ছবি: সংগৃহীত
আত্মবিশ্বাস আর আত্মকেন্দ্রিকতার মাঝে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে, যা তাদের ভাষা ও আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। কিভাবে চিনবেন আত্মকেন্দ্রিক মানুষদের? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন সহজ লক্ষণগুলো।
আত্মকেন্দ্রিক মানুষরা নিজেদেরকেই সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে পছন্দ করেন। তাদের আচরণ এবং ভাষা প্রায়ই অন্যদের অনুভূতি বা মতামতকে উপেক্ষা করে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এই ধরনের ব্যক্তিরা নিজেদের সম্পর্কে কথা বলার প্রবণতা রাখে এবং তারা বিশেষ কিছু বাক্য বা অভ্যাসের মাধ্যমে নিজেদের আত্মকেন্দ্রিকতা প্রকাশ করে।
বিশ্ববিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী জেমস পেনেবেকার এর ভাষ্য মতে, তাদের কথোপকথনে প্রথম পুরুষের সর্বনাম—“আমি”, “আমাকে”, “আমার”—অতিরিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়। এমনকি তাদের আচরণ অন্যদের কথাকে গুরুত্বহীন করে তোলে। নিচে আত্মকেন্দ্রিক মানুষদের চেনার ১০টি সাধারণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
১. “আমি, আমাকে, আমার...”
আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিরা কথাবার্তায় প্রায়ই নিজেদের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। আলোচনা যেকোনো বিষয়েই হোক না কেন, তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা, কৃতিত্ব বা দুঃখ-কষ্টের কথা সামনে আনেন। উদাহরণস্বরূপ, "তোমার দিনটা কেমন গেল?" এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলবেন, “আমি আজ এটা করেছি”, “আমার দিন খুব ব্যস্ত ছিল”, যেখানে অন্যদের গল্প শুনতে আগ্রহ দেখান না।
২. “তোমার কথা বাদ দাও, এবার আমার কথা বলি।”
আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিরা আলাপচারিতাকে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নেওয়ার অদ্ভুত দক্ষতা রাখেন। উদাহরণস্বরূপ, কেউ তাদের ভ্রমণের গল্প শেয়ার করলে তারা তৎক্ষণাৎ বলেন, “ওহ, এটা আমাকে মনে করিয়ে দিল যখন আমি রোমে ছিলাম।” ফলে অন্যের গল্প থেমে যায় এবং তাদের গল্পই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
৩. “কেউ আমার অবস্থা বুঝতে পারে না।”
এটি আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিদের অন্যতম পরিচিত বাক্য। তারা নিজেদের সমস্যাকে সবচেয়ে গুরুতর এবং অন্যদের তুলনায় বড় করে উপস্থাপন করেন। কেউ নিজের সমস্যার কথা শেয়ার করলে তারা বলেন, “তোমার সমস্যাটা তেমন কিছু না, আমার সমস্যাই অনেক বেশি কঠিন।”
৪. “আমার কী হবে?”
অন্যান্যদের সুখ, অর্জন বা দুঃখের সময়ও আত্মকেন্দ্রিক মানুষরা নিজেদের সমস্যা বা অবস্থাকেই সামনে তুলে ধরেন। যেমন, কেউ তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত শেয়ার করলে তারা বলেন, “তোমার বিষয়টা বাদ দাও, আমার চিন্তা বেশি জরুরি।”
৫. “আমি আত্মকেন্দ্রিক নই।”
বেশিরভাগ আত্মকেন্দ্রিক মানুষ তাদের আচরণকে অস্বীকার করে থাকেন। তারা প্রায়ই বলেন, “আমি মোটেও আত্মকেন্দ্রিক নই।” এটি আসলে আত্মরক্ষামূলক একটি বক্তব্য, যা তাদের আচরণ বৈধতা দিতে সাহায্য করে।
৬. “আমি আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য।”
এটি আত্মকেন্দ্রিকতার আরেকটি চিহ্ন। তারা মনে করেন, তারা অন্যদের চেয়ে বেশি কিছু পাওয়ার যোগ্য। এটি আত্মবিশ্বাসের চেয়ে বরং অহংকার এবং অতিরিক্ত অধিকারের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।
৭. “আমি অন্যদের কথায় পাত্তা দিই না।”
আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিরা অন্যদের মতামত কিংবা পরামর্শকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। তারা মনে করেন, তাদের চিন্তাভাবনাই সঠিক এবং অন্যের কথার কোনো মূল্য নেই।
৮. “আমি কারো সাহায্য ছাড়াই চলতে পারি।”
তারা নিজেদের স্বতন্ত্র এবং স্বাধীন হিসেবে প্রমাণ করতে চাইলেও বাস্তবে এটি তাদের অবহেলার অনুভূতি বা একাকীত্বের বহিঃপ্রকাশ। তারা অন্যের সহায়তা নেয়ার বিষয়টি গোপন রাখতে চান।
৯. “আমি কেবল সত্য কথা বলছি।”
আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি প্রায়ই আঘাতকর বা তিক্ত মন্তব্যকে ‘সত্য’ হিসেবে জাস্টিফাই করেন। কিন্তু তাদের এই কথাগুলো প্রায়ই অন্যদের অনুভূতিতে আঘাত করে।
১০. “আমি সবসময় ঠিক।”
আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিরা নিজেদের ভুল স্বীকার করতে চান না। তারা সবসময় নিজেদের মতামত ও সিদ্ধান্তকেই সঠিক বলে দাবি করেন। এটি দীর্ঘমেয়াদে তাদের সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আত্মকেন্দ্রিকতার আচরণ সম্পর্ক এবং পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিজেদের সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার প্রবণতা, অন্যের অনুভূতি অগ্রাহ্য করা এবং নিজের ভুল না স্বীকার করার মানসিকতা দীর্ঘমেয়াদে একাকীত্ব ও মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। তাই কথোপকথনে দুইপথে যোগাযোগের চেষ্টা এবং অন্যদের অনুভূতি ও মতামতকে গুরুত্ব দেওয়াই একমাত্র সমাধান।
মেহেদী কাউসার