিংহ জেলা শহরে পৌঁছাতে পারবেন। এনা পরিবহন ছাড়াও ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রুটে শৌখিন, শামীম পরিবহন, আলম এশিয়া, শ্যামলী বাংলা এবং ইমাম পরিবহনের বাস চলাচল করে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসা বাসগুলো মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড এসে থামে।

ঢাকা থেকে ট্রেনে ময়মনসিংহ যেতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রা করলে বেলা ১১টার আগেই ময়মনসিংহে পৌঁছাতে পারবেন। শ্রেণিভেদে জনপ্রতি ট্রেনের টিকিটের মূল্য ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা। ঢাকা ছাড়া অন্য কোনো জেলা থেকে ময়মনসিংহ যেতে চাইলে আপনার সুবিধামতো যানবাহনে এমনভাবে যান যেন সকালের মধ্যে আপনি ময়মনসিংহ শহরে চলে আসতে পারেন।

পতেঙ্গা
চট্টগ্রামের অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। প্রিয়জনকে নিয়ে যারা একদিনের ট্যুরে ঘুরতে যেতে চান, তাদের জন্য সেরা হতে পারে এই সমুদ্র সৈকত। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে স্থানটি বেশ জনপ্রিয়। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পতেঙ্গা।

পতেঙ্গা সৈকতের চারপাশে প্রকৃতির নৈসর্গিক মনোরম দৃশ্যের হাতছানি সঙ্গে সমুদ্রপাড়ের কর্মব্যস্ততা ও বিশাল সমুদ্রের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর মিলনমেলা। সাগর পাড়ের বালুকা রাশি, বাতাসের শো শো শব্দ মন ভরিয়ে দেবে আপনার। দেখা পাবেন নানা বয়সী মানুষ কতই না আনন্দ করছে সেখানে। সৈকতজুড়ে চার কোণাবিশিষ্ট কংক্রিটের ব্লকগুলো দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এতে সৈকতের সৌন্দর্য অনেকটাই বেড়েছে।

জোয়ারের সময় ঢেউয়ের আঁচড় যেন নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে। আর সে বাঁধের ওপর সবুজ ঘাস দেখলে মনে হবে যেন সবুজের কার্পেট বসানো আছে। জোয়ারের সময় সিসি ব্লকের ওপর আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে। এত সব মনোমুগ্ধকর পরিবেশের কারণে চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা সৈকতটি অন্য সৈকত থেকে খানিকটা আলাদা।

কক্সবাজারে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত যারা যাননি কিংবা সময়ের অভাবে দেখার সুযোগ পাননি, তাদের জন্য পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হতে পারে সবচেয়ে ভালো বিকল্প। এরই মধ্যে এই সৈকত বিশ্ব পরিচিতি পেয়েছে। বিকেল হতে না হতেই হাজারো পর্যটক ভিড় জমায় এই সমুদ্র সৈকতে। সেখানকার পরিবেশ এতটাই মনোমুগ্ধকর যে তীরে দাঁড়ালেই কানে বাজে সাগরের কল্লোল। দেখা মিলবে বিশ্বের নানান দেশের নানান পতাকাবাহী নোঙর করা সারি সারি জাহাজ।

সৈকতের পাশে ও ঝাউবনে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। সমুদ্রে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আছে স্পিডবোট। সমুদ্র তীরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে সিবাইক ও ঘোড়া। ঝাউবন ঘেঁষে উত্তর দিকে একটু সামনেই রয়েছে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীর মোহনা। ভাগ্য ভালো হলে বিকেলে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পাবেন, যদি আবহাওয়া বৈরী না থাকে।

সূর্যাস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখলে মনে হবে যেন সূর্য সাগরের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। এমন লাল রং ধারণ করে সূর্য তখন, যা অসম্ভব দৃশ্য তৈরি হয়ে যায়। মুহূর্তে আপনার মন জুড়িয়ে যাবে। আবার সকালে যখন সূর্য উদয় হয়, তখন মনে হবে সাগর থেকে যেন সূর্য উঠছে।

কীভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন?
যারা ঢাকা বা দেশের অন্য স্থান থেকে আসবেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দেখতে তারা প্রথমে চট্টগ্রাম শহরে চলে যাওয়া ভালো। এরপর চট্টগ্রাম শহরের এ কে খান কিংবা জিইসি থেকে খুব সহজে যেতে পারেন সৈকতে। পতেঙ্গা চট্টগ্রাম থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে। চট্টগ্রাম শহর থেকে অটো রিকশায় যেতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। ভাড়া পড়বে ২৫০ টাকার মতো।

বাসে যেতে চাইলে তো কথাই নেই, বহদ্দারহাট, লালখান বাজার মোড়, জিইসি মোড়, নিউমার্কেট, চকবাজার মোড় থেকে সরাসরি বাস পাবেন। বাসের গায়ে লেখা দেখবেন সি বিচ। যারা চট্টগ্রামে বসবাসকারী তাদের নতুন করে যাওয়ার উপায় বলার দরকার নেই। সড়কপথে যেতে চাইলে অলংকার মোড় এ কে খান হয়ে সরাসরি চলে যেতে পারবেন সৈকতে। তাছাড়া সি বিচ লেখা বাসগুলোতে চেপে বসলেই হবে শুধু। যদি নগরীর জিইসি মোড় থেকে যেতে চান তবে ১৮০-২০০ টাকায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়েও যেতে পারবেন।

অন্যদিকে ট্রেনে বা রেলপথে কেউ চট্টগ্রাম আসতে হলে তাকে ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রামের রুটে মহানগর প্রভাতি ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ২০ মিনিটে, মহানগর গোধূলি ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে রাত ১১টায়। ভাড়া ১৬০-১১০০ টাকা। যদি কেউ সেখানে রাতযাপন করতে চান তাহলে বেশ কিছু উন্নতমানের আবাসিক হোটেল আছে। আবাসিক হোটেলগুলো ভাড়া নিয়ে রাত কাটাতে পারেন।

মহামায়া লেক
চারদিকে সবুজের সমারোহ। বোটে লতাপাতায় ঘেরা দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী সুড়ঙ্গপথের প্রকৃতির শোভা দেখার সুযোগ যা কোনো পর্যটকই হাতছাড়া করতে চাইবেন না। আছে রাতে ক্যাম্পিং করে থাকার সুযোগ। বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন দেশের দ্বিতীয়ত বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মহামায়ায়। এখানে ১১ বর্গকিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লেক পাশাপাশি আছে ছোট-বড় অসংখ্য লেক। আছে পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝরনা।

আছে রোদ ওঠা অতুলনীয় সুন্দর একটি সকাল প্রকৃতির সঙ্গে, পাখপাখালির কিচিরমিচির, পাতাদের ঝুমঝুমির মধ্যে কাটানোর সুযোগ। আছে এই বিস্তীর্ণ লেকের পাশে বসে রাতে গান-আড্ডা শেষে বারবিকিউ খাওয়ারও সুযোগ। আরও আছে সুউচ্চ পাহাড়ের কোলে বসে প্রকৃতির অপার মুগ্ধতা দেখার সুযোগ। প্রাণের টানে ছুটে আসা পথ যেন ক্রমশই বন্ধুর হতে চাইবে মনের কোণে জাগা মৃদু উত্তেজনায়। দূর থেকে দেখা যায় প্রায় পাহাড়সম বাঁধ। উভয় পাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। বাঁধের ধারে অপেক্ষারত সারি সারি ডিঙি নৌকা আর ইঞ্জিনচালিত বোট।

১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের লেক কেবল শোভা ছড়ায়। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্বচ্ছ পানিতে তাকাতেই দেখা যায় নীলাকাশ। পূর্ব-দিগন্তের সারি পাহাড়ের বুক চিরে যেতে যেতে একসময় হারিয়ে যেতেও মন চাইবে কল্পনায়। সঙ্গীকে পাশে নিয়ে গেলে তো কথাই নেই। কিছু দূরেই দেখা যাবে পাহাড়ের কান্না, অঝোরে কাঁদছে। অথচ তার কান্না দেখে নিজের কাঁদতে ইচ্ছে হবে না। উপরন্তু কান্নার জলে গা ভাসাতে মন চাইবে। তারও আগে যেখানে লেকের শেষ প্রান্ত, সেখানেও বইছে ঝরনাধারা। কি নীল, কি সবুজ, সব রঙের ছড়াছড়ি যেন ঢেলে দেওয়া হয়েছে মহামায়ার প্রকৃতিতে। এর সঙ্গে মিশতে গিয়ে মন এতটাই বদলে যাবে, যেন মন বারবার ঘুরে আসতে চাইবে ফেলে আসা স্মৃতিতে।

কীভাবে পৌঁছাবেন মহামায়া লেকে?
দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঠাকুরদিঘি এলাকায় নামতে হবে। নেমেই দেখবেন স্পটের নাম লেখা সাইনবোর্ড। তো সিএনজি নিয়ে স্পটের একদম গেট পর্যন্ত চলে যেতে পারেন অথবা আপনি যদি হাঁটতে পছন্দ করেন তাহলে ১০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন স্পটের গেটে। গেটে যাওয়ার আগে আপনি পেয়ে যাবেন রেলপথ। আপনার ভাগ্য ভালো হলে রেল আসার সুন্দর দৃশ্যও দেখতে পাবেন। এরপর রেলপথ পেরিয়ে গেটে এলে একটি টিকিট কাউন্টার দেখতে পাবেন। সেখান থেকে টিকিট নিতে হবে ভেতরে প্রবেশ করার জন্য।

প্রতিটি টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। এরপর গেটে থাকা অন্য একজন লোকের কাছে টিকিটটি জমা দিয়েই আপনি প্রবেশ করতে পারবেন আপনার বহুল কাঙ্ক্ষিত এই অপরূপ সুন্দর পর্যটনকেন্দ্রে। প্রবেশ করার পর খানিকটা হাঁটতে হবে আপনাকে। সে সময় রাস্তার দুই পাশে আপনাকে স্বাগত জানাবে ঝাউগাছের সারি, অভিবাদন জানাবে হরেক রকমের ফুলের দল। হাঁটা শেষ এখন আপনি পৌঁছে গেলেন লেকের সামনে। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিন।

আপনার বামে পাহাড়, ডানে পাহাড় কিছুটা দূরে সামনে বিশাল লেক, লেকে সারি সারি নৌকা, বোট, কায়াকিং বোট সাজানো দেখতে পাবেন। এবার আপনার পছন্দ আপনি কীসে করে ঘুরবেন! নৌকায় নাকি বোটে? নাকি দু-তিনজন মিলে কায়াকিং করে তা ঠিক করে ঘুরে দেখুন লেকের সৌন্দর্য! চাইলে মহামায়ায় ক্যাম্পিংও করতে পারবেন; তবে সেজন্য আপনাকে দু-তিনদিন আগে ক্যাম্পিং করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে কনফার্ম করতে হবে। সব মিলিয়ে আপনি যদি মহামায়া লেকে ঘুরতে আসেন তাহলে জিতে যাবেন।

কাপ্তাই
প্রকৃতির বিস্ময়কর সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে রাঙ্গামাটিতে। সবুজ অরণ্য আর ছোট-বড় পাহাড়ে ঘেরা রাঙ্গামাটি যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা রূপকথার এক স্থান। রাঙ্গামাটির নাম শুনতেই অনেকের চোখে ভেসে ওঠে কাপ্তাই লেকের দৃশ্য। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যমণ্ডিত এক স্থান হলো কাপ্তাই। এর আশপাশের পাহাড়, লেক, সবুজ উপভোগ করতেই পর্যটকরা ভিড় করেন স্থানটিতে।

চাইলে একদিনেই অল্প খরচে ঘুরে আসতে পারবেন কাপ্তাই লেকসহ এর আশপাশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। কাপ্তাই ভ্রমণে ঘুরে দেখতে পারেন কাপ্তাই বাঁধ, কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র, নেভি ক্যাম্প পিকনিক স্পট, জুম রেস্তোরাঁ পিকনিক স্পট, ওয়াগ্গাছড়া টি, চিৎমরম বৌদ্ধ মন্দির ও নিসর্গ পড হাউজ। আরও দেখতে পারেন ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝরনা।

ঢাকা থেকে কাপ্তাই লেকে যেতে হলে সরাসরি যেতে পারবেন বাসে। যানজট না থাকলে পৌঁছাতে পারবেন ৭-৮ ঘণ্টার মধ্যেই। নন-এসি বাসভাড়া জনপ্রতি ৫০০-৭০০ টাকা, আর এসি বাসে ৯০০-১০০০ টাকার মধ্যেই যেতে পারবেন। ট্রেনে কাপ্তাই লেক সরাসরি যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে ট্রেন ভ্রমণ করতে চাইলে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথে যেতে হবে। এরপর পরিবহন পরিবর্তন করে কাপ্তাই পৌঁছাতে পারবেন ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া পড়বে ২০০-৩০০ টাকা। কায়াকিংয়ের সুব্যবস্থাও আছে সেখানে।

কাপ্তাই ভ্রমণে কোথায় থাকবেন ও খাবেন?
চাইলে একদিনেই ঘুরে আসতে পারবেন কাপ্তাই লেকে। রাতযাপন করতে চাইলে সরকারি রেস্ট হাউজের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগে থেকেই কথা বলে রাখবেন। এছাড়া সেনাবাহিনী, পিডিবি ও বন বিভাগেরও কিছু রেস্ট হাউজেও থাকতে পারবেন। তবে তা অনুমতিসাপেক্ষে। কয়েকটি পিকনিক স্পট যেমন- লেকশোর, লেক প্যারাডাইস, জুম রেস্তোরাঁয়ও থাকতে পারবেন। তবে অর্থ বেশি খরচ হবে। চাইলে নিসর্গ পড হাউজেও থাকতে পারবেন।

এই লেক ঘিরে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এগুলো থেকেই খাবার কিনে খেতে পারবেন। এসব রেস্তোরাঁয় তাজা মাছ খেতে পারবেন। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এসব হোটেলে কম মূল্যেই খাবার পাবেন। কাপ্তাইয়ের কাছাকাছি কয়েকটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ হলো- লেকশোর হোটেল, জুম রেস্তোরাঁ ও প্যারাডাইস ক্যাফে।

টাঙ্গাইলের মহেরা জমিদার বাড়ি
মহেরা জমিদার বাড়ি নাকি দেশের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর জমিদার বাড়ি। এর বয়স জানলে আপনি রীতিমতো চমকে উঠবেন, ১৩৩ বছরের পুরোনো এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস বেশ পুরোনো। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের নাটিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জমিদার বাড়ি। ডে লং ট্যুরে যারা ঢাকার আশপাশেই ঘুরে বেড়াতে চান, তাদের জন্য সেরা এক স্থান হতে পারে মহেরা জমিদার বাড়ি।

টাঙ্গাইলে অবস্থিত বিভিন্ন জমিদার বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো মহেরা জমিদার বাড়ি। আজও চকচক করছে এ বাড়ির দেওয়াল। তখনকার কারিগরদের হাতের ছোঁয়া কি অপূর্ব ছিল তা এই জমিদার বাড়ির সৌন্দর্য ও নজরকাড়া কারুকার্য দেখলেই টের পাওয়া যায়। ১৮৯০ সালের আগে নির্মিত হয় এই জমিদার বাড়ি।

জানা যায়, স্পেনের করডোভা নগরের আদলে নির্মিত এই জমিদার বাড়ি। কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহা নামে দুই ভাই ১ হাজার ১৭৪ শতাংশ জমির ওপর এই বাড়ি নির্মাণ করেন। জমিদার বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সুন্দর ভবনের নাম কালীচরণ লজ। ইংরেজি ইউ অক্ষরের আদলে করা ভবনটি রানিদের জন্য নির্মাণ করা হয়। তাই একে রানি ভবনও বলা হতো এককালে। জমিদার বাড়ির ভেতরে বাগান, শিশুপার্ক, বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল স্থাপনা আছে। এছাড়া পাখ-পাখালি, বাগান, পুকুর, বিল্ডিং সব মিলিয়ে স্বপ্নপুরীর মতো মনে হয় মহেরা জমিদার বাড়ি।

রাজকীয় এই বাড়িতে প্রবেশের আগেই চোখে পরে বিশাল এক দিঘির। যার নাম বিশাখা সাগর। এই জমিদার বাড়ির উল্টো দিকে আছে পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একাডেমি ভবন। মূল ফটকের পরই দেখা যায় চৌধুরি লজের। পাশাপাশি আছে আরও দুটি লজ। এর পাশেই আছে আকর্ষণীয় এক ভবন। যার নাম আনন্দ লজ। এর পাশে আছে মহারাজ লজ। ভবনগুলো দেখতে প্রায় একই রকম। দৃষ্টিনন্দন লজগুলো দেখা শেষ হতেই পাসরা ও রানি পুকুর পাড়ে খানিকটা বিশ্রাম নিতে পারেন। পুকুরের পাশেই আছে রঙিন মাছে ভরা অ্যাকুরিয়াম। আছে লোহার তৈরি টেবিল ও চেয়ার। এবার ঘুরে দেখুন জাদুঘর।

ইতিহাস অনুযায়ী, স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়িতে হামলা করে। জমিদার বাড়ির কূলবধূসহ পাঁচ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীসময়ে তারা লৌহজং নদীর নৌপথে এ দেশ ত্যাগ করেন। এখানেই তখন মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। এ জমিদার বাড়ি পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৭২ সালে। পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয় ১৯৯০ সালে।

কীভাবে যাবেন?
ঢাকার মহাখালী থেকে টাঙ্গাইলে চলাচলকারী বিভিন্ন বাসে চড়ে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে নাটিয়াপাড়ায়।
সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিকশা, টেম্পো অথবা রিকশায় মহেরাপাড়া পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে। এছাড়া আপনি ব্যক্তিগত গাড়িতেও যেতে পারেন। ২০ টাকার টিকিট কেটেই পুরো জমিদারবাড়ি ঘুরতে পারবেন।

নেত্রকোনার বিরিশিরি
নেত্রকোনার সেরা দর্শনীয় স্থান হলো বিরিশিরি। সেখানকার অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। সাদা মাটির এই দেশে দেখা মিলবে চিনামাটির পাহাড়, সোমেশ্বরী নদী, নীলচে-সবুজ পানির হ্রদ, গির্জা, পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই হাতে সময় নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন না। এমন মানুষ একদিনের ডে লং ট্রিপে ঘুরতে যাওয়া যায় এমন দর্শনীয় স্থানের খোঁজ করেন। তাদের জন্য উপযুক্ত এক গন্তব্য হলো নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরি। একদিনেই অল্প খরচে ঘুরতে যাওয়ার জন্য সেরা এক দর্শনীয় স্থান এটি।

বিরিশিরি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ হলো বিজয়পুর চীনামাটির খনি। এর বুক চিরে বয়ে গেছে সবুজ ও নীলচে স্বচ্ছ পানির হ্রদ। বিরিশিরি হলো খুবই সুন্দর এক গ্রাম। সেখানকার পাহাড় ও তার আশেপাশের সমভূমির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৬০০ মিটার। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় গেলে শুধু বিরিশিরি নয়, আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। তেমনই কয়েকটি স্থান হলো-

১. গারো পাহাড়: ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো-খাসিয়া পর্বতমালার একটি অংশ। এর কিছু অংশ ভারতের আসাম রাজ্য ও বাংলাদেশের নেত্রকোনা এবং ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত। গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি প্রায় ৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
২. দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি: একসময় দুর্গাপুর ছিল সুসং রাজ্যের রাজধানী। বর্তমানে এটি নেত্রকোনার একটি উপজেলা। সোমেশ্বর পাঠক থেকে শুরু করে তার পরবর্তী বংশধররা প্রায় ৬৬৭ বছর শাসন করেন এ রাজ্য।
৩. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি: দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশেই অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জীবন যাত্রার নানান নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে।
৪. টঙ্ক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ: সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছু দূর গেলে এম.কে.সি.এম হাই স্কুলের পাশেই চোখে পড়বে স্মৃতিসৌধটি। প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণি সিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে পাঁচ দিনব্যাপী ‘মণি সিংহ মেলা’ নামে লোকজ মেলা বসে।
৫. সাধু যোসেফের ধর্মপল্লি: দুর্গাপুর থেকে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় রানিখং গ্রামে পৌঁছেই দেখতে পাবেন ক্যাথলিক গির্জা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে।
৬. হাজং মাতা রাশিমণি স্মৃতিসৌধ: দুর্গাপুর বাজার থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথেই দেখা মিলবে এই স্মৃতিসৌধ। কামারখালী বাজারের পাশে বহেরাতলীতে অবস্থিত রাশিমণির এই স্মৃতিসৌধ। জানা যায়, ব্রিটিশ মহাজন ও জোতদারদের অন্যায় নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন রাশিমণি।

৭. সাদা মাটির পাহাড়: নেত্রকোনা ভ্রমণে সবাই প্রথমে এ স্থানেই ঘুরতে যায়। দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাদা মাটির পাহাড়। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহ করা হয়। ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ নীল রঙের জলাধারগুলো দেখতে খুবই চমৎকার।
৮. সোমেশ্বরী নদী: স্বচ্ছ পানি আর ধু-ধু বালুচরের জন্য বিখ্যাত সোমেশ্বরী নদী। এটি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় প্রবাহিত একটি নদী। এর সৌন্দর্যও আপনাকে মুগ্ধ করবে।
৯. কংস নদী: এই নদী ভারতের মেঘালয় ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের শিলং মালভূমির পূর্বভাগের তুরার কাছে গারো পাহাড়ে নদীটির উৎপত্তি।
১০. আত্রাখালি নদী: নেত্রকোনায় আরও একটি নদীর দেখা পাবেন। সেটি হলো আত্রাখালী নদী। কিছু দূর এগিয়েই নদীটি সোমেশ্বরীর মূলধারা সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
১১. কমলা রানির দীঘি: বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রানির দিঘি দেখতে পাবেন। দিঘিটি এখন নদীতে বিলীন হলেও এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে।

কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন ও খাবেন?
মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়ার বাস পাবেন। ৫-৭ ঘণ্টার মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন বিরিশিরিতে। আবার ট্রেনে নেত্রকোনা পৌঁছে সেখান থেকে বিরিশিরি যাওয়া যায়। দুর্গাপুরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল পাবেন। এগুলোর ভাড়াও খুব কম। নেত্রকোনা গেলে অবশ্যই সেখানকার বিখ্যাত খাবার বালিশ মিষ্টি খেতে ভুলবেন না।

কুয়াকাটা
এটিই বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্রসৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্রসৈকত। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা ‘সাগরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত। কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার একটি শহর। কুয়াকাটা পটুয়াখালী সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। সমুদ্র সৈকত থাকায় কক্সবাজারের মতোই কুয়াকাটাও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

কুয়াকাটা ভ্রমণে সমুদ্র সৈকত দেখার পাশাপাশি ঘুরতে পারবেন আরও বেশ কয়েকটি স্পটে। যেমন- সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকে গঙ্গামতির খাল পর্যন্ত গিয়েই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত শেষ হয়েছে। গঙ্গামতির জঙ্গলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, পাখি, বন মোরগ-মুরগি, বানরের দেখা পাবেন। কুয়াকাটা যাবেন আর কূপ দেখবেন না তা কী হয়! কুয়াকাটা নামকরণের পেছনে থাকা ঐতিহাসিক কুয়াটি আজও আছে। সেটি দেখতে যেতে হবে রাখাইনদের বাসস্থল কেরানিপাড়ায়। কেরানিপাড়ায় প্রাচীন কূয়া দেখার পর একটু সামনে এগিয়ে গেলেই দেখবেন সীমা বৌদ্ধমন্দির। এই মন্দিরে আছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতুর তৈরি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিমে জেলে পল্লির অবস্থান। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শুঁটকি তৈরির মৌসুম চলে সেখানে। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে সৈকতের পাশেই শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। সেখান থেকে কম দামে কিনে নিতে পারেন পছন্দের মাছের শুঁটকি। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকে গেলে দেখবেন ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপ। সেখানে নির্জন সৈকতে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার দল। এই দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সেখানে আরও দেখতে পাবেন ফাতরার বন। এজন্য আপনাকে যেতে হবে সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম দিকে। এ বনে গেলে সুন্দরবনের প্রায় সব বৈশিষ্ট্যই চোখে পড়বে। এখানে বন মোরগ, বানর, বুনো শুকর ও নানান পাখি পাওয়া যায়।

কুয়াকাটা ভ্রমণে ঢুঁ মারতে পারেন ফাতরার বনেও। এজন্য আপনাকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে হবে। সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের রাস্তা ধরে আরও একটু এগিয়ে গেলেই রাখাইনদের আবাসস্থল কেরানিপাড়ায় ঢুকে পড়বেন। রাখাইন নারীরা কাপড় বুননে বেশ দক্ষ। চাইলে তাদের জীবনযাপন দেখতে পারবেন সেখানে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে রাখাইনদের আরও এক গ্রাম মিশ্রিপাড়ায় বড় আরেকটি বৌদ্ধ মন্দির আছে। জানা যায়, এ মন্দিরের ভেতরেই নাকি আছে উপমাহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তিটি।

কীভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন?
দেশের যে কোনো স্থান থেকেই ইউনিক, হানিফ, শ্যামলী, গ্রিন সেন্টমার্টিন, প্রচেষ্টা, ইলিশসহ বেশ কয়েকটি বাসে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। পর্যটকদের থাকার জন্য কুয়াকাটায় বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল আছে। মান ও শ্রেণি অনুযায়ী এসব হোটেলে ৪০০-৫০০০ টাকায় থাকতে পারবেন।

সোনারগাঁও
বাংলার প্রাচীন রাজধানী ছিল সোনারগাঁ। ঢাকা নগরী থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছেই সোনারগাঁর অবস্থান। দেব রাজবংশের শাসনামলে এটি ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রশাসনিক রাজধানী ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে মোগলদের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত সোনারগাঁ বাংলা সালতানাতের অংশ ছিল। দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন ভবন ও স্মৃতিচিহ্নের পাশাপাশি প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে আছে দেশের ঐত্যিহ্যসমূহ ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের জন্য নিবেদিত একটি জাদুঘর।

কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের নকশা অনুসারে নির্মিত লোকশিল্প জাদুঘর ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমন্বয়ে এক চমৎকার জায়গা, যা সপরিবারে ভ্রমণের জন্য আদর্শ। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের অফিস এখানেই অবস্থিত। জাদুঘর প্রাঙ্গণের কাছেই আছে একটি দৃষ্টিনন্দন লেক। যেখানে আছে নৌকায় চড়া ও মাছ ধরার সুবিধা। এর পাশাপাশি আরও আছে কারুশিল্পীদের একটি গ্রাম, ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের নমুনা, রেস্টুরেন্ট ও হস্তশিল্পের দোকান। এছাড়া দর্শনার্থীরা নিকটবর্তী প্রাচীন আমলের পুরোনো শহর পানামনগর ও সালতানাত আমলের গোলাদিয়া মসজিদ দেখতে যেতে পারেন। লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের রয়েছে একটি লাইব্রেরি ও প্রদর্শনী কেন্দ্র।

সোনারগাঁ কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে সারাদিন সোনারগাঁয় কাটিয়ে বিকেলে ফিরে যেতে পারে। যদি তা না পারেন তাহলে গুলিস্তান, শাহবাগ কিংবা মতিঝিল থেকে বাসেও যেতে পারেন।

মহাস্থানগড়
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে বগুড়া-রংপুর সড়কের কাছাকাছি করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত মহাস্থানগড় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক স্থান ও অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। মৌড়, গুপ্ত ও সেন রাজবংশের শাসনামলে এটি রাজধানী ছিল। মহাস্থানগড়ে আছে বাংলাদেশের প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্মৃতিচিহ্ন, যা নির্মিত হয়েছিল খ্রিষ্টপর্ব ২৫০০ সালে।

এখানে আপনি আরও দেখতে পাবেন গোবিন্দ ভিটা মন্দির, মানকালির কুন্ড, পরশুরাম প্রাসাদ, জিয়াত কুন্ড প্রভৃতি ঐতিহাসিক স্থান। হিন্দু সম্প্রদায় এখনো এগুলো পবিত্র স্থান হিসেবে উপাসনা করে। প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মহাস্থানগড়জুড়ে। যদি মহাস্থানগড় জাদুঘরে যান তাহলে দেখতে পাবেন টেরাকোটার তৈরি হিন্দু ভাস্কর্য, সোনার গহনা, স্বর্ণমুদ্রা প্রভৃতি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। ভ্রমণের পাশাপাশি বগুড়ার বিখ্যাত দই দিয়ে রসনাতৃপ্তি মেটাতে পারেন।

মহাস্থানগড় যাওয়ার উপায় কী, খরচ কত?
বাস কিংবা ট্রেন যে কোনোটিতেই আপনি বগুড়ায় যেতে পারেন। লালমনি এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা-বগুড়া রুটে চলাচল করে। যদি বাসে যেতে চান তাহলে শ্যামলী পরিবহন, এসআর ট্রাভেলস, আলহামরা পরিবহন, নাবিল পরিবহন, ডিপজল এন্টারপ্রাইজ, মানিক এক্সপ্রেস যে কোনো একটিকে বেছে নিতে পারেন।

 এছাড়া ঢাকা-রংপুর কিংবা ঢাকা-দিনাজপুর রুটের বাসেও বগুড়ায় নেমে যেতে পারেন। বগুড়ায় আরামদায়ক বসবাসের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল। এর পাশাপাশি আছে হোটেল আল-আমিন, হোটেল আকবরিয়া, হোটেল আমজাদিয়া, আজাদ গেস্ট হাউজ, হোটেল পার্ক ও হোটেল সান ভিউ।

শহীদ

×