জীবনে লক্ষ্য অর্জন করতে শুধুমাত্র দৃঢ় সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রমই যথেষ্ট নয়—এর জন্য শৃঙ্খলাও প্রয়োজন, যা অনেকেরই অভাব দেখা যায়। শৃঙ্খলার অভাবই অনেক সময় আমাদের সফলতার পথে বাধা সৃষ্টি করে।যদি আপনি আপনার পথ সঠিক রাখতে এবং স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে প্রস্তুত হন, তাহলে আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং লক্ষ্যমুখী জীবনের জন্য এই সাতটি অভ্যাসকে বাদ দিন।
১) প্রকাস্টিনেশন (অলসতা)
প্রকাস্টিনেশন হল কাজ ফেলে রাখা বা পরে করার প্রবণতা, যা আমাদের অনেকেরই পরিচিত সমস্যা। এটি স্বপ্নের নীরব ঘাতক, কারণ এটি আপনাকে মনে করায় যে আপনি ব্যস্ত আছেন, কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই করছেন না। এমনকি এটি অপরাধবোধ তৈরি করে, কারণ আপনি জানেন যে কী করা উচিত, কিন্তু তা করছেন না। আপনার লক্ষ্যের পথে এটি অন্যতম বড় বাধা, কারণ যত বেশি আপনি কাজ ফেলে রাখবেন, তত কম সময় ও শক্তি থাকবে লক্ষ্য অর্জনের জন্য। সুতরাং, ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু করুন এবং সময়মতো তা শেষ করার অভ্যাস করুন। ধীরে ধীরে বড় ও কঠিন কাজেও দক্ষতা অর্জন করবেন।
২) নিজের যত্নে অবহেলা করা
সফলতার পিছনে ছুটতে গিয়ে আমরা অনেক রাত জেগে থাকি, খাবার বাদ দেওয়া এবং শরীরচর্চার সময় না পাওয়ার মতো ভুল করি। আমরা মনে করি যে, আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং লক্ষ্যভেদে মনোযোগী। কিন্তু সত্য হল, আমরা নিজের যত্নের গুরুত্বকে অগ্রাহ্য করছি। এর ফলে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় এবং কাজে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
শেষ কথা হলো, নিজের যত্ন না নেওয়া মানে নিজের ধ্বংস ডেকে আনা। ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার ও বিশ্রামের জন্য প্রতিদিন কিছু সময় বরাদ্দ করুন। কারণ নিজের যত্ন নেওয়া ছাড়া সফলতা
৩) একসাথে অনেক কাজ করা (মাল্টিটাস্কিং)
মাল্টিটাস্কিং প্রায়শই দক্ষতার একটি চিহ্ন হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের মস্তিষ্ক একই সাথে একাধিক কাজ করার জন্য তৈরি হয়নি।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুসারে, যারা মাল্টিটাস্কিং করেন তাদের স্মৃতিশক্তি কমে যায় এবং তারা বেশি ভুল করেন। কারণ কাজের মাঝে বারবার মনোযোগ সরানোর ফলে দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা কমে যায়। সুতরাং, এক সময়ে একটি কাজের উপর মনোযোগ দিন। এতে আপনার উৎপাদনশীলতা অনেক বেশি বাড়বে।
৪) ব্যর্থতার ভয়
ব্যর্থতার ভয় আমাদের থামিয়ে দিতে পারে এবং লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলেও এতটাই শক্তিশালী যে আমরা অনেক সময় চেষ্টা করাই বাদ দিয়ে দিই। সত্য হল, ব্যর্থতা জীবনের একটি অংশ এবং এখান থেকেই আমরা শিখি ও এগিয়ে যাই। সুতরাং ব্যর্থতাকে বাধা নয়, বরং শেখার একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন। ব্যর্থতা ভয় না পেয়ে চেষ্টা করুন।
৫) অতিরিক্ত চিন্তা করা (ওভারথিংকিং)
অতিরিক্ত চিন্তা আমাদের একটি বাজে অভ্যাস । আমরা বারবার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করি, কথোপকথন মনে করি এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দুশ্চিন্তা করি। এতে শুধুমাত্র মানসিক চাপ বাড়ে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া পিছিয়ে যাই আমরা।
সুতরাং,অতিরিক্ত চিন্তা পরিহার করে বর্তমান মুহূর্তে ফোকাস করুন। মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করুন এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পদক্ষেপ নিন।
৬) পরিকল্পনার অভাব
পরিকল্পনা ছাড়া লক্ষ্য শুধুই একটি স্বপ্ন। যদি আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জন করতে চান, তবে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকা জরুরি। পরিকল্পনা না করলে সময়, শক্তি এবং সুযোগ নষ্ট হতে পারে। সুতরাং, আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ধাপভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরি করুন।
৭) দায়িত্ব এড়িয়ে চলা
আপনার জীবন আপনার দায়িত্ব। অন্য কেউ আপনার জন্য আপনার লক্ষ্য পূরণ করবে না।
দায়িত্ব এড়িয়ে চলা এবং অন্যদের দোষ দেওয়া আপনাকে একই জায়গায় আটকে রাখবে।
সুতরাং, নিজের জীবন, সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপের দায়িত্ব নিন। আপনি আপনার ভবিষ্যৎ গঠন করতে সক্ষম।
পরিবর্তনের সময় এসেছে
লক্ষ্য অর্জন একটি দীর্ঘ পথ—এর জন্য শৃঙ্খলা, সহনশীলতা এবং স্থিরতা প্রয়োজন। আপনার অভ্যাসগুলোই আপনার জীবনকে গড়ে তোলে। অনুপ্রেরণা যতটা শক্তিশালী, শৃঙ্খলা তার থেকেও শক্তিশালী।
উইল ডুরান্ট বলেছেন, “আমরা যা বারবার করি, সেটাই আমাদের পরিচয়। উৎকর্ষতা, সুতরাং, কোনও কাজ নয়, এটি একটি অভ্যাস।”
আপনার অভ্যাসগুলো পর্যালোচনা করুন—সেগুলো কি আপনাকে এগিয়ে নিচ্ছে, নাকি পিছনে টেনে ধরছে? আজই সিদ্ধান্ত নিন এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের মাধ্যমে আপনার স্বপ্নের পথে হাঁটুন। আপনার যাত্রার নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই।
সাইদুর