ছবি: সংগৃহীত।
প্রতিটি বাবা-মায়ের লক্ষ্য থাকে তাদের সন্তানকে একটি সুস্থ, সুখী এবং আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। তবে কিছু ভুল ধারণা বা অজান্তেই করা কিছু আচরণ শিশুর মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমন কিছু আচরণ বা ভুল রয়েছে, যা পিতা-মাতার অজান্তেই তাদের সন্তানদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে।
শিশুর আত্মবিশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা তার ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করতে পারে। একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস যখন দুর্বল হয়ে যায়, তখন তা তার পড়াশোনা, সামাজিক সম্পর্ক এবং সাধারণ জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পিতা-মাতারা যদি তাদের সন্তানদের নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেন বা অসচেতনভাবে কিছু ভুল আচরণ করেন, তাহলে এর প্রভাব দীর্ঘকাল ধরে থেকে যেতে পারে।
এখানে আলোচনা করা হলো এমন ৭টি ভুল, যেগুলি পিতা-মাতার অজান্তেই তাদের সন্তানের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে ফেলতে পারে।
১. অতিরিক্ত সমালোচনা
অনেক বাবা-মা সন্তানের প্রতি খুব কঠোর হন, যদি সে কোনো কিছু ভুল করে। যদিও সন্তানদের ভালো ফলাফল চাওয়া স্বাভাবিক, তবে অতিরিক্ত সমালোচনা তাদের মনোবল কমিয়ে দেয়। সন্তানের ছোট ছোট ভুলের জন্য তাকে অতিরিক্ত শাস্তি বা তিরস্কার করা আত্মবিশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এর পরিবর্তে, ভুলের মাধ্যমে শেখার সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে সন্তান আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
২. প্রত্যাশার চাপ দেওয়া
বাবা-মা সন্তানের উপর তাদের অসম্ভব উচ্চ প্রত্যাশা চাপিয়ে দেন, যা সন্তানকে অবসাদগ্রস্ত এবং আত্মবিশ্বাসহীন করে তোলে। এমনকি ছোটখাটো বিষয়ে সন্তান যদি পারফেক্ট না হয়, তাও বাবা-মায়ের দ্বারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। প্রত্যাশা স্থির করে, সন্তানের উপর চাপ না দিয়েই তার সৃজনশীলতা এবং আত্মবিশ্বাস বিকশিত হতে পারে।
৩. তুলনা করা
বাবা-মায়ের মধ্যে একটি সাধারণ ভুল হচ্ছে সন্তানকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করা। "তোমার বন্ধু বা সহপাঠী কত ভালো করছে, তুমি কেন পারো না?" এই ধরনের মন্তব্য সন্তানদের মধ্যে একধরনের অনুভূতি সৃষ্টি করে, যেখানে তারা নিজেদের কম মনে করে। সন্তানের বিশেষত্ব এবং তার প্রতিভাকে মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ, যেন সে নিজের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করতে শিখে।
৪. অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান
যদিও পিতা-মাতার কাজ হলো সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তবে যদি সন্তানকে সব সময়ই অতিরিক্ত সুরক্ষা দেয়া হয়, তাহলে সে নিজের সক্ষমতার ওপর আস্থা হারাতে পারে। সন্তানকে একটু স্বাধীনতা দিতে হবে, যাতে সে তার সমস্যা নিজে সমাধান করতে শিখে এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
৫. অযাচিত পরামর্শ দেয়া
অনেক বাবা-মা সন্তানের প্রতিটি সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেন। তারা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা বা মতামত চাপিয়ে দেন, যা শিশুর স্বাধীন চিন্তা এবং আত্মবিশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সন্তানের চিন্তা-ভাবনা এবং অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তাকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে শেখানো উচিত।
৬. ভালোবাসার অভাব
সন্তানের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য তার কাছে ভালোবাসা এবং সহানুভূতির উপস্থিতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি একটি শিশুকে সবসময় অবহেলা করা হয় বা তার অনুভূতিকে গুরুত্ব না দেয়া হয়, তাহলে তার আত্মবিশ্বাস কমে যায়। পরিবারের উষ্ণতা এবং ভালোবাসা সন্তানের মানসিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৭. অবচেতনভাবে নেতিবাচক মন্তব্য করা
কখনো কখনো পিতা-মাতা নিজেদের অভ্যন্তরীণ উদ্বেগ বা চিন্তা সন্তানের প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য হিসেবে প্রকাশ করেন। "তুমি এটা পারবে না", "তোমার জন্য এটা সম্ভব নয়" – এমন মন্তব্য সন্তানের আত্মবিশ্বাসে গভীরভাবে আঘাত করে। এসব মন্তব্যের বদলে সন্তানকে উৎসাহিত করা এবং তার শক্তি ও দক্ষতার প্রতি আস্থা রাখা জরুরি।
পিতামাতার আচরণ সন্তানের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই, আত্মবিশ্বাসী এবং সফল সন্তান গড়ে তুলতে হলে পিতা-মাতাদের নিজেদের আচরণে সচেতন হতে হবে। শিশুকে ভালোবাসা, উৎসাহ, এবং বিশ্বাস দিয়ে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ানো সম্ভব।
নুসরাত