প্রশংসা ও উৎসাহ আমাদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যাদের শৈশবে এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে মেলেনি, তাদের জন্য প্রভাবগুলি অনেক সময় সূক্ষ্ম হলেও গভীর হয়। এ ধরনের অভিজ্ঞতা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে আমাদের আচরণ ও মানসিকতাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
বাচ্চাবেলায় ইতিবাচক প্রশংসার অভাব আপনার আত্মসম্মান, জীবনদৃষ্টি এবং সম্পর্ক পরিচালনার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
প্রশংসা বা উৎসাহের অভাবে শৈশবে যে প্রভাব পড়ে তা সূক্ষ্ম হলেও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
এই ৭টি লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝতে পারেন যে আপনি খুব কম ইতিবাচক প্রশংসার পরিবেশে বড় হয়েছেন। এদের চিনতে পারা আপনাকে নিজেকে বদলানোর পথে সহায়তা করতে পারে।
১) নিজেকে মূল্যবান মনে করতে কষ্ট হয়
ইতিবাচক স্বীকৃতির অভাবে নিজের মূল্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা স্বাভাবিক।
অনেক সময় আমরা ছোটখাটো সাফল্যের জন্যও বাইরে থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করি। এভাবে বারবার প্রশংসা খোঁজার চক্র ক্লান্তিকর এবং হতাশাজনক হয়ে ওঠে।
যদি আপনি নিজেকে বারবার মূল্যহীন মনে করেন, তাহলে এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে আপনি যথেষ্ট ইতিবাচক স্বীকৃতি ছাড়াই বড় হয়েছেন। অতীত বুঝতে পারলে বর্তমানকে বদলানো এবং ভবিষ্যৎকে উন্নত করা সম্ভব।
২) প্রশংসা নিতে অস্বস্তি বোধ করেন
লুকাস গ্রাহামের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, ইতিবাচক স্বীকৃতির অভাবের একটি অপ্রত্যাশিত প্রভাব হল প্রশংসা নিতে অস্বস্তি হওয়া।
তিনি জানান, যখন তার প্রথম বই প্রকাশিত হয় এবং মানুষ তাকে প্রশংসা করতে শুরু করে, তখন তিনি গর্বিত হওয়ার বদলে অস্বস্তি বোধ করতেন।
অনেকে প্রশংসার সাথে মানিয়ে নিতে পারে না কারণ তারা এটি পেতে অভ্যস্ত নয়।
যখন কেউ আপনাকে প্রশংসা করবে, সেটি গ্রহণ করার চেষ্টা করুন আপনি এটি প্রাপ্য।
৩) নিজেকে খুব বেশি সমালোচনা করেন
যারা ইতিবাচক স্বীকৃতি পায়নি, তারা প্রায়ই নিজেদের সবচেয়ে বড় সমালোচক হয়ে ওঠে।
গবেষণা বলছে, যারা শৈশবে ইতিবাচক স্বীকৃতি পেয়েছে, তারা বড় হয়ে ইতিবাচক আচরণে অভ্যস্ত হয়। অন্যদিকে, যাদের শৈশব প্রশংসাহীন কেটেছে, তারা নিজেদের ভুলকেই বেশি গুরুত্ব দেয়।
নিজেকে দয়া করা শিখুন এবং ছোটখাটো অর্জনগুলোও উদযাপন করুন।
৪) নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে কষ্ট হয়
ইতিবাচক স্বীকৃতির অভাবে মানুষ প্রায়ই নিজেদের অনুভূতি দমন করে। এ ধরনের পরিবেশে আবেগ মূল্যায়িত না হওয়ায় মানুষ ধীরে ধীরে আবেগ প্রকাশে অক্ষম হয়ে পড়ে। তবে এটি বদলানো সম্ভব। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ শেখা যায়।
৫) নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যান
লুকাস গ্রাহামের মতে, কর্মজীবনের শুরুতে তিনি অতিরিক্ত পরিশ্রম করতেন এবং নিজেকে প্রমাণ করতে সবসময় চেষ্টা করতেন। এই প্রবণতা শৈশবে পর্যাপ্ত ইতিবাচক স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণেও হতে পারে। আপনার মূল্য শুধুমাত্র আপনার অর্জনে নয়, আপনার ব্যক্তিত্বেও নিহিত।
৬) আপনার ‘না’ বলতে অসুবিধা হয়
যারা শৈশবে প্রশংসা পায়নি, তারা প্রায়ই ‘পিপল প্লিজার’ হয়ে ওঠে। তারা অন্যের প্রত্যাশা পূরণের জন্য নিজেদের চাহিদা উপেক্ষা করে। নিজের চাহিদাকেও গুরুত্ব দিন, আপনার সুখও গুরুত্বপূর্ণ।
৭) নিজেকে ভালোবাসা ও যত্ন নিতে সমস্যা হয়
সর্বশেষ এবং সবচেয়ে বড় লক্ষণটি হলো, নিজেকে ভালোবাসা এবং নিজের যত্ন নিতে অক্ষমতা। ইতিবাচক স্বীকৃতির অভাবে নিজের যত্ন নেওয়া ও ভালোবাসা কঠিন হয়ে পড়ে।নিজেকে ভালোবাসা এবং যত্ন নেওয়া কোনো বিলাসিতা নয়, বরং এটি অত্যাবশ্যক।ৎ
শৈশবের ইতিবাচক স্বীকৃতির অভাব আমাদের প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। তবে আত্মসচেতনতা আমাদের জীবনকে নতুন করে সাজানোর ক্ষমতা দেয়। আপনার অর্জনগুলো স্বীকার করুন, নিজের মূল্যকে আলিঙ্গন করুন। এটি একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে এটি অবশ্যই মূল্যবান।
নাহিদা